নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেস্ট ক্রিকেট হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘অখাদ্যে’। টি-টোয়েন্টি থেকে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটকে আর তাদের লক্ষ্য হিসেবে দেখেন না। সেকারণে ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে ক্রিকেটের মর্যাদাপূর্ন ফরম্যাট-টেস্ট ক্রিকেট। বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিকেটের পূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় একমাত্র টেস্টেই। কিন্তু সেই স্বাদ গ্রহনে অনীহা দেশের ক্রিকেটারদের। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তুলনায় ঢের পিছিয়ে বড় দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেট। তারই প্রতিফলন ঘটছে ফলাফলে। ২০১৯ এ খেলা চার টেস্টের একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। হতাশাটা আরও বেড়ে যায় যখন দেখা হয় চার হারের তিনটিই ইনিংস ব্যবধানে। আছে তিনদিনে হারের লজ্জাও!
ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে হার। এরআগেও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে শুধুই হতাশা। শেষ দুই বছরে বাংলাদেশ মোট টেস্ট ম্যাচ খেলেছে মাত্র ১২টি। এর মধ্যে জয় এসেছে মাত্র তিনটি ম্যাচে, একটি ম্যাচে ড্র আর হেরেছে বাকি আট ম্যাচে। দীর্ঘ সময়ের এই ক্রিকেটে বোলারদের সামর্থ্য কিছুটা পাওয়া গেলেও, সুবিধাজনক অবস্থায় নেই দেশীয় ব্যাটসম্যানরা।
বলা হয়ে থাকে টেস্ট ক্রিকেটেই প্রমাণ্ হয় একটি দেশের ক্রিকেট কতটা মজবুত। আর সে দেশের ব্যাটসম্যানরা ঠিক কতটা উন্নতি করেছে। তবে বাংলাদেশের চলতি ভারত সিরিজে খেলা আট ব্যাটসম্যানের শেষ দুই বছরের টেস্ট ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলে মনে হতেই পারে এই দল আসলেই টেস্ট খেলার যোগ্যতা রাখে কিনা। প্রশ্নের আঙুল মোটা দাগে উঠছে টাইগারদের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের দিকেই।
চলতি সিরিজে খেলা ৮ ব্যাটসম্যানের মধ্যে গত দুই বছরে সব থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন বর্তমান অধিনায়ক মুমিনুল হক এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষ দুই বছরে টাইগারদের ১২টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে সব ম্যাচেই ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষের স্কোয়াডে খেলা টাইগারদের আট ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।
শেষ দুই বছরে এই আট ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে অর্ধশতক এসেছে মাত্র ৯টি। আর শতকের পরিমাণ মাত্র আটটি। এই আট শতকের মধ্যে ৪টিই আবার করেছেন মুমিনুল হক। তিনটি মাহমুদউল্লাহর। আর মুশফিকুর রহিম করেছেন সর্বোচ্চ ২১৯ রান। বাকি পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেউই একটিও শতকের দেখা পাননি। যাদের মধ্যে আবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দলের আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা ইমরুল কায়েসের। এই দু’বছরে একটি শতক কিংবা অর্ধশতকের দেখাও পাননি এই ওপেনার।
এই আট ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গড়ের দিকে চোখ পড়লে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অন্য দলগুলো সঙ্গে মেলানোও দুষ্কর হয়ে উঠবে। শেষ দুই বছরে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় মাহমুদউল্লাহর। এই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের গড় ৩৭.৭৮, তারপরই আছেন মুশফিকুর রহিম ৩৩.৭৫ গড় নিয়ে। আর তৃতীয়স্থানে আছেন মুমিনুল হক, তার ব্যাটিং গড় ৩১.৪৬। দুই ব্যাটসম্যানের আছে ২০ এর নিচে গড়। মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং গড় ১৭.৯১ আর এই আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড় ইমরুল কায়েসের। তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১২.৬!
