পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বায়ুদূষণ আর মশার যন্ত্রণায় দিশেহারা রাজধানীবাসী। ঘরে মশার উপদ্রব আর বাইরে গেলে ধুলা- ধোঁয়ায় দমবন্ধ অবস্থা। নগরীর কোথাও সামান্যতম স্বস্তি নেই। এমন দুর্বিষহ অবস্থায় দিশেহারা রাজধানীবাসী। ধুলায় অন্ধকার রাজধানীর রাজপথ। ধুলা আর ধোঁয়ায় বায়ুদূষণে বিপজ্জনক সীমা ছুঁয়ে ফেলেছে রাজধানী ঢাকা। দিল্লিকেও ছাড়িয়ে ঢাকা এখন বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। বিশ্বের বায়ুর গুণমান যাচাইকারী সবচেয়ে বড়ো ডাটাবেইস এয়ার ভিজুয়ালের প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুমান এখন ২৪২। যার অর্থ, ঢাকায় বাতাসের মান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। বলা যায়, রাজধানী ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য এক নগরীতে পরিণত হয়েছে।
মশার উপদ্রব ও নগরীর বায়ুদূষণ রোধে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেই। সিটি কর্পোরেশনের এই নীরবতা ভাঙতে এবার উচ্চ আদালত তাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিটি বায়ুদূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরো কী কী উপায়ে বায়ুদূষণ রোধ করা যায়, সে ব্যাপারেও সুপারিশের আদেশ দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রাজধানীতে এডিস মশার পর এবার বেড়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। এডিস মশার পাশাপাশি এখন কিউলেক্স মশাও ভয়াবহ রোগ ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিউলেক্স মশা থেকে জাপানিজ এনসেফালাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এর আগে মশার উপদ্রব বাড়লেও সিটি কর্পোরেশন ছিল নীরব। মশা নিধনে তাদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার জন্য রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ এক সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শীতের প্রারম্ভে আবার রাজধানীতে মশার উপদ্রব যখন বাড়ছে সিটি কর্পোরেশন এবারও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। এতে আবারও কিউলেক্স মশার কামড়ে জাপানিজ এনসেফালাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন রাজধানীবাসী। তাদের মনে প্রশ্ন- মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকার বাজেট কোথায় যায়?
অন্যদিকে রাজধানীর সর্বত্রই এখন ধুলাবালিতে একাকার। দিনের বেলায়ও কুয়াশার মতো ধুলার চাদরে রাধানীর সববিছুই ঢেকে যাচ্ছে। ধুলার যন্ত্রণায় এখন ঢাকা শহরের রাস্তায় নামাই যাচ্ছে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দু-একটি সড়ক ছাড়া রাজধানীর ছোট-বড় সব রাস্তাই এখন ধুলাবালিতে একাকার। ঘরবাড়ি, স্কুল, মাদরাসা, অফিস আদালত ঢেকে যাচ্ছে ধুলার চাদরে। দু-একদিন ধোয়ামোছা না করলে ধুলার আস্তরে ঢেকে যাচ্ছে সব কিছু। এ বছর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে ধুলার পরিমাণ। এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে শ্বাসকষ্ট, য²া, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুলার দূষণ। এ কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী। ধুলার দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসরত শিশু ও বয়স্ক নাগরিকেরা।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. শামীমা আক্তার বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ধুলা, বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমা, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ), এলপিডি (লিম্ফোপ্রোলিফারেটিভ ডিজিজ) ইত্যাদি রোগও দেখা দিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বড় উদ্বেগের নাম এখন পরিবেশ দূষণ। দূষণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে উন্নত বিশ্ব নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একদম তলানিতে। গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল ঢাকা। ওই সময় ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ২৪২ পিএম।
