বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মিথ্যার বেসাতি করা পাপ। আর কোনো নবীর শানে যদি কেউ মিথ্যাচার করে, সে পাপ হয় আরও মারাত্মক, আরও ভয়াবহ। দুনিয়াতেও তার নির্মম পরিণতির বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আগেকার যুগের এরূপ ঘটনাবলী এ যুগে শিক্ষা গ্রহণের কোনো আবেদন রাখে না অথবা এ যুগে প্রযোজ্য নয় বলে যারা মনে করে থাকেন, মুসলমান হলেও তারা কেবল বোকার স্বর্গেই বাস করেন না, প্রকারান্তরে তারা কোরআনকেই অস্বীকার করেন। কেননা, আল্লাহতাআলা কোরআনের কোনো কিছুই অর্থহীন নাজেল করেননি। সব কিছুতেই মানুষের জন্য কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং অফুরন্ত শিক্ষা ও চিন্তার খোরাক রয়েছে। কোরআনকে আদিকালের পুঁথি হিসেবে কোনো মোমেন মুসলমান গণ্য করতে পারেন না। যদি তাই হত, তাহলে কোরআন ও হাদীসে অজস্র আম্বিয়া কাহিনী এবং উপমা দৃষ্টান্ত থাকত না।
এ পর্যায়ে উদাহরণস্বরূপ হজরত মূসা (আ.) এর যুগের বিভিন্ন কাহিনী উল্লেখ করা যেতে পারে। হজরত মূসা (আ.) এর যুগের কারুন-ফেরাউনসহ অনেক কাহিনীর উল্লেখ রয়েছে। এখানে অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত নানা কাহিনীর মধ্যে মিথ্যাচারের নির্মম পরিণতির একটি ভয়াবহ কাহিনী হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) এর অনন্য গ্রন্থ ‘এহেয়াউলউলুম’-এর বরাতে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। ঘটনাটি নিম্নরূপ:
এক ব্যক্তি হজরত মূসা (আ.) এর খেদমত করত এবং সর্বদা তাঁর খেদমতে লিপ্ত থাকত। কিছুদিন পর সে ব্যক্তি লোকদের সামনে এই উক্তি করতে লাগল, ‘হাদ্দাসানি মূসা ছফিউল্লাহ’- আমার নিকট মূসা ছফিউল্লাহ বর্ণনা করেছেন। হাদ্দাসানি মূসা নাজিউল্লাহ- আমার নিকট মূসা নাজিউল্লাহ বর্ণনা করেছেন। ‘হাদ্দাসানি মূসা কালিমুল্লাহ’- আমার নিকট মূসা কালিমুল্লাহ বর্ণনা করেছেন।’
লোকটি বিভিন্ন সূত্রে, হজরত মূসা (আ.) এর বরাতে লোকদের নিকট অহরহ এ মিথ্যাচার চালিয়ে যেতো। তার এরূপ বর্ণনা করার উদ্দেশ্য ছিল তার প্রতি লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাতে, লোকেরা তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং উপহার-নজরানা দেয়। তাই এ কৌশল অবলম্বন করে সে প্রচুর অর্থ সম্পদ সংগ্রহ করে এবং সম্পদশালী হয়ে উঠে। কিন্তু হঠাৎ এক সময় সে উধাও হয়ে যায় এবং হজরত মূসা (আ.) এর খেদমতে আর আসে না। তখন হজরত মূসা (আ.) বহু অনুসন্ধান-তালাশ করেও তার খোঁজ-খবর পান না। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়।
কিছুদিন পর এক ব্যক্তি হজরত মূসা (আ:)এর খেদমতে উপস্থিত হয়, তার হাতে শিখল বাঁধা একটি শূকর ছিল। লোকটি হজরত মূসা (আ.) এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করে, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কি অমুক ব্যক্তিকে চেনেন?’ জবাবে তিনি বলেন: ‘হ্যাঁ চিনি, তবে বহুদিন থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তার সন্ধান মিলেনি।’
হজরত মূসা (আ.) এর এ জবাব শুনে আগত লোকটি বলল, ‘আমার হাতে কালো রশিতে বাঁধা এই শূকরটি সেই ব্যক্তি, আপনি যার তালাশ করছেন।’ এ কথা শুনে হজরত মূসা (আ.) আল্লাহ দরবারে এই বলে দোয়া করলেন: ‘হে আল্লাহ! তাকে তার প্রথম অবস্থায় ফিরিয়ে দাও, যাতে আমি জিজ্ঞাসা করতে পারি এ লোকটি কি কারণে শূকরে পরিণত হল?’
আল্লাহতাআলা ওহীর মাধ্যমে হজরত মূসা (আ.) কে খবর দিলেন যে, ‘তোমার এ দোয়া আমি কবুল করব না, তবে এতটুকু জানিয়ে দিতে চাই যে, আমি তাকে শূকরে পরিণত করে দিয়েছি এ কারণে যে, সে দ্বীনের মাধ্যমে দুনিয়ায় কামাতো।’ (হাকতুল হায়াত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।