ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ভালো মানুষ হতে বই পড়ার বিকল্প নেই। যে বই পড়ে তার মাঝে সংবেধনশীলতা জন্ম নেয়। আর একজন সংবেদনশীল মানুষ কখনও অসৎ হতে পারে না। সে কখনও অন্যায় করতে পারেন না। সংবেদনশীল মানুষ সব সময় মানুষকে ভালবাসবে। তিনি সৃষ্টির সকল জীবকে ভালোবাসবেন।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিব বর্ষ পালন ও সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, তোমরা যারা এ প্রজন্মের প্রতিনিধি, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসারণ করবে, তাহলে দেখবে তোমরা কোন অন্যায় করতে পারবে না এবং সত্যিকারের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সত্যিকারের সুনাগরিক হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। জিপিএ-৫ পেলেই তাকে মেধাবী বলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে, তারাও কম মেধাবী ছিলো না। এখানে মেধাকে মেধা বলা যাবে না। এই মেধা দিয়ে দেশের কোন মঙ্গল হতে পারে না। জিপিএ-৫ বা জিপিএ-৪ দিয়ে মেধার মূল্যয়ন করার সুযোগ নেই। মেধার পাশাপাশি মানবিক মূলবোধ নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী ও দার্শনিক আঁদ্রে মায়েরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিভিন্ন কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে এসে বঙ্গুবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রশ্ন করেন আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটা? বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি মানুষকে ভালোবাসি।’ তিনি আবারও প্রশ্ন করেন, আপনার মন্দ দিক কোনটি? তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি মানুষকে বেশি ভালোবাসি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছেন মানুষকে ভালোবাসো। মানুষকে ভালোবাসাই হলো বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি শোষকের পক্ষ নয়, শোষিতের পক্ষে।

তিনি আরও বলেন, যে বাড়িতে পর্যাপ্ত বই নেই সেই বাড়িটিও একটি অন্ধকার বাড়ি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদর আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আমেদ রবি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) আবদুল মান্নান ইলিয়াস, যুগ্ম সচিব (সংসদ ও আইন) শওকত আলী, যুগ্ম সচিব ফয়েজুর রহমান ফারুকী, রেজিস্টার অফ কপিরাইটস (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক নেসার উদ্দিন আইয়ুব প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রাসেল প্রমুখ।

এর আগে এ উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে।

জেলা প্রশাসন আয়োজিত এই মেলা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এবারের বই মেলায় বাংলা একাডেমী, চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ও ৩২টি খ্যাতনামা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানসহ ৪২টি প্রতিষ্ঠানের ৭০টি স্টল স্থান পেয়েছে।