নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০০২ সাল। বাংলাদেশ তখন টেস্ট ক্রিকেটে একদম নতুন দল। কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে পচেফস্ট্রুমে ইনিংস ও ১৬০ রানে হেরেছিল তৎকালীন খালেদ মাসুদ পাইলটের দল। পাঠক হয়তো বিরক্ত হতে পারেন, ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে ২০০২ সালের কথা কেন? হতাশাগ্রস্ত হয়েই বলতে হয়, রূঢ় যোগসূত্র গাঁথা একই বিন্দুতে। ক্রিকেটের সেই নবীন দল ও আজকের পরিপক্ক দলের কাকতালীয় মিলের কারণেই এই প্রসঙ্গের অবতারণা।
সেদিন ক্রিকেটের নবাগত দলটি মাত্র ৩০.৩ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল। রান করেছিল ১০৭। ঠিক ১৭ বছর পর ভারতের মাটিতে কোলকাতায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩০.৩ ওভারেই সব উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সংগ্রহ আরও এক রান কম। অর্থাৎ ১০৬ রান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ১৫তম ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দল আজ বহু দূরে। পাড়ি দিয়েছে ১৭টি বছর। তাতে যোগ হয়েছে আরও ১০২ টেস্টের অভিজ্ঞতা। এখন ১১৭তম টেস্ট খেলতে নামা একটি দলের কাছ থেকে প্রত্যাশা কি? এই ১০৬! আর ৩০.৩ ওভার ব্যাটিং!
গতকাল কোলকাতার ইডেন গার্ডেনে দিবা-রাত্রির টেস্টে গোলপি বলে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারত। ঐতিহাসিক দিনটির শুরুতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জী ইডেনের ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করেন ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতার। তারপর টসযুদ্ধে নতুন স্বারক মুদ্রায় মুমিনুল হকের মুখে দেখা যায় এক চিলতে হাসি। ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে টস জয়ের হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশ শিবিরে। সময় যতই গড়িয়েছে এই হাসি বদলেছে বিষাদে।
বাংলাদেশ দলে উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাট করতে নামেন সাদমান ইসলাম ও অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস। ব্যাটিংয়ে শুরুতে সাদমান দৃঢ়তার পরিচয় দিলেও যথারীতি ব্যর্থতার খোলসেই বন্দী আরেক বাঁহাতি ওপেনার ইমরুল। ব্যক্তিগত ৪ রানেই তিনি ইশান্ত শর্মার বলে লেগ বিফোরের শিকার হন। সেখান থেকেই পতনের শুরু। এরপর একে একে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল, মোহাম্মদ মিঠুন ও ব্যাটিং নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের কীর্তি বর্ণনা করতে একটু এগিয়ে যেতে হয়। ব্যাটিংয়ে নামার আগে জাতীয় সঙ্গীতের জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়েছিলেন তারা। কিন্তু ক্রিজে এসে সেই সময়টুকুও কাটাতে পারলেন না। কেউ দুই বল, কেউ চার বল খেললেও প্রত্যেকেই নিজের নামের পাশে বসিয়েছেন ‘শূন্য’।
এই তিন উইকেট হারানোর পরও সাদমান ছিলেন অটুট। মাটি কামড়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন তরুন এই ওপেনার। কিন্তু উমেশ যাদবের অফস্ট্যাম্পের হালকা বাইরের একটি বল খেলবো কি খেলবো না করতে গিয়ে পেতে দেন ব্যাট। তাতেই ঘটে সর্বনাশ। ব্যক্তিগত ২৯ রানে ভাঙে এই ওপেনারের প্রতিরোধ। আরেকটি উইকেটের পতন। বাংলাদেশের অর্ধেক ব্যাটসম্যানই সাঝঘরে। স্কোর তখন মাত্র ৩৮। তখন উঁকি দিচ্ছিল একশর নিচে অলআউটের দুঃস্বহ স্মৃতি। পরের ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর (৬) দ্রুত বিদায়ে সেই শঙ্কা আরো পোক্ত হয়।
কিন্তু ¯্রােতের প্রতিকূলে প্রবল আত্মবিশ্বাস দেখা যায় লিটন দাসের ব্যাটে। প্রথম বলেই চার দিয়ে খোলেন রানের খাতা। ওয়ানডে মেজাজে ২৭ বলে ২৪ রান করার পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। মোহাম্মদ শামির বাউন্সারটি সরাসরি আঘাত করে তার হেলমেটে। এই কনকাশনে (মাথায় আঘাতজনিত অবসাদ) আর ব্যাট করতে পারেননি তিনি। অপর প্রান্তে নাঈম হাসানও খেলেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। এরপর ইবাদত হোসেন (১) ও বদলি খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ (৮) কিছুক্ষন সঙ্গ দেন তাকে। এই দুই ব্যাটসম্যান বিদায় নেয়ার পর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন আল আমিন হোসেন। তার উপর ভরসা রাখতে পারেন নি