পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্তে¡ও আইনের আওতায় আনা হয়নি মূল হোতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে। এ কারণে কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তলব করেছে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ বিষয়ে কমিটিকে নোটিস করলে বিষয়টি আমলে নিয়ে তাদের তলব করা হয়। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, কমিটির ওই তলবে সাড়া দিতে বাধ্য নন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের ঘটনায় হাইকোর্ট দুদককে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। দুদক ব্যবস্থা নেয়নি। হাইকোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য করায়ই নাকি দুদক চেয়ারম্যানকে কমিটি তলব করেছে। বিষয় হচ্ছে, হাইকোর্টের কোনো আদেশ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে সেটি তামিল করতে সংসদীয় কমিটি বাধ্য করতে পারে না। এটির বিষয়ে বড়জোর আপিল হতে পারে। সুতরাং কমিটির ডাকে সাড়া দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে দুদক চেয়ারম্যান সেখানে যাবেন কি না এটি তার সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটিতে দুদক চেয়ারম্যানদের তলব নতুন কিছু নয়। আর এমন ‘তলবে’ সাড়া না দেয়ার নজিরও রয়েছে। ২০০৯ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে তলব করা হয়েছিল দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে। কমিটির তৎকালীন সভাপতি ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সেই তলবে সাড়া দেননি দুদক চেয়ারম্যান। কমিশন থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, তিনি কমিটির বৈঠকে যাবেন না। জবাবে ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছিলেন, প্রয়োজেন আরদালি দিয়ে চ্যাংদোলা করে তাকে কমিটিতে হাজির করা হবে। পরবর্তীতে তৎকালীন দুদক সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন ব্যক্তিগতভাবে কমিটিতে হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়ে আসেন।
দুদকের দেয়া ৩৩টি চার্জশিটে সালেকের পরিবর্তে পাটকল শ্রমিক জাহালমের ৩ বছর কারাবাসের ঘটনায় চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট হাজির হতে বলেছিল দুদককে। এ প্রেক্ষিতে গত ৩ ফেব্রæয়ারি কমিশন একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাইকোর্টে পাঠায় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে। কমিশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টে হাজির হতে হয়নি। একজন প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে সেটি সামাল দেয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতি দমন কমিশনের পূর্বতন নাম ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি সংস্থা ছিল। ২০০৪ সালে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪’ এর মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। আইনত দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বশাসিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কোনো বিষয়ে সরকারের ওপর নির্ভর নয়। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দুদকের নিজেরই রয়েছে। তবে আইনের সংশোধন, অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন, সচিব নিয়োগ, প্রেষণে জনবল নিয়োগ এবং প্রেষণে অন্যত্র জনবল পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। বিধি অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিষয়ে দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
সরকারের সঙ্গে দুদকের দাপ্তরিক সম্পর্ক এতটুকুনই। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৯(১) ধারা অনুযায়ী, দুদক পূর্ববর্তী বছরের কার্যাবলির একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করেন। ২৯(২) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদে উপস্থাপন এবং সেটির ওপর আলোচনা হওয়ার বিষয় রয়েছে। কিন্তু ওই প্রতিবেদন ধরে সংসদ অধিবেশনে দুদকের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর মূল্যায়নধর্মী কোনো আলোচনা হয় না। ২০১৬ সালের ৯ জুন দুদক আইন সংশোধনী বিল-২০১৬ পাস করার সময় অধিবেশনে দুদক প্রসঙ্গ ওঠে। তখন দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে ইকবাল মাহমুদের বয়স ১ বছরের কিছু বেশি। ওই সময় কোনো পার্লামেন্টারিয়ান ব্যক্তিগতভাবে দুদক চেয়ারম্যানের প্রশংসা করেন। তবে এই প্রশংসার মধ্যেও ছিল দুদক চেয়ারম্যানের সমালোচনা। জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছিলেন, দুদকে হাজার হাজার মামলা পেনডিং রয়ে গেছে। সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। এটি দুদক চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন। উনি (ইকবাল মাহমুদ) অনেক ভালো কাজ করছেন। তবে আমি মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশন না বলে তো দুর্নীতি কমিশন বললেই ভালো হয়। কারণ, অনেক দুর্নীতি তারাই করছে। জাপার আরেক এমপি সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছিলেন দুদক এমন একটি নাম, এখন তার নাম শুনলে সবাই ভয় পায়। যখন যে চেয়ারম্যানই আসেন তখনই উনি এসে একটা ঘোষণা দেন যে, এবার আমি দুর্নীতি দমন করব। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখি একটা এমেন্ডমেন্ট (সংশোধনী) আছে।