ইন্দোরে প্রথম টেস্টে মাত্র তিনদিনে জঘন্যভাবে হারের দায় ব্যাটসম্যানদের কাঁধেই বর্তায়। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যেই পিচে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, সেই পিচে টিকেই থাকতে পারেনি মুমিনুলরা। ভারতীয় পেসারদের গতি ও সুইংয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল লাল-সবুজের দলেরা। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক অবশ্য ভারতীয় পেস আক্রমণ থেকে শেখার অনেক কিছু দেখছেন, ‘ভারতীয় আক্রমণ থেকে বাংলাদেশের পেসাররা সবকিছু শিখতে পারে। নতুন ও পুরোনো বলকে তারা যেভাবে ব্যবহার করে, যেভাবে রিভার্স সুইং করায়, অনেক কিছুই শিখতে পারে।’
টেস্ট ক্রিকেটে ২০ বছর পাড়ি দেয়ার পরও নতুন থেকে যাচ্ছে একটি শব্দ- ‘শিখছি’। সেই শেখার আর কোন শেষ হচ্ছে না, শিখে প্রয়োগও করতে দেখা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশ দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জোড় দিয়েছেন কাঠামো পরিবর্তনের, ‘কোনো সন্দেহ নেই দলের কাঠামোগত বদল আনতে হবে। না হলে ফল একই হতে থাকবে। নির্বাচকদের সঙ্গে বসে সামনে এগোনোর পথ খুঁজে বের করতে হবে।’ কোচের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দলপতি মুমিনুলও। সেই সঙ্গে বেশি বেশি টেস্ট খেলা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশের ১১তম অধিনায়ক, ‘গত সাত মাসে আমরা দুটি টেস্ট খেলেছি। অন্য দলগুলোর মতো আমরা টেস্ট খেলি না। এটাই মূল পার্থক্য।’ সেই পার্থক্য আরো মোটা দাগে দেখিয়ে নিজেদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করেছেন বোর্ড প্রেডিসডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। তবে এ থেকে উত্তরণে কাজও শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের এই অভিভাবক, ‘ভারত শীর্ষ দল (টেস্টে), আমাদের অবস্থান তলানীতে। তাদের কাছে হার স্বাভাবিক। তবে আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি (পাইপলাইন সমৃদ্ধি)। যাতে করে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই এর সুফল পেতে পারবো বলে আশা করি।’
টেস্টে নবীন দল আফগানিস্তানও চট্টগ্রামে এসে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। সেখান থেকে কি শিখেছিল বাংলাদেশ? আফগানিস্তান কেন, এমন অবস্থা বিদ্যমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অন্য কোন নবীন দলের বিরুদ্ধেও হারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেদিনও হয়তো আমরা বলবো- শিখছি। এই শেখার শেষ কবে?
গত দুই বছরে টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং (অর্ডার অনুসারে)
ব্যাটসম্যান ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ ফিফটি সেঞ্চুরি শূন্য গড়
ইমুরুল কায়েস ৬ ১২ ২০৪ ৪৪ ০ ০ ১ ১২.৬
সাদমান ইসলাম ৫ ৯ ২৪৬ ৭৬ ১ ০ ১ ২৭.৩৩
মুমিনুল হক ১২ ২৩ ৮২৯ ১৬১ ১ ৪ ৩ ৩১.৪৬
মুশফিকুর রহিম ১০ ১৯ ৬২০ ২১৯ ২ ১ ২ ৩৩.৭৫
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১২ ২৩ ৭৬৩ ১৪৬ ২ ৩ ২ ৩৭.৭৮
মোহাম্মদ মিঠুন ৬ ১১ ২১২ ৬৭ ১ ০ ২ ২০.১৮
লিটন দাস ১১ ২১ ৪৬৬ ৯৪ ১ ০ ০ ২১.৮২
মেহেদী মিরাজ ১১ ২০ ৩৩৪ ৬৮ ১ ০ ১ ১৭.৯১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।