বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন-হাদীসে অতি গুরুত্বের সাথে লেনদেনে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে ও নানা আঙ্গিকে এ ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এখানে তার কিছু নমুনা পেশ করা হল। সূরা মুতাফ্ফিফীনের শুরুতেই আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের নিকট থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদেরকে এক মহাদিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে।’ (সূরা মুতাফ্ফিফীন : ১-৬)।
ইয়াতিমদের সম্পদ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে কোরআন মাজীদে লেনদেনের অনেক বড় মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইয়াতিমদেরকে তাদের সম্পদ দিয়ে দাও। আর ভালো মালকে মন্দ মাল দ্বারা পরিবর্তন করো না। তাদের (ইয়াতিমদের) সম্পদকে নিজেদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে খেয়ো না। নিশ্চয়ই তা মহাপাপ।’ (সূরা নিসা : ২)
এক আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহপাক ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ইয়াতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে; তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভর্তি করে। তারা অচিরেই এক জ¦লন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সূরা নিসা : ১০)
এক আয়াতে পরস্পর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে বেচাকেনাকে বৈধতা দিয়ে সম্পদ উপার্জনের অন্য সব অন্যায় পদ্ধতিকে হারাম ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তা জায়েয)।’ (সূরা নিসা : ২৯)
কোনো সম্পদ শুধু বিচারকের কাছ থেকে নিজের নামে ফায়সালা করে নিলেই তা বৈধ হয়ে যায় না; বরং পন্থাও বৈধ হতে হয় এবং বাস্তবেই নিজে ঐ সম্পদের হকদার হতে হয়। এ বিষয়ে কোরআনের এক আয়াতে নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৮)
ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন সময় আমরা যে চুক্তি করি তা পূর্ণ করার ব্যাপারে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গিকার পুরা করো। অর্থাৎ লেনদেনের বিভিন্ন অঙ্গিকার ও অন্যান্য অঙ্গীকার।’ (সূরা মায়েদা : ১)
অনেকে আমাদের কাছে বিভিন্ন জিনিস আমানত রাখে। আবার বিভিন্ন সময় নানা প্রয়োজনে আমরাও অনেক কিছু ধার-কর্জ করি। অথবা যে কোনোভাবে অপরের কোনো জিনিস আমাদের কাছে থাকে; এ অবস্থায় পাওনাদারের জিনিস বিশ্বস্ততার সাথে তার কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মুসলিমগণ!) নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানত ও পাওনা তার হকদারকে আদায় করে দেবে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে; ইনসাফের সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।’ (সূরা নিসা : ৫৮)
খাঁটি মুুমিনদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক কোরআন মাজীদে দুই জায়গায় ইরশাদ করেছেন, ‘এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের সাক্ষ্য যথাযথভাবে দান করে।’ (সূরা মাআরিজ : ৩২-৩৩; সূরা মুমিনূন : ৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।