পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। তাদের পৈচাশিক নির্যাতন ও পিটুনিতে শিক্ষক, ছাত্রী, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩৫ জন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের জরুরী এক সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও উপাচার্যের দুর্নীতি আড়ালের হাতিয়ার বলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও যোগ দিতে দেখা গেছে।
অপরদিকে নিজ দায়িত্বে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে দাবি করে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন, নিজ দায়িত্বে ছাত্রলীগ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। তাদের এ কাজে আমি খুশি এবং ছাত্রলীগকে বিশেষ ধন্যবাদ দিচ্ছি।
জানা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি মৌন মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা আন্দোলনকারীদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। পরে পরিবহন চত্ত¡র থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বসভবনের দিকে রওনা হয়। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভনের সামনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপী চলা এই হামলার অন্তত ৩৫ জন আন্দোলনকারী আহত হয়। এছাড়া কর্তব্য পালনকালে চার জন সাংবাদিক মারধরের শিকার হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ১২-১৫ জনকে সাভার এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেলের কর্তব্যরত ডা. মোজেজা জহুরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রায় দুই মাস ধরে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১১দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন তারা। গত সোমবার সন্ধ্যায় একটি মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সমানে অবস্থান নেন।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষকরা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগরে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক রায়হান রাইন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদসহ আরো কয়েকজন। মারধরে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে- ৪৪তম ব্যাচের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মাহাথির মুহাম্মদ, দর্শন বিভাগের মারুফ মোজাম্মেল, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাইমুম ইসলাম, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রনি, ৪৮ তমব্যাচের ইংরেজি বিভাগের আলিফ মাহমুদ, অর্থনীতি বিভাগের উল্লাস, ৪৫তম ব্যাচের দর্শন বিভাগের রুদ্রনীল, প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সৌমিক বাগচীর নাম জানা গেছে। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী মারিয়াম রশিদ ছন্দার পেটের নিচে লাথি দেয় এক ছাত্রলীগ কর্মী। এতে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বর্তমান সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া ৪৭তম ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাউদা নামের দুই নারী শিক্ষার্থীকেও মারধর করতে দেখা গেছে। সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলায় আহত হন প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাইদুল ইসলাম, বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি রুদ্র আজাদ, বার্তাবাজারের প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন, বাংলা লাইভ টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল।
এদিকে আধা ঘন্টাব্যাপী চলা ছাত্রলীগের এ হামলার সময় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়ন ছিল। কিন্তু তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। আন্দোলনকারীরা তাদের কাছে বারবার সাহায্য চাইলেও তারা কোন সাড়া দেয়নি বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। এছাড়া এসময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা এ হামলার সময় উস্কানি দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করছেন আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের হামলার পর আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দীর্ঘ ১১ দিন পর নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন আলোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে প্রবেশ করেন সংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি তার পক্ষে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। এছাড়া ছাত্রলীগকে তিনি ‘বিশেষ করে’ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সব ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রলীগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজটি (আন্দোলনকারীদের পেটানো) করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সবাই আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা তিন মাস থেকে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। আমাদের চিন্তা করতে হবে কারা, কেন, কীভাবে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। একটা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে অসম্মান ও অপদস্থ করা হয়েছে। কিন্তু এটা করা হয়েছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই। যদি কোনো প্রমাণ থাকে, যদি প্রমাণ পায়, তাহলে যা বিচার হবে তা মেনে নেব। সংবাদমাধ্যমকে তারা (আন্দোলনকারীরা) অনবরত মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, মিথ্যা বলেছে। দেশের একটা জাগরণের সুযোগ এসেছে যে আমরা সত্য কথা বলার সুযোগ পাব কিনা। আজ মানুষের জেগে ওঠা আমরা দেখেছি।’
পরে সিন্ডিকেটের এক জরুরী সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌক্তিক ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করছিলাম। ছাত্রলীগে এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। এতে আমাদের অনেক সহকর্মীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তিনি পরিতাপের সাথে আরো বলেন, আমাদের সহকর্র্মীদের (অধ্যাপক) সামনে ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের মারধর করলো, লঞ্ছিত করলো কিন্তু তারা শুধুই দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে উস্কানি দিয়েছেন।’
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলা করে দুর্নীতি আড়াল করতে এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এটা অযৌক্তিক। আমার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি। একই সাথে হামলাকারীদের বিচার ও এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবো না।’
হামলার নেতৃত্ব দেওয়া শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন , ‘আমরা শিবির মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবিরের সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। তাই আমরা তাদের হটিয়ে দিয়েছি। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু শিবিরকে আমরা ক্যাম্পাসে প্রশ্রয় দিবো না।
এদিকে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ ঢাকা জেলা পুলিশের কাছে ৩০০ পুলিশ (নারীসহ) মোতায়নের জন্য আবেদন জানান।
অপরদিকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। দুই ঘন্টা আগে হল ছাড়ার ঘোষণায় অনেক শিক্ষার্থীরা বিচলিত হয়ে পড়েন। আবার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রীরা। মেয়েদের হল থেকে তারা একটি মিছিল বের করে ছেলেদের কয়েকটি হল ঘুরে ভিসির বাসার সামনে জড়ো হয়। সেখানে অবস্থানরত ভিসিপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তারা তাদের ভিসির বাসার সামনে যেতে বাধা দেয়। পরে সেখানে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় উভয় পক্ষ বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে আবারো উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির শুরু হয়। এতে কয়েজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা (ওই ছাত্রীরা) ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে ছাত্রলীগ বাধা দিয়ে সেখানেই অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। এ সময় আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি শ্লোগান দিতে থাকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন আবাসিক হল ঘুরে জানা যায়, প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আর বাকিরা চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে হলেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
দ্রুত হল ছাড়ার সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত গাড়ির ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পস ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো আটকিয়ে দেয় আন্দোলনকারী।
সর্বশেষ, আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত¡রে অবস্থান নিয়েছে। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।