Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিসেম্বরের শুরুতেই ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব বিল

তোড়জোড় শুরু করল সরকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ আসতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। সূত্রের খবর, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা ভারতের সংসদে আনতে চায় সরকারপক্ষ। তার আগে সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি সংসদে পেশের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

নাগরিকত্ব বিল যে সংসদে আনা হবে, সে কথা বুধবারই রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে বিজেপি শিবিরে। তবে গতবারের মতো এবার বিলটি প্রথমে লোকসভায় না এনে রাজ্যসভায় আনার সম্ভাবনাই প্রবল বলে সূত্রের খবর। নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম দফায় বিলটি লোকসভায় আনা হয়েছিল এবং সেখানে তা পাশও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ষোড়শ লোকসভা ভেঙে যাওয়ায় বিলটি বাতিল হয়ে যায়। গতবারের মতোই ব্যাপক গরিষ্ঠতার সুবাদে লোকসভায় এবারেও বিলটি পাস করাতে সরকারপক্ষকে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। এমনকী, রাজ্যসভাতেও বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে সরকারপক্ষ। তাই সেখানেও বিল পাস করাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাজ্যসভায় সংখ্যাতত্তে¡র হিসাবে বিরোধীদের থেকে এগিয়ে শাসক শিবির। তাই ঠিক যেভাবে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যের তকমা পাল্টে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার জন্য বিল নিয়ে এসে দু’দিনের মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষেই পাস করানো হয়েছিল, সেই একই কায়দায় নাগরিকত্ব বিল পাস করানোর পরিকল্পনা সরকারপক্ষের রয়েছে বলেই সূত্রের খবর। নাগরিকত্ব বিল পাস করানোর পরেই কেন্দ্র সারা দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার কাজ শুরু করতে চায়, এমন ইঙ্গিত শাহ আগেই দিয়েছিলেন। বুধবার রাজ্যসভায় এনআরসি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শাহ বারবারই নাগরিকত্ব বিলের কথা বিশদ বলেছেন। শাহ’র বক্তব্য থেকে নাগরিকত্ব বিলকে দেশজুড়ে এনআরসি লাগু করার প্রথম ধাপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহলও।

এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও এখন থেকে কোমর বাঁধছে। এনআরসি নিয়ে সংসদ থেকে সর্বত্র তীব্র বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটলেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তাদের কী অবস্থান, তা নিয়ে তৃণমূল শিবির এখনই মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আগামিদিনে তৃণমূলের অবস্থান কী হতে চলেছে, চিঠিটি সেই বার্তা বহন করছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। বুধবার রাজ্যসভায় এনআরসি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ে শাহর বক্তব্য তুলে ধরে তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। এমনকী, চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। চিঠিতে যা বলা হয়েছে তার সারমর্ম এই যে, রাজ্যসভার অন্দরে মৌখিক প্রশ্ন ৩৭ নম্বরের উত্তর দেওয়ার সময় শাহ বলেছিলেন, গতবার লোকসভায় বিলটি পাস হয়েছিল। যৌথ সংসদীয় কমিটি বিল মঞ্জুর করেছিল। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মতিক্রমে তা আনা হয়েছিল। শাহ’র বলা সব দলের সর্বসম্মতির বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে তৃণমূল।

গতবার নাগরিকত্ব বিলটির সংসদীয় যৌথ কমিটির সদস্য ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়ান ও লোকসভার সাংসদ সৌগত রায়। তারা যে সেই সময় বিলটি নিয়ে তাঁদের আপত্তি নথিভুক্ত করেছিলেন, সেকথা জানিয়েই নায়ডুর কাছে নালিশ ঠুকেছে তৃণমূল। নিজেদের বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে তৃণমূল তৎকালীন যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্টটিকে উল্লেখ করে নায়ডুকে সেটির দিকে নজর দেওয়ারও অনুরোধ করেছে। প্রকাশ্যে না জানালেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভাকে বিপথে পরিচালনা করেছেন, এই অভিযোগই তাঁরা তুলে ধরতে চাইছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল সাংসদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “কোনও সাংসদ ভুল তথ্য দিয়ে সংসদকে বিপথে পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনার নিয়ম রয়েছে। আমরা অবশ্য এখনই সেই ধরনের কোনও দাবি তুলছি না। সমস্ত বিষয়টি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে জানিয়েছি এবং তিনি যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তার জন্য অনুরোধ করেছি।” সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