পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে তদারকির অভাবে
বাড়ছে গ্যাসজনিত বিস্ফোরণ
সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার তদারকির অভাবে চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ করে সেখানে জোড়াতালি দিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। কোন কোন ভবনে অবৈধ সংযোগও রয়েছে। বিশেষ করে জরাজীর্ণ পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় অনেক ভবন বিপদজনক হয়ে উঠছে। ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন তৈরি হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর।
অভিযোগে রয়েছে, এ ব্যাপারে সংস্থাটি বরাবরই উদাসীন। নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হলেই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পাওয়ার কথা। দেখা যাচ্ছে, কোন নকশা ছাড়াই নির্মিত ভবনে সব ধরনের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ভবনের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও গ্যাস পাইল লাইন ও রাইজার পরীক্ষা কিংবা তদারক করছে না কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নগরীর পাথরঘাটায় গ্যাসজনিত বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যেসব ভবন নকশা বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সেসব ভবনের বাসিন্দারা আছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে বাসা বদল করা শুরু করেছেন।
গত রোববার সকালে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডে বড়–য়া ভবনে বিস্ফোরণে নিচতলার একাংশ ধসে পড়ে। এতে পথচারীসহ সাতজন নিহত এবং ১৫জন আহত হন। এ দুর্ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে চারটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্তে গ্যাসজনিত কারণে বিস্ফোরণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিস্ফোরণ গ্যাসের লাইন থেকে না কি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ভবনটি ইমারত বিধিমালা না মেনে নির্মাণ করা হয়েছিল। গ্যাসের লাইন স্থাপনও করা হয়েছে নকশা বহির্ভূতভাবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় কক্ষ বানাতে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কও ঘরের ভেতরে চলে গেছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা বাড়িটি পরিদর্শন করে নিশ্চিত হন সেটি ছিল রীতিমত গ্যাস চেম্বার। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড লাগানোর পাশাপাশি সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশের আরও একটি ভবনকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। এ ধরনের ভবন পাথরঘাটার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি মহানগরীর অনেক এলাকায় রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেন, ইমারত বিধি লঙ্ঘন করে নকশা বহির্ভূত ভবন তৈরি করলে সেটি নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। বিশেষ করে এ ধরনের ভবনে গ্যাস লাইন এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। নকশা মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে নগরীর অনেক ভবনই নকশা বহির্ভূত। ফলে এসব ভবনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
গত তিন বছরে নগরীতে গ্যাসজনিত পাঁচটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কারও যেন মাথা ব্যথা নেই। নগরীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় ছয় লাখ আবাসিক সংযোগ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ লাইন রয়েছে দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার। মূল সরবরাহ লাইন থেকে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। কেজিডিসিএলের হিসাবে সরবরাহ লাইনে রাইজার আছে প্রায় দেড় লাখ। লোকবল সঙ্কটের অজুহাতে সরবরাহ লাইন এবং রাইজার নিয়মিত পরীক্ষা করে না সরকারি সংস্থাটি। ফলে কোথাও কোন ঝুঁকি আছে কি না তাও আগে থেকে বোঝার কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে এ ব্যাপারে জনসচেতনতারও অভাব রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মূল সরবরাহ লাইনে কোন সমস্যা আছে কি না সেটি নিয়মিত তদারক করা হয়। তবে মূল লাইন থেকে আবাসিক কিংবা কারখানায় যে সরবরাহ লাইন দেয়া হয়েছে সেটি দেখার দায়িত্ব গ্রাহকের। কোথাও কোন সমস্যা হলে তা আমাদের জানাতে হবে। তখন কেজিডিসিএলের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নির্ধারিত ঠিকাদাররা সে লাইন সংস্কার করবেন।
চুক্তিতে এমন নিয়ম থাকার পরও গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়াতে কেজিডিসিএল প্রচারণা চালান বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে রাইজারগুলো নিয়মিত তদারক করা হয়। নগরীতে দেড় লাখ রাইজারের মধ্যে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার রাইজার পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইতোমধ্যে চার হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মিটার দেয়ার সময় এসব গ্রাহকের সরবরাহ লাইনও পরীক্ষা করা হয়েছে। পাথরঘাটার দুর্ঘটনার পর তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন খায়েজ আহমেদ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সিডিএর অনুমোদিত নকশা না মেনে যেসব ভবন করা হয়েছে সেসব ভবন নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। পাথরঘাটায় বিধ্বস্ত ভবনটি ছিল নকশা বহির্ভূত। ভবন নির্মাণের সময় নকশা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা সেটি এখন থেকে কঠোরভাবে তদারক করা হবে। এ বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে আজই (মঙ্গলবার) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী। খুব শিগগির ঢাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ভবনে ত্রুটি চিহ্নিত করার তাগিদ উপমন্ত্রীর
নগরীতে গড়ে ওঠা ভবনগুলোর পরিকল্পনাগত ত্রুটি আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সেবা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগরীর পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে বড়ুয়া ভবন পরিদর্শনে এসে গতকাল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দালানকোঠা বাড়ছে, সেগুলোতে কোন ত্রুটি ছিল কি না সেটা দেখতে হবে। কারণ নির্মাণ পরিকল্পনায় যদি গলদ থাকে তাহলে সকলের জন্যই বসবাস করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাব তারা যেন পরিদর্শন কাজ দ্রুত শুরু করেন। এ ধরনের দুর্ঘটনা আর যাতে না ঘটে। তবে ভবন মালিকরা যেন হেনস্থার শিকার না হন বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে।
ঘটনাস্থলে তদন্ত কমিটি
গতকাল দ্বিতীয় দিনের মত বিস্ফোরণ স্থল বড়–য়া ভবন পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের গঠিত সমন্বিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরীফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। আহতদের সাথেও কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও তদন্তে গ্যাস লাইন এবং সেপটিক ট্যাঙ্কের গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা দুটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষে বিস্ফোরণের মূল কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। পাঁচ সদস্যের এ কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, কেজিডিসিএল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।