মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের জিডিপি তলানিতে হলেও ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে শ্রীলঙ্কাকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীলঙ্কাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে সন্ত্রাসবাদ দমনের খাতে। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে আলোচনার পর একথা জানান মোদি। বিভিন্ন বিষয়ে এদিন কথা হয় দু’জনের। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার তামিল স¤প্রদায়ের দাবি প‚রণ, নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বাণিজ্য চুক্তি, মৎস্যজীবীদের ঠিকানা সংক্রান্ত নানা বিষয় ছিল। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে মোদি বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসকে নিশ্চিত করেছেন, তার দেশকে এগিয়ে যেতে প‚র্ণ সহায়তা করবে ভারত। মোদি ঘোষণা করেন ৪০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করা হবে শ্রীলঙ্কাকে। এর সঙ্গে আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে সন্ত্রাস দমনের জন্য। গত এপ্রিলে কলম্বোয় একের পর এক বোমার আঘাতে ২৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান। মোদি বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি কীভাবে যৌথভাবে সন্ত্রাসের দমন করা যায়। শ্রীলঙ্কার পুলিশ কর্মকর্তারা মুখ্য ভারতীয় সংস্থায় সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াইয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’ এদিকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার কথোপকথন ফলপ্রস‚ হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিন দিনের সফরে ভারতে যান রাজাপাকসে। এটাই তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর। ১০ দিন আগেই শ্রীলঙ্কার প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। অপর দিকে, ভারতের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি। গত ৬ বছরের ইতিহাসে তলানিতে এসে ঠেকেছে জিডিপি। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে টানা ছয় প্রান্তিক ধরে নিম্নমুখী রয়েছে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি। এতে আগামী দিনগুলোয় বিশ্বের দ্রæতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভারতের আর্থিক খাতে সংকট আরও জোরালো হতে পারে। মন্দার মুখে পড়তে পারে দেশটি। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ভারত সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে আর্থিক খাত বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ভারতের মিনিস্ট্রি অব স্ট্যাটিস্টিক অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেনটেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এরপর থেকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত কমতে শুরু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা ৭ শতাংশে নেমে আসে। একই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। ক্রমাগত পতনের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর সর্বশেষ প্রান্তিকে দেশটিতে সবচেয়ে কম জিডিপি প্রবৃদ্ধি (৪.৫ শতাংশ) রেকর্ড হয়েছে। স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ সময় ভারতের প্রবৃদ্ধির গড় হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। তাকে ব্যঙ্গ করে ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ আখ্যা দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ রাজ কৃষ্ণ। সেই আখ্যা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। মোদি সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই জুলাই মাসে সংসদে আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পাল্টা বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস আমলে অর্থনীতি কেন দ্বিগুণ হয়নি? তখন কেন হিন্দু রেট অব গ্রোথ চাপানো হয়েছিল!’ এবার মোদি জমানাতেই প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসায় প্রশ্ন উঠছে, ‘হিন্দু রেট’ কি আবার ফিরে আসছে? ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অর্থনীতির শিক্ষক জয়তী ঘোষের মন্তব্য, ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথে তো তা-ও ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ছিল। এখন কি প্রবৃদ্ধি আদৌ হচ্ছে? নাকি অর্থনীতির সংকোচন হচ্ছে? বেকারত্বের হার, সংসারের খরচ কমে যাওয়া, গাড়ি থেকে নিত্য প্রয়োজনের জিনিসপত্রের বিক্রি হ্রাস, একের পর এক বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার মতো অর্থনীতির অন্যান্য মাপকাঠি কিন্তু সে কথাই বলছে।’ জয়তী মনে করিয়ে দিয়েছেন, মোদি জমানায় জিডিপি মাপার পদ্ধতি বদলে দেওয়া হয়। সেই পদ্ধতি নিয়েই বিতর্ক আছে। বস্তুত মোদি সরকারের সাবেক প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামনিয়াম বলেছিলেন, নতুন পদ্ধতিতে জিডিপি মাপায় তা ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ অঙ্ক বেশি দেখাচ্ছে। তার কথা অনুসারে প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত কমে আসার পেছনে উৎপাদন ও চাহিদা খাতের মন্দা ভাব, পর্যাপ্ত বিদেশী বিনিয়োগের অভাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকর নীতিকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, চাহিদা ক্রমেই কমে যাওয়ার বিষয়টি নরেন্দ্র মোদি সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। অথচ অর্থনৈতিক শ্লথতার পেছনে এটা অন্যতম একটি কারণ। মানুষের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন খাত চাঙ্গা হয়ে উঠবে। গতি ফিরবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। নতুবা ভারতীয় অর্থনীতি বড় ধরনের মন্দার মুখে পড়তে পারে। পিটিআই, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, স্ক্রলডটইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।