নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
হারের মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতার। সেটা সেরে নিতেও বেশি সময় লাগল না। মাত্র ৪৭ মিনিট। অথচ দিনের শুরুতেও স্বপ¦ ছিল লিডের। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম যে ছিলেন উইকেটে। কিন্তু উমেশ যাদবের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটি স্লোয়ার বলে আগে ব্যাট চালিয়ে দিলেন তিনি। যা হবার তাই হলো। কভারে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা। ব্যক্তিগত ৭৪ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর ইনিংস ব্যবধানে হারটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। ১০ বলের ব্যবধানে আল আমিন যখন উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন, তখনই উল্লাস ভারতীয় শিবিরে। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন আল আমিন ও আবু জায়েদ রাহী। মাথাটা নিচু হয়ে গেল ড্রেসিংরুমে উপস্থিত সবারও। আরেকটি লজ্জার হার।
ইন্দোরের পর কোলকাতাতেও হতাশ করল বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের দলকে ইনিংস ও ৪৬ রানে হারিয়ে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয় যাত্রা ধরে রাখল বিরাট কোহলির দল।
ইডেনে চাপে থেকেই গতকাল মাঠে নামে বাংলাদেশ। দিবা-রাত্রির লড়াইয়ে ইনিংস হার বাঁচাতে দিনের শুরুতেই দরকার ছিল ৮৯ রান। হাতে মাত্র ৪ উইকেট। তবে ওই যে ভরসার নাম ছিল মুশফিক। যিনি ছিলেন উইকেটে। যার ব্যাটে এর আগেও ভারতের বিপক্ষে শতক দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার হলো না! ব্যাটিং বীরত্বে গোলাপি বলের টেস্টটাকে তৃতীয় দিনে নিয়ে গেলেও তার শতক না পাওয়ার হতাশা বেড়ে গেল বহুগুণে দলের হারের বিউগলে। দিনের খেলা শুরু হতেই বিদায় নেন এবাদত। অবশ্য এটাই তো স্বাভাবিক, স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে তিনি আর কী করবেন। উমেশ যাদবের ডেলিভারিতে সিøপে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। শূন্য রানে আউট এবাদত!
এরপর শেষ হয় মুশফিকের সংগ্রাম। ৫৯ রান নিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ১৫ রান যোগ করেই সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। অন্যপ্রান্তে উইকেট পড়ছে এ কারণে দ্রুত রান তুলতে গিয়েই কাটা পড়েন এ ডানহাতি। ৯৬ বলে তার লড়াকু ইনিংসটি ১৩টি চারে সাজানো। তার বিদায়ে বাংলাদেশ তখন ৮ উইকেটে ১৮৪ রান। এরপর আবু জায়েদও চটজলদি পিছু নেন তার। তাকে ফেরান মোহাম্মদ শামি। আগের দিন চোট নিয়ে ফেরা মাহমুদউল্লাহ মাঠেই নামতে পারলেন না। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে আটকে গেল ১৯৫ রানে। আর লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের আরেকটি ব্যর্থতার কাব্য! ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে দল হেরে ছিল ইনিংস ও ১৩০ রানে। কলকাতায় ইতিহাসের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে সোয়া দুই দিনে সব শেষ। এবার মুমিনুল হকের দল হারল ইনিংস ও ৪৬ রানে। এরআগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১০৬ রানে।
গতকাল ছুটির দিনে কলকাতার দর্শকরা হতাশই হলেন। ঘড়ির হিসাব বলছে মাত্র ৪৭ মিনিটেই সর্বনাশ! অবশ্য মুশফিক ছাড়া অন্য কেউ কিছু একটা করবেন সেই প্রত্যাশাটাও ছিল না। সকালে যখন জানা গেল, মাহমুদউল্লাহ হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সামলে নামতে পারবেন না, তখন দ্রুত হারের প্রহর গোনা ছাড়া আর কিছুই বাকি ছিল না।
অথচ লড়াইয়ের দারুণ এক মঞ্চ পেয়েছিল বাংলাদেশ। গোলাপি বল টেস্টকে ঘিরে সৌরভ গাঙ্গুলি ইডেনে এনে দিয়ে ছিলেন ভিন্নমাত্রা। কিংবদন্তিদের পদচারণায় শুরু হয় মাঠের লড়াই। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের নজর ছিল উপমহাদেশের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে। কিন্তু একেবারেই সাদামাটা এক বাংলাদেশের দেখা মিলল। উইকেট ভালো, প্রতিপক্ষের বোলাররাও দুর্দান্ত, তারপরও এভাবে এত অল্প পুঁজিতে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলটা বড্ড চোখে লাগল। ভারতের মাঠে প্রথম দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসে দুঃস্বপ্ন সঙ্গী করেই ফিরে যাচ্ছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে টেস্ট খেলার পরও কিভাবে টেস্ট খেলতে হয় তাই শিখতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলের কথা শুনেই সেটিই মনে হতে পারে। ম্যাচ শেষে নিজেদের এ ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বললেন তিনি, ‘দুই দলের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। এ দুই ম্যাচ থেকে আমাদের শিখতে হবে এবং ভুলগুলো শুধরাতে হবে। গোলাপি বলের নতুন বল খেলা চ্যালেঞ্জিং এবং সেই চ্যালেঞ্জটি আমরা নিতে পারি নি।’
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ ভারত, ২য় টেস্ট ৩য় দিন
টস : বাংলাদেশ, কোলকাতা
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩০.৩ ওভারে ১০৬
ভারত ১ম ইনিংস : ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস (আগের দিন ৩২.৩ ওভারে ১৫২; মুশফিক ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৯ রিটায়ার্ড হার্ট, মিরাজ ১৫, তাইজুল ১১ ; ইশান্ত ৪/৩৯, যাদব ২/৪০)
রান বল ৪ ৬
মুশফিক ক জাদেজা ব যাদব ৭৪ ৯৬ ১৩ ০
এবাদত ক কোহলি ব যাদব ০ ৪ ০ ০
আল আমিন ক ঋদ্ধিমান ব যাদব ২১ ২০ ৫ ০
রাহী অপরাজিত ২ ২ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লেবা ৯, ও ৫) ২২
মোট (অলআউট, ৪১.১ ওভারে) ১৯৫
উইকেট পতন : ১-০ (সাদমান), ২-২ (মুমিনুল), ৩-৯ (মিঠুন), ৪-১৩ (ইমরুল), ৪-৮২* (মাহমুদউল্লাহ, রিটায়ার্ড হার্ট), ৫-১৩৩ (মিরাজ), ৬-১৫২ (তাইজুল), ৭-১৫২ (এবাদত), ৮-১৮৪ (মুশফিক), ৯-১৯৫ (আল-আমিন)।
বোলিং : ইশান্ত ১৩-২-৫৬-৪, যাদব ১৪.১-১-৫৩-৫, শামি ৮-০-৪২-০, অশ্বিন ৫-০-১৯-০, জাদেজা ১-০-৮-০।
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ৪৬ রানে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
সিরিজ : ২ ম্যাচে ভাত ২-০ তে জয়ী।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।