Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোকার জানাজায় লাখো জনতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম

ছাত্রাবস্থায় অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে সাদেক হোসেন খোকা। খেতাব পেয়েছিলেন গেরিলা যোদ্ধার। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি থেকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে জাতীয় রাজনীতিতে যাত্রা। ৮০’র দশকে পথচলা শুরু বিএনপির সাথে। এই দলের হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে অংশ নিয়েছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। পরবর্তীতে নির্বাচিত হয়েছেন এমপি, মন্ত্রী ও মেয়র। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের তিনিই ছিলেন সর্বশেষ মেয়র। রাজধানীবাসীর যেকোন সঙ্কটে ছুটে গেছেন তাদের পাশে, দাঁড়িয়েছেন তাদের সাথে, সমাধানের চেষ্টা করেছেন যেকোন সঙ্কটের। এজন্য রাজধানীতে রাজনীতিতে অর্জন করেছেন আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ঢাকা ও নয়াপল্টন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সঙ্গে খোকার জড়িয়ে আছে অসংখ্য স্মৃতি। রাজপথ কাঁপানো অনেক আন্দোলনেও অংশ নিয়েছেন এই শহর ও কার্যালয় থেকে। দীর্ঘ ৫ বছরেরও বেশি সময় পর সেই নেতা ঢাকায় আসলেন প্রাণহীন লাশ হয়ে। কফিনবন্দি প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাতে তাই গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নয়াপল্টন, গুলিস্তানের নগর ভবন, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব ও ধূপখোলা মাঠে নেমেছিল লাখ লাখ জনতার ঢল।

সকাল সাড়ে ৮টায় নিউইয়র্ক থেকে অ্যামিরেটাস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সাদেক হোসেন খোকার লাশ। সেখান থেকে নেয়া হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় দেশের মাটিতে প্রথম জানাযার নামাজ। এই নামাজে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টায় খোকার লাশ নেয়া হয় শহীদ মিনারে। এসময় গোটা শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তবে সবচেয়ে অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায় নয়াপল্টনে। এখানে দুপুর দেড়টায় সাদেক হোসেন খোকার লাশ আনা হবে তা আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এর আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টন জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকেই নয়াপল্টন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান নেন সড়কের দুই পাশে। বেলা দেড়টার কিছু সময় আগে নয়াপল্টনে এসে পৌঁছায় সাদেক হোসেন খোকার কফিন। সাথে সাথেই আগে থেকেই উপস্থিত নেতাকর্মীদের সাথে বিভিন্ন অলি-গলি থেকে সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করেন। মুহূর্তেই নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত উভয়পাশের রাস্তা এবং আশপাশের গলিপথগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ওই এলাকায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। পুরো এলাকা মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। কী বিএনপি, কী আওয়ামী লীগ- দল-মতের পরিচয় ভুলে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয় এই জানাযায়। লাখো জনতার অংশগ্রহণে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাযার নামাজ। মূল সড়কের দুই পাশ ছাড়াও সড়কের আশপাশের অলিগলিতেও দাঁড়িয়ে অনেককে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

এর আগে সেখানে লাশ পৌঁছালে অশ্রুসজল নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খোকার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে দলের পক্ষ থেকে, পরে কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। খোকার কফিন নয়াপল্টনে কালো কাপড়ে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয়। এ সময়ে নেতা-কর্মীদের কফিনের সামনে কাঁদতে দেখা যায়। বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাদেরও অনেককে অশ্রুসজল দেখাচ্ছিল।

কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে শোকাগ্রস্থ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সকলের প্রিয় নেতা, দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা, দুই বারের নির্বাচিত ঢাকার সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি, ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এমন এক সময় চলে গেলেন যখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না। আজকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনে সারা বাংলাদেশের মানুষ যখন অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, সেই সময়ে যে মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সাদেক হোসেন খোকা তার অন্যতম। তিনি চলে গেছেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনীতির কথা বলার সময় নয়। তার চলে যাওয়ায় যে রাজনৈতিক শূণ্যতা সৃষ্টি হলো সেই শূণ্যতা পুরণ হওয়ার নয়। পরম করুনাময় আল্লাহ তালার কাছে এই দোয়া করি তিনি যেন তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন, তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।

দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে খোকার বড় ছেলেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান। শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন উলামা দলের আহবায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক। জানাজার পর মুক্তিযোদ্ধারা খোকার কফিনে স্যালুট জানান জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা। এদের মধ্যে ছিলেন সেক্টার কমান্ডার শাহজাহান ওমরসহ মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় জাতীয় পতাকা দিয়ে তার কফিন ঢেকে দেওয়া হয়। জানাযা যখন হচ্ছিন তখন কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা মাথা নিচু করে তাদের প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। আরে আগে সকাল ৮টা থেকে নয়া পল্টনের অফিসের নিচ তলায় সকাল থেকেই কোরান খানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নগরভবনে জানাযা শেষে খোকার লাশ নেয়া হয় তার প্রিয় ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। যেখানে তার শৈশব কেটেছে। সেখানেও কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে আরেকটি জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। আর শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হয় ধূপখোলা মাঠে। সেই জানাযায়ও হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।####



 

Show all comments
  • Md Robiul Alam Babu ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আল্লাহ পাক উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক আমিন।উনি মারা গেছেন উনি কিছুই শুনতে পাবেন না।। তাই সবার উচিত দল মত নির্বিশেষে দোওয়া করা।আর যাই হোক উনি একজন ঢাকা সিটি র মেয়র ছিলেন।।সবাই দোওয়া করি যেনো আল্লাহ পাক উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন আমিন।শুভকামনা সবার জন্য। আসসালামু আলাইকুম।
    Total Reply(0) Reply
  • Ali Akbar ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    হে আল্লাহ আমি এই মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি তোমার দরবারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Amjad Husain ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এই ভাবে সবাইকে বিধায় নিতে হবে দুঃখু হয় সরকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসে তার পাসপোর্ট নবায়ন করে নাই এবং তার কোনো জবাব দেননি সাদেক হোসেন খোকাকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে দুঃখু হয়, শেষ সময়ে দেশে আসার ইচ্ছে ছিলো তার।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Rafique ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এখানেই মানব জনমের স্বার্থকতা। সাথে প্রমাণ রেখে গেল জনপ্রিয়তা ম্লান হয়ে যায় না। এরই নাম ভালবাসা। অনন্ত পারাপারে মহান রব্বুল আলামিনের হেফাজতে থাকবেন ইনশাল্লাহ। আমিন ছুম্মা আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Lek Hon ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    একজন মুক্তিযুদ্ধের নায়ককে কতটুকু সম্মান দিলাম আমরা? তাঁর শেষ ইচ্ছা রাজনৈতিক কারনে পূরণ হয় নাই।এইভাবেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন অপূর্ণ না থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kholil Hawlader ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এতেই প্রমাণিত সাদেক হোসেন খোকা একজন ভালো মানুষ ছিলেন । আল্লাহ যেন তাকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Siddiki ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এমন জীবন করিবে গঠন, মরণে হাঁসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।আল্লাহ খোকা ভাইকে জান্নাত দান করুন।আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Asadujjaman Asad ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    রাজপথ কাঁপানো বিএনপির অকুতোভয় অগ্রসেনানী।বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সাদেক হোসেন খোকা ভাইয়ের আন্তার শান্তি কামনা করছি।আজকে তার জানাজা প্রমান করে।তিনি কত বড় মাপের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে এদেশের রাজনিতী করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Pronob Dey Pintu ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেক কিছুই তার প্রাপ্য ছিলো,হয়তো অনেক কিছুই তিনি পাননি!তবুও একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিত হলেন এটা তবু পূরণ হলো।তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Alom Nazrul ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    যাদের জীবন বাজির যুদ্ধে আমরা পেয়েছি একটি মানচিত্র, আমরা বিশ্বে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচিত হয়েছি , তার জানাজায় মানুষের ঢল থাকতেই পারে কিন্তু এই মুক্তি যুদ্ধার শেষ আশাটুকু পুরনে যারা রাজনীতির নোংরা খেলা খেললো তাদের বিচার যেন আল্লাহ এই দেশের মাটিতেই করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Noor Ul Islam Islam ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    বিএনপির জীবিত নেতারা কি এই জনসমুদ্র চোখে দেখতে পাচ্ছে কিংবা উপলব্ধি করতে পারছে? জীবিত কিংবা মৃত,বিএনপির প্রত্যেক নেতার জন্যেই দেশবাসীর এমন শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বিদ্যমান যদি তারা জানতো!
    Total Reply(0) Reply
  • Sharif Hossan ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
    চেতনার ব্যবসা এমন জায়গায় গিয়ে পৌছেছে,যারা দেশ স্বাধীন করলো,যেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাইছেন যাদের রক্তে,তাদের সেই মাটিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার অফসোস নিয়ে মরতে হই।এর চেয়ে বড় অফসোস আর কি হতে পারে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৮:২০ এএম says : 0
    দল-মত নির্বিশেষে উনার পরিচয় হল উনি বাংলাদেশের এ এক জন মুক্তিযোদ্ধা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জানাজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