দেশের অন্যান্য বেশকিছু সূচকে অগ্রগতি সত্তে¡ও পরিবেশ দূষণ পরিস্থিতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই। পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা দেশজ উৎপাদনের জিডিপির ২ দশমিক ৭ ভাগ। দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশ দূষণ রোধে যুগোপযোগী নীতি ও আইন প্রণয়ন করা জরুরি বলেও মনে করেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশবিদরা বলছেন, স্বল্প ইপিআই স্কোরের অর্থ হলো এই দেশগুলোকে পরিবেশের মান উন্নয়নে বিভিন্ন দিকে বিশেষ করে বাতাসের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাসে আরো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৈশ্বিক বায়ুমন্ডলীয় রসায়নের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সরকারের যেসব সংস্থার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কথা সেসব সংস্থার সামর্থ্য ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে সরকারের তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। রাজধানীর বায়ুদূষণ, নদী রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর প্রকল্পভিত্তিক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের কোনো সুফল আমরা দেখিনি। আর প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সুরক্ষার ওই কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এসব কাজ টেকসই হয়নি।
দীর্ঘদিন জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা দরকার। পরিবেশ রক্ষায় যেসব আইন আছে তা অনেক দুর্বল। কিন্তু দুর্বল আইনও বাস্তবায়ন করা হয় না। ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের চারদিকে অসংখ্য ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, রাজধানীসহ দেশের সামগ্রিক বায়ুদূষণের ৫৬ শতাংশের উৎস ইটভাটা। ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে সরকার ২০১৮ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করেছে। নতুন ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সব ইটভাটাকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার কথা।
রাজধানীতে এডিস মশার পর এবার বেড়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। এডিস মশার পাশাপাশি এখন কিউলেক্স মশাও ভয়াবহ রোগ ছড়াচ্ছে। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মশক নিধন তৎপরতা প্রায় ৮০ ভাগ গুটিয়ে নিয়েছে তারা। স্বল্পসংখ্যক মশক নিধন কর্মী দিয়ে নগরবাসীর মন ভোলানো কিছু কার্যক্রম সচল রেখেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) হাজারীবাগের কোম্পানীঘাট মসজিদ মার্কেট এলাকার মুদি দোকানদার রুবেল আহমেদ বলেন, এ এলাকায় মশা নিধনে ২-৩ মাসের মধ্যে কোনো ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। সারাদিনই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকি আমরা, তবে সন্ধ্যা নামলে রীতিমতো মশার মিছিল শুরু হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালাতে ডিএনসিসির ২৭০ জনবল রয়েছে। নতুন করে ৫৪ ওয়ার্ডে ১০ জন করে জনবল নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম চলমান। আধুনিক মানের নতুন ২৩৮টি ফগার মেশিন, ২০টি মিক্সড বøয়ারসহ বেশকিছু সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এছাড়া একজন কীটতত্ত¡বিদকে প্রধান করে ১০ জন শিক্ষানবিশ কীটতত্ত¡বিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিমের সমন্বয়ে ডিএনসিসি নিজ এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
সেখান থেকে তারা জানতে পেরেছেন, ৫৪ ওয়ার্ডের ৫৪০টি স্থানে কিউলেক্স মশা প্রজননের ৬২০টি হটস্পট রয়েছে। ডিএনসিসি সূত্রের দাবি, এসব হটস্পটসহ ডিএনসিসি এলাকার সার্বিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি ডিএনসিসি মেয়র মশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। বিশেষ এ কর্মসূচি চলবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। চলতি অর্থবছরে ডিএনসিসির মশক নিধন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, রুটিন মশক নিয়ন্ত্রণে ৪০০ জনবল রয়েছে। নতুন করে কিছু জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। সে জনবল এলে কাজের গতি বাড়বে। কিছুদিনের মধ্যে আবারও বিশেষ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে ডিএসসিসি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ডিএসসিসির মশক নিধন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরের তুলনায় দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বাড়ানো হলেও মশক নিধনে কার্যক্রম দৃশ্যমান না হওয়ায় দুই সিটির মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে নগরবাসীর। তারা দ্রুত, কার্যকর ও জোরালো ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, কিউলেক্স মশক নিয়ন্ত্রণে মশার লার্ভা ও উড়ন্ত মশক নিধনে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে, সেসব ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ বলেন, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডিএসসিসি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে একদফা বিশেষ মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। শিগগিরই নতুন করে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।