বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শহর থেকে গ্রামে নারী শিক্ষকদের অভিবাসন ও সেখানে আবাসন সহায়তার জন্য প্রমোট কর্মসূচীর আওতায় উপজেলা সদরে নির্মাণ করা হয় মহিলা শিক্ষক হোস্টেল। কিন্তু নির্দেশিকা অমান্য করে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রমোট হোস্টেলের কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়েছে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তাদের। অভিযোগ আছে আবেদন করার পরও অনেক নারী শিক্ষককে হোস্টেলের কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয় নি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মহিলা শিক্ষক হোস্টেল বরাদ্ধে নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অনিয়মের প্রমোটের কক্ষ বরাদ্ধ দিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সরকারি মহিলা কর্মকর্তাদের ওই প্রমোট মহিলা শিক্ষক হোস্টেলে থাকার বিধান না থাকলেও তাদের নামে বরাদ্ধ দিয়েছে প্রমোট ব্যবস্থাপনা কমিটি। ফলে বিভিন্ন স্কুল কলেজের মহিলা শিক্ষকরা আবেদন করেও আসন পাচ্ছে না। আবার প্রমোটটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করে ওই মহিলা হোস্টেলের মেরামতের নামে টাকা নয় ছয় করার অভিযোগও রয়েছে।
সাটুরিয়ার মহিলা শিক্ষক হোস্টেল প্রমোট এর বিষয়ে জানতে প্রমোট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গত ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে ক ফরমে আবেদন করলে, তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর তথ্য দেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, ইউরোপিয় ইউনিয়নের সহায়তায় সারা দেশে প্রমোট কর্মসূচীর আওতায় দুই শতাধিক উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে মহিলা শিক্ষক হোস্টেল। মুলত গ্রামীন পরিবেশে আবাসন সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিক্ষকতা পেশায় নারীদের নিয়োজিত হওয়ার পথ সুগম করার জন্যই প্রমোট কর্মসুচী নেয়া হয়। দুই তলা বিশিষ্ট হোস্টেলের প্রতি তলায় রয়েছে তিনটি করে কক্ষ। প্রতিটি কক্ষের সাথে সংযুক্ত গোসল খানা। প্রতি তলায় রয়েছে বসার ঘরের সাথে সংযুক্ত খাবার ঘর এবং ১টি করে রান্নাঘর। অর্থাৎ ২ তলা মিলে রয়েছে মোট ৬টি কক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কক্ষে ২জন করে আলাদা বিছানায় অবস্থান করতে পারে। এ হিসাবে প্রতিটি হোস্টেলে মোট ১২ জনের আবাসন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ২০০ এবং অন্যান্য সুবিধাদির খরচ ১০০সহ মোট ৩০০ টাকা।
মহিলা শিক্ষক হোস্টেলের নীতিমালার নিয়ম না মেনে অনিয়মের মাধ্যমে হোস্টেলের কক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। আবার কক্ষের সিট প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৬০০ টাকা করে।
প্রমোটের নির্দেশিকা অনুযায়ী মাধ্যমিক, প্রাথমিক, মাহাবিদ্যালয় এবং কিন্ডার গার্টেনের নারী শিক্ষকরা এই হোস্টেলের ভাড়া নিতে পারেন। কক্ষ ভাড়া পেতে হলে হোস্টেল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অথবা সদস্য সচিবের কাছে আবেদন করতে হবে। হোস্টেল গুলিতে মহিলা শিক্ষকদের আবসনে উৎসাহিত করার জন্য হোস্টেল ব্যবস্থা কমিটিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে নির্দেশিকায়।
সাটুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষক অভিযোগ করেছে আবেদন করলেও তাদের হোস্টেল কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে তারা হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এদের একজন জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে তিনি নতুন চাকুরীতে যোগ দেন। অন্য জেলায় বাড়ি হওয়ায় তিনি হোস্টেলের একটি কক্ষের জন্য আবেদন করে। কিন্তু সিট খালি নেই বলে তাকে বরাদ্দ দেয়া হয় নি। আরেকজন জানায়, কিছুদিন আগে তিনি সাটুরিয়ায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। হোস্টেলের একটি কক্ষ বরাদ্দের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে বলে দেয়া হয় সিট নেই।
কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, বর্তমানে ওই হোস্টেলে কোন নারী শিক্ষক ভাড়া থাকে না। তবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মোট ৭জন নারী কর্মকর্তা ভাড়া থাকছে। প্রতিসিট বাবাদ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৬০০ টাকা।
যে সব সরকারি কর্মকর্তার নামে কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুরসালিন বেগম, উপজেলা মৎস্য কর্তকর্তা ফাতেমা তোজ জোহরা, শাখা ব্যবস্থাপক রত্না আক্তার, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা খালেদা আক্তার, মহিলা বিষয়ক প্রশিক্ষক তানজিলা রহমান, তথ্য সেবা কর্মকর্তা সামছুন নাহার ও ডি এফ এ মুক্তারাণী সরকার। এ সব সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি কোয়াটার খালি থাকার পরও কেন শিক্ষক হোস্টেলে থাকেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রমোটে থাকায় বাসা ভাড়া বাবদ বছরে সরকারের কয়েক লাখ টাকা আয় কম হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষক কৃঞ্চপদ মন্ডল বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সরকারি কোয়াটারে থাকে তাহলে তাদের মূল বেতন থেকে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ টাকা বাসা ভাড়া হিসেবে কাটা হয়। আর যারা সরকারি কর্মকর্তা মহিলা হোস্টেলে থাকেন সে ভাড়া নিধারণ করেন ইউএনও ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে মহিলা হোস্টেলে যারা থাকেন তাদের বেতন থেকে আমরা কোন ভাড়া কর্তন করি না।
সাটুরিয়ার মহিলা শিক্ষক হোস্টেল প্রমোট কমিটির (সদস্য সচিব) মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন জানায়, ২০০৬ সালে সাটুরিয়া উপজেলা মহিলা শিক্ষক হোস্টেল অরক্ষিত থাকায় প্রমোট কমিটি সভা করে সরকারি কর্মকর্তাদের নামে প্রমোটের কক্ষ অস্থায়ী বরাদ্ধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কোন মহিলা শিক্ষক আবেদন করলে সরকারি কর্মকর্তাদের সিট বাতিল করে ওই মহিলা শিক্ষককে দ্রুত আসন বরাদ্ধ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। মহিলা শিক্ষক হোস্টেলের সংস্কারের জন্য প্রতি বছর ব্যয়ের পরিসীমা ১০ হাজার টাকা হলেও কেন অর্ধ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করে মেরামতের নামে টাকা নয় ছয় করার অভিযোগের বিষয়ে জান্তে চাইলে তিনি বলেন, দুই বারে এ টাকা খরচ করা হয়েছে। একাধিক শিক্ষক আবেদন করলেও তাদের আসন বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি অভিযোগের বিষয়ে বলেন, কেউ আবেদন দেয়নি। ১২ নভেম্বর মহিলা শিক্ষকের একটি আবেদন পেয়েছি। কক্ষের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি কক্ষে ২ টি সিট। প্রতি সিট ৬০০ টাকা করে ভাড়া ১২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।