সলিম উদ্দিন এমপি বলেছিলেন, দুদক দুর্নীতি দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি কখনো। বর্তমানে দুর্নীতির পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। গত তিন বছর জাতীয় সংসদে দুদকের কার্যক্রম প্রাসঙ্গিকতা পায়নি। তবে সংসদের বাইরে এখন প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনায় মুখর অনেক এমপি এবং সরকারদলীয় নেতারা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দুদকের ব্যর্থতায় হাতাশা প্রকাশ করছেন। তবে সংসদে আলাপ-আলোচনা হলেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এমনকি ব্যক্তি হিসেবে দুদক চেয়ারম্যানের পদটিরও আইনগত কোনো দায়বদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় না। উচ্চ আদালতের বিচারপতির মতোই দুদক চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। সে হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছেই তার দায়বদ্ধতা বলে কেউ কেউ ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু কার্যত দুদক আইনের ২৯(১) ধারা অনুযায়ী, মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ ছাড়া দুদকের আর কোনো কার্যক্রম নেই। দুদকের কমিশনারগণ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং দুদক চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমর্যাদার। এ অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যান দুদক আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। প্রটোকল পান। দুদক চেয়ারম্যানের অপসারণও বিচারপতিগণের প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হওয়ার কথা। পার্থক্য হচ্ছে, বিচার বিভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান রক্ষা এবং সমুন্নত রাখতে বিচারপতিগণ শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু দুদক কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়। আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমর্যাদার হলেও তাকে কোনো শপথ গ্রহণ করতে হয় না। এ কারণে দুদক চেয়ারম্যান যা কিছুই করেন না কেন তার বিরুদ্ধে শপথভঙ্গের অভিযোগ আনা সম্ভব হয় না। বিচারপতির মর্যাদা নিয়ে তিনি স্বশাসিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা পালন করেন। আইনের ৬(১) অনুযায়ী, দুদক কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৭ ধারা অনুসারে গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ৬(৩) ধারা অনুযায়ী কমিশনারগণ ধারা ১০-এর বিধান সাপেক্ষে তাদের যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য স্ব স্ব পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। আইনের ১০ (১) ধারায় কমিশনারদের পদত্যাগ ও অপসারণের বিধান রয়েছে।
১০(৩) ধারায় অপসারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ কারণ ও পদ্ধতি ব্যতীত কোনো কমিশনারকে অপসারণ করা যাইবে না।’ দুদক কমিশনারগণ এবং চেয়ারম্যানের এ আইনি ভিত্তির কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে বলা হয় স্বাধীন। স্বাধীনতার ঝান্ডাধারী দুদক শীর্ষ নির্বাহীদের চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ থাকলেও তাদের ব্যক্তিগত জবাবদিহিতার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। দুদকের সাবেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আকবর আমীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাবমুক্ত করে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, দুদকের ওপর দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছেই। যে কারণে বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না দুদক। সরকারের সঙ্গেও একটি গোপন সমঝোতা রয়েছেই। এটি এখন ওপেন সিক্রেট। তাহলে ঘটনা কী দাঁড়াল? দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি আইনে স্বাধীন হলেও স্বাধীনভাবে চলছে না। চলে ইশারায়। তার আর রাখঢাক করে লাভ কি? এটিকে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দিলেই হয়!
বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতা (দুদকের মূল দায়িত্ব), ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, গণমানুষের কাছে আস্থা হারানোর প্রেক্ষিতে কী পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে- এখন এ প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। সাধারণ মানুষ এবং সরকারের কাছেও প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে। তাই প্রশ্ন উঠেছে- দুদকের কার্যকর জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা কার কাছে? এ বিষয়ে ড. শাহদীন মালিক গতকাল মঙ্গলবার ‘ইনকিলাব’কে বলেন, দুদক সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ। সব কিছু আইনে লেখা থাকে না। বিধি দ্বারা নির্ধারিতও নয়। আপনি কাউকে সালাম দিতে কিংবা নিতে বাধ্য নন। তারপরও কিন্তু আপনি সালাম বিনিময় করছেন। এটি একটি ভদ্রতা। সংসদীয় কমিটি তলব করলে যেতে হয়। দুদকের প্রধান নির্বাহী সংসদে না যাওয়ার বিষয়টি একটি অভদ্রতা। দুদক চেয়ারম্যান কি তাহলে সেই কাজটিই করবেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।