বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
চতুর্থ খলীফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রাযি.। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিজ বংশজাত। কিশোরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতি প্রিয়ভাজন।
ছোট মেয়ে ফাতেমা রাযি. এর স্বামী। হযরত হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমার পিতা। বিশেষ জ্ঞানী, দার্শনিক ও বাগ্মী সাহাবী। তাক্ওয়া, তাহারাত ও আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষিতার (দরবেশি) জীবন্ত নমুনা। বিভিন্ন মুজেযার প্রকাশস্থল। খায়বারের যুদ্ধে রাতের বেলা চোখে প্রদাহ দেখা দেয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আজকে এমন ব্যক্তির হাতে তরবারি তুলে দেব যার হাতে ইহুদি মিত্রশক্তির দুর্জেয় ঘাটি খায়বার দুর্গের পতন হবে। সাহাবীরা কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায়। কাকে দেয়া হবে তরবারি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি অনেকটাই অসুস্থ। হুযুর নিজ পবিত্র মুখের লালা মোবারক হযরত আলীর চোখে লাগিয়ে দিলেন। সাথে সাথে প্রদাহ দূর হয়ে ফোলা চোখ স্বাভাবিক ও লাল রং সাদা হয়ে গেল।
হযরত আলী রাযি. কে সেনাপতি নির্বাাচন করা হলো। তিনি আল্লাহর নামে যুদ্ধ করতে লাগলেন। একপর্যায়ে হাতের ঢালটি ছুটে পড়ে গেছে। হযরত আলী যুদ্ধের চরম সময়ে ঢাল ছাড়া কীভাবে লড়াইয়ে টিকে থাকবেন। খায়বার দুর্গের একটি কপাট হাতলসহ উপড়ে তিনি তা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে লাগলেন। দৃশ্য দেখেই শত্রুরা হতভম্ব। একপর্যায়ে মুসলমানরা বিজয়ী হলেন। শত্রুরা পালিয়ে দূরে সরে গেল। হযরত আলী তখন ঢালটি ছুড়ে ফেলে দিলেন। এ ছিল বিশ্ন্ববীর জীবন্ত মুজেযা। হযরত আলী রাযি. এর বীরত্বের নিদর্শন এবং তার কারামত।
ঐতিহাসিকরা লিখেন, বর্ণনাকারীদের ভাষ্যমতো দেখা যায় পরে চল্লিশ জন শক্তিশালী যুবক মিলেও এ দুর্গের দুয়ারটি জায়গা থেকে নাড়ানো কঠিন মনে হয়েছিল। অথচ হযরত আলী রাযি. তার বাম হাতে এ দুয়ারটিকে ঢাল বানিয়ে কী অবলীলায়ই না দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করে গেছেন।
একবার দুর্ধর্ষ এক শত্রুকে দীর্ঘ সময় লড়াই করে করে শেষ পর্যন্ত হযরত আলী রাযি. তার বুকের ওপর তরবারি হাতে বসেছেন তাকে হত্যা করবেন বলে। এসময়ই শত্রু সৈনটি হযরত আলীর চেহারায় থুথু ছিটিয়ে দিল। একমুহূর্ত চিন্তা করেই হযরত আলী রাযি. তাকে ছেড়ে দিলেন। সৈনটি তো মহা আশ্চর্য। বাকি সব যোদ্ধারাও বিস্মিত। মুসলমানের এত বড় শত্রুকে বহু কষ্টে বাগে এনে শেষ পর্যন্ত তার বুকে চড়ে বসে তরবারি চালানোর মুহূর্তে হযরত আলীর কী হয়ে গেল। তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন।
সবার প্রশ্নের জবাবে দরবেশ ও মহাপরাক্রান্ত বীর আলী রাযি. বললেন, আমি শত্রুর সাথে লড়াই করি আল্লাহকে খুশি করার জন্য। প্রাণ দেই অথবা নেই শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে। যতক্ষণ লড়াই করছিলাম, শত্রুকে ধরাশায়ী করে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলাম সবই আল্লাহর জন্য। কিন্তু যখন সে আমার মুখে থুথু দেয় তখন আমি তার দিকে ব্যক্তিগত কারণে রাগান্বিত হয়ে যাই। তখন একমুহূর্তে মনকে যাচাই করলাম। এ লোকটিকে আমি কি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হত্যা করছি, না নিজের মনের ঝাল মেটাবার জন্য। দেখলাম, বিষয়টিতে আমি সংশয়িত। নিয়ত ঠিক আছে বটে তবে তিল পরিমাণ হলেও ব্যক্তিগত ব্যাপার এখানে মিশ্রিত হওয়ার আশঙ্কা অন্তরে এসে গিয়েছিল। তাই তাকে ছেড়ে দিলাম।
শুধু আল্লাহর জন্য কাজ করা, যাকে আমরা ইখলাস বলি, বাংলায় বলি নিষ্ঠা। তাকওয়া পরহেজগারির, সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের এত বড় কঠিন পরীক্ষা ও চলন্ত নমুনা আমরা কেবল হযরত আলী রাযি. এর মতো মহান সাহাবীর কাছ থেকেই পেতে পারি। দুনিয়ার মানুষ সততা ও নিষ্ঠার এসব সবক আর কোথায় পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।