Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন শুরুর আশায় বাংলাদেশ

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

আকাশটা যেন ভেঙে পড়লো মাথায়। এক কথায় অবিশ্বাস্য। টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার! তাও টাইগারদের সবচেয়ে পছন্দের ভেন্যু চট্টগ্রামে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অসহায় আত্মসমর্পণ করিয়ে ছেড়েছে রশিদ খানের দল। অধিনায়ক তো বটেই, রহমত শাহ, ইব্রাহিম জাদরান, আসগর আফগান বীরত্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে দিয়েছে আফগানদের। টেস্টের আদি দল অস্ট্রেলিয়ার পর এই নবাগতরাই প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতে পেয়েছে জয়ের দেখা। সেই টেস্টে ২২৪ রানে হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি ঠিকমতো।

অন্যদিকে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইনিংস ও ২০২ রানের ব্যবধানে হারিয়ে উড়ছে ভারত। বিরাট কোহলির ভারত যে রেকর্ড অর্জন করেছে, তা অন্য কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের নেই। রাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ঘরের মাঠে টানা ১১টি সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা। রোহিত শর্মার দ্বিশতকে ভর করে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার টানা ১০ সিরিজ জয়ের রেকর্ড ছিনিয়ে নেয় কোহলির দল।

বাংলাদেশ ও ভারতের সবশেষ টেস্টের ফলাফলই বলে দিচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপট। শক্তির মানদন্ডে বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে প্রতিবেশী দেশটি। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে যেখানে ভারত শীর্ষে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নয়ে। টানা ম্যাচ জেতায় ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই মাঠে নামবে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে টাইগার শিবিরে থাকবে হতাশা কাটানোর মিশন। ভারতের ইন্দোরে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্টের প্রথমটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। আনুষ্ঠানিকভাবে হলকার স্টেডিয়ামের এই ম্যাচ দিয়েই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের।

ম্যাচের আগে পরিবর্তনের হাওয়ায় দুলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও টেস্টের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নিষেদ্ধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মুমিনুল হককে বাংলাদেশ টেস্ট দলের ১১তম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়। তার নেতৃত্বেই ভারত মিশনে পা রাখছে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। তবে মুমমিনুলকে দেখাল বেশ আশাবাদী। কোন ধরনের হতাশার ছাপ তার চোখেমুখে নেই। নেই কোন ক্লান্তি, নেই কোন চাপ। অধিনায়কত্বকে তিনি বরং দেখেন একটি সুযোগ হিসেবে। তার বজ্রকন্ঠে শোনা গেল সাহসের প্রতিচ্ছবি। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে আক্রমণাত্বক মানসিকতা ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর এই নতুন দলনেতা।

তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে ভিন্ন কিছুর। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এ যাবত অনেক ম্যাচে কাছাকাছি গিয়েও হারার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেখানে হারের পেছনে ছিল অনেক কারণ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হয়তো, প্রতিপক্ষের নাম শুনেই হেরে যাওয়ার মানসিকতা। এই ধারায় বদল চান নতুন টেস্ট অধিনায়ক। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৯টি টেস্ট খেলে জয়হীন বাংলাদেশ। সাত ম্যাচে হারের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন দুটি ড্র। আসলে তাও এসেছে বৃষ্টির কল্যাণেই। তাই এখান থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে টাইগারদের।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ ম্যাচ খেলে সব ম্যাচে জয় নিয়ে ভারত আছে সবার উপরে। কোহলির দলের পয়েন্ট ২৪০। যেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ৬০। একই পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা আছে তিনে। বাংলাদেশ এখনো এই আসরে কোন ম্যাচ খেলেনি। এছাড়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানও তাদের অভিষেক করতে পারেনি।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের অনভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে খেললেও টেস্টে পূর্ণশক্তি নিয়েই মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। ভারতের বিশাল ব্যাটিং লাইনআপে আটকানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মুমিনুলদের। যেখানে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কে রাহানে, ঋদিমান সাহা ও শুভমন গিলের মুখোমুখি হতে হবে তাইজুল-মিরাজ-মুস্তাফিজদের। পক্ষান্তরে মুমিনুল-কায়েসদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে অশ্বিন-জাদেজা জুটি।

ভারতের বিপক্ষে লড়াইটা করতে গেলে তাই মূল দায়িত্বটা পড়বে ব্যাটসম্যানদের কাঁধেই। সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের তুরুপের তাস মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। এই দুই সিনিয়রের কাছে দলের প্রত্যাশাটা থাকবে অনেক বেশি। এছাড়া দীর্ঘদিন পরে সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েসের সামনে জায়গা পাকাপোক্ত করার হাতছানি থাকবে। লিটন দাস, মেহাম্মদ মিঠুন, সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলামের কাছেও এবারের চাহিদাটা থাকবে যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। নামকরা অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে ভালো পারফরম্যান্সে করতে পারলে টিকে থাকাটা সম্ভব হবে। শুধু বাংলাদেশই নয়, কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বোলিং আক্রমন দিয়ে কোন প্রভাব খাটাতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। তাই দায়িত্বের দিক দিয়ে বোলারদের তুলনায় ব্যাটসম্যানরা ঢেড় এগিয়ে।

স্পিন বোলিংয়ে অশ্বিন-জাদেজাকে মোকাবেলার ছক কষে দীর্ঘ অনুশীলন করেছে মুমিনুলরা। তবে মাথায় রাখতে হবে উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ শামিতেও। এছাড়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন চায়নাম্যান স্পিনার কুলদীপ যাদবও। পাঁচদিনের ক্রিকেটে প্রতিটি সেশন হিসেব করে খেললে হয়তো ভারতীয় বোলিং বিষ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

ম্যাচের আগে অনুশীলনে ডমিঙ্গোর ক্লাসের ছাত্রদের দেখা গেছে বেশ মনযোগী। আজ থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষায় সমর্থকদের চাওয়া অন্তত দলের পাশমার্ক নিশ্চিত হওয়া। সাদা খাতা জমা দিয়ে চলে আসুক ডমিঙ্গোর ছাত্ররা- এটা হবে অপ্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