নাঈম। রান বাড়ানোর চাপে তাকেও খুইয়ে আসতে হয় উইকেট। ইশান্তের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি করেন ১৯ রান। বাংলাদেশ ইনিংসে দুই অঙ্কে প্রবেশ করা তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে নাঈম একজন। আল আমিন ১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ভারতীয় তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামি ভাগ করে নেন ১০ উইকেট। ইশান্ত ৫টি, উমেশ ৩টি ও শামি নেন ২টি উইকেট। এই ত্রয়ীর পারফরমেন্সে ভারতও গড়ে ফেলেছে একটি রেকর্ড। এরআগে ২০০৫ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে ৪৪.২ ওভারে অলাাউট করেছিল তারা। গতকাল মুমিনুলদের ৩০.৩ ওভারেই গুটিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বোলাররা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গতকালের সংগ্রহই ১৩তম সর্বনি¤œ রান। ভারতীয়দের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনি¤œ। ওভারের বিবেচনায় মাত্র এক সেশন ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের ১৮.৪ ওভারেও অলআউট হওয়ার ঘটনা খুব পুরোনো নয়। ক্যালেন্ডারের একটি পাতা ওল্টালেই দেখা যাবে ২০১৮ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে এই লজ্জার ইতিহাস গড়েছিল মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা।
বিবর্ণ ব্যাটিংয়ের পর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাফল্য আসে আল আমিনের হাত ধরে। গত ম্যাচের ডাবল হান্ড্রেড করা মায়াঙ্ক আগাওয়ালকে ১৪ রানেই ক্যাচ আউটে পরিনত করেন এই পেসার। এরপর ইবাদত ফিরিয়ে দেন ভয়ঙ্কর রোহিত শর্মাকে (২১)। অধিনায়ক কোহলি ও পূজারার ব্যাটে লিড নেয় স্বাগতিকরা। গড়ে ৯৪ রানের জুটি। তারপর আবারো ইবাদতের আঘাত। সাদমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৫৫ রান করা পূজারা। তারপর রাহানে-কোহলির ব্যাটে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে ভারত। ৭ উইকেট হাতে রেখে ৬৮ রানে এগিয়ে থেকে দিন শেষ করে সফরকারি দলকে বড় ব্যবধানে হারানোর ভিত মজবুত করে রাখল কোহলির দল। কোহলি ৫৯ ও রাহানে ২৩ রানে অপরাজিত আছেন। আজ এখান থেকেই নতুন করে শুরু করবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত পয়েন্ট অর্জণকারি দলটি। সেই সঙ্গে ইনিংস ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারানোর প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রাখল তারা।
এবার একটু লেখার শুরুটা মনে করিয়ে দিচ্ছি। পচেফস্ট্রুমে সেবার মাত্র আড়াই দিনেই ম্যাচটি হেরেছিল নবীন বাংলাদেশ। এবার পরিণত বাংলাদেশ কি পারবে সে লজ্জা থেকে বাঁচতে?
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ ভারত, ২য় টেস্ট ১ম দিন
টস : বাংলাদেশ, কলকাতা
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
সাদমান ক ঋদ্ধিমান ব যাদব ২৯ ৫২ ৫ ০
ইমরুল এলবি ব ইশান্ত ৪ ১৫ ০ ০
মুমিনুল ক রোহিত ব যাদব ০ ৭ ০ ০
মিঠুন বোল্ড যাদব ০ ২ ০ ০
মুশফিক বোল্ড শামি ০ ৪ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ক ঋদ্ধিমান ব ইশান্ত ৬ ২১ ১ ০
লিটন রিটায়ার্ড আউট ২৪ ২৭ ৫ ০
নাঈম বোল্ড ইশান্ত ১৯ ২৮ ৪ ০
এবাদত বোল্ড ইশান্ত ১ ৭ ০ ০
মিরাজ ক পুজারা ব ইশান্ত ৮ ১৩ ২ ০
আল আমিন অপরাজিত ১ ৪ ০ ০
রাহী ক পুজারা ব শামি ০ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লেবা ৬) ১৪
মোট (অলআউট, ৩০.৩ ওভারে) ১০৬
উইকেট পতন : ১-১৫ (ইমরুল), ২-১৭ (মুমিনুল), ৩-১৭, (মিঠুন), ৪-২৬ (মুশফিক), ৫-৩৮ (সাদমান), ৬-৬০ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-৭৩* (লিটন, রিটায়ার্ড আউট) ৭-৮২ (এবাদত), ৮-৯৮ (মিরাজ), ৯-১০৫ (নাঈম)।
বোলিং : ইশান্ত ১২-৪-২২-৫, যাদব ৭-২-২৯-৩, শামি ১০.৩-২-৩৬-২, জাদেজা ১-০-৫-০।
ভারত ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
আগারওয়াল ক মিরাজ ব আল আমিন ১৪ ২১ ৩ ০
রোহিত এলবি ব এবাদত ২১ ৩৫ ২ ১
পুজারা ক সাদমান ব এবাদত ৫৫ ১০৫ ৮ ০
কোহলি ব্যাটিং ৫৯ ৯৩ ৮ ০
রাহানে ব্যাটিং ২৩ ২২ ৩ ০
অতিরিক্ত (লেবা ১, ও ১) ২
মোট (৩ উইকেট, ৪৬ ওভারে) ১৭৪
উইকেট পতন : ১-২৬ (আগাওয়াল), ২-৪৩ (রোহিত), ৩-১৩৭ (পুজারা)।
বোলিং : আল আমিন ১৪-৩-৪৯-১, রাহী ১২-৩-৪০-০, এবাদত ১২-১-৬১-২। *প্রথম দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।