পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাসহ ২৮ জনের সম্পদ অনুসন্ধানে নেমে বিস্মিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিম। বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত-২-এর পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে সম্পদ তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করছে পাঁচ সদস্যের এই টিম। সংস্থার মহাপরিচালক (বিশেষ অনু-তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান জানান, ইতোপূর্বে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে ১৫৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকা ধরেই কাজ চলছে অনুসন্ধানের।
তবে সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ করা হয়েছে সাবেক তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ ২৮ জনের নাম। সাবেক তিন ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তাদের নামে-বেনামে ফ্ল্যাট, প্লট, বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল নগদ অর্থ থাকার প্রমাণ পাচ্ছে দুদকের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষ টিম।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই তাদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ)র কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। দু’য়েকটি চিঠির জবাব হিসেবে অনেক তথ্যও মিলেছে। এর মধ্যে সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বিপুল অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। হুন্ডিসহ নানা কৌশলে তিনি এসব অর্থ পাচার করেছেন। যা দেখে রীতিমতো বিস্মিত দুদক টিম।
বিদেশে নাজমুলের কত টাকা বিনিয়োগ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দূ বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ২৭তম কাউন্সিলে তিনি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১১-১৫ পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনে ‘বিনিয়োগকারী’ ভিসায় অবস্থান করছেন। সেখানেই পেতে বসেছেন একাধিক ব্যবসা।
ব্রিটেন সরকারের আইন অনুযায়ী, এই ভিসা পেতে ন্যূনতম ২ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটির বেশি) বিনিয়োগ করতে হয়। ইউরোপে নাজমুলের বিলাসবহুল জীবন ও আর্থিক উৎসের নানা কাহিনী নিয়ে খোদ সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেই রয়েছে নানা আলোচনা। প্রাপ্ত তথ্য মতে, লন্ডনে তিনি ফ্লেক্সফগ লিমিটেড, এলিট সিটি লিমিটেড, নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এসএনবি অটোস লিমিটেড, এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেড ও কার মিউজিয়াম লিমিটেড নামে ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইস্ট লন্ডনের ক্যানন স্ট্রিট রাডে ‘নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ’ নামক রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নাজমুল আলম। এটির মূলধন সাড়ে ৮ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ১০ জুলাই ব্রিটেন সরকারের কোম্পানি হাউজে ১১৪৫৮১৯৯ নম্বরে রেজিস্ট্রার্ড।
ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, লিজ অথবা নিজস্ব প্রপার্টি ভাড়া দেয়া এবং পরিচালনা, রিয়েল এস্টেট এজেন্সি এবং চুক্তির অথবা ফি-এর মাধ্যমে প্রপার্টি চালানো। টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিণ রোডের পাশে পান্ডারসন গার্ডেনে তার রয়েছে ‘ফ্লেক্সফগ লিমিটেড’ নামক একটি কোম্পানি। ২০১৪ সালের ৩০-শে জানুয়ারি কোম্পানি হাউজে ০৮৮৬৮৬৮১ নম্বরে এটি রেজিস্ট্রার্ড। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নন স্পেশালাইড হোলসেল ট্রেড, অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবা।
চলতিবছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সিদ্দিকী নাজমুল আলম এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পরিচালক হিসেবে যুক্ত। ‘এলিট সিটি লিমিটেড’ নামেও একটি কোম্পানি রয়েছে সিদ্দিকী নাজমুল আলমের। কেন্দ্রীয় লন্ডনের বসওয়েল স্ট্রিটে এটির অফিস। এ কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট ১১৫২১৪৭৩ নম্বরে রেজিস্ট্রার্ড। এটির মাধ্যমে অ্যামপ্লয়মেন্ট, প্লেসেমেন্ট এজেন্সি ও টেম্পোরারি অ্যামপ্লয়মেন্ট এজেন্সির কাজ করা হয়।
মোহাম্মদ রূহুল আমিন নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে সিদ্দিকী নাজমুল আলম শুরু থেকেই যুক্ত এ কোম্পানিটির সঙ্গে। ‘এসএনবি অটোস লিমিটেড’ নামক কোম্পানিটির অফিস বেথনাল গ্রীণের ২৫ পান্ডারসন গার্ডেনে। ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর (রেজিস্ট্রার্ড নং :১০১৩৭১৫১) এটি প্রতিষ্ঠিত। রেন্টিং অ্যান্ড লিজিং অব কারস্ এন্ড লাইট মোটর ভেহিক্যাল সরবরাহ করা হয় এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
এছাড়া এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেডে (১০৫১৭৩৫৮ কোম্পানি নম্বর) ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নাজমুল পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি কোম্পানি থেকে পদত্যাগও করেন। ‘কার মিউজিয়াম লিমিটেডে’ (রেজি: নং-১০২৫৪৪২২) ২০১৬ সালের ২৮-শে জুন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তিন পর তিনি পদত্যাগ করেন।
এমএলএআর পাঠাবে দুদক
দুদক সূত্রটি আরো জানায়, বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাজ্যে বসরাসের জন্য দায়িত্বে থাকাকালেই নানা কৌশলে অর্থ পাঠাতে থাকেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলেও যাতে কোনো সঙ্কট তাকে স্পর্শ করতে না পারেÑ সেই দূরদর্শী ভাবনা থেকেই তিনি দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেন। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে তিনি খুব কম অর্থই পাঠিয়েছেন জানা গেছে। আত্মীয়-স্বজন এবং হুন্ডির মাধ্যমে তিনি অর্থ পাঠিয়েছেন বেশি। তার মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক যুক্তরাজ্যে এমএলএআর (মানিলন্ডারিং অ্যাসিসস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট) পাঠাবে জানায় সূত্রটি।
এদিকে সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান এবং দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা আলোচনায় আসেন। এ প্রেক্ষাপটে গত ১৮ নভেম্বর সিদ্দিকী নাজমুল আলম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালালে অনেক এমপি-মন্ত্রীর যাবজ্জীবন হবে। টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও তদবিরের মতো কোনো রকম দুর্নীতিতে জড়িত নন দাবি করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন এমপি-মন্ত্রীদের ইঙ্গিত করেন ছাত্রলীগের এই সাবেক শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছেড়েছি প্রায় ৪ বছর। এতদিন যাবত দেশের বাইরেই থাকি। মাঝখানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সব মিলিয়ে তিন-চার মাস দেশে ছিলাম। দায়িত্বে থাকার সময় টেন্ডার, চাঁদা ও তদবির কমিটি বাণিজ্য কোনটিই করিনি। তারপরেও দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছেন অবৈধ সম্পদের খোঁজে। কোনো অন্যায় না করে এত বড় কষ্টের দায় কেন নিতে হচ্ছে জানি না। কষ্ট পাচ্ছি না। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।