Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যেভাবে ছড়ানো হয় মুসলিমবিরোধী ঘৃণা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আসামে নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদ করার সময়ে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ব্যাপকহারে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ‘আওয়াজ’ নামের অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের একটি ওয়েবসাইট। নিউইয়র্কভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আওয়াজ’ ম‚লত অনলাইন অ্যাক্টিভিজম করে থাকে বিশ্বজুড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, পশু-অধিকার, দুর্নীতি, দারিদ্র্য আর সংঘাতের মতো বিষয়গুলোতেই তারা মনোনিবেশ করে। লন্ডনের ‘দা গার্ডিয়ান’ পত্রিকা এই সংগঠনটি সম্পর্কে বলেছে, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে প্রভাবশালী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক’ এটি। ‘আওয়াজ’ বলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার আগে যে ধরনের ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল, আসামে এন আর সি চলাকালীন হেট স্পিচগুলোর সঙ্গে সেগুলোর বেশ মিল রয়েছে। ওসব পোস্ট যারা করেছিলেন, তাদের মধ্যে পরিচিতি রাজনৈতিক নেতারাও রয়েছেন বলে ‘আওয়াজ’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। যাদের নাম প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে প্রাক্তন আলফা নেতা এবং বিজেপির আইরপ্রণেতাও। শুধু ফেসবুকের পোস্টগুলোকে বিশ্লেষণ করেনি। ঘৃণাম‚লক পোস্টে যেসব কমেন্ট পড়েছে, সেগুলোর দিকেও তাদের নজর গেছে। ‘আওয়াজ’ সেরকম কয়েকটি উদাহরণও দিয়েছে। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ঘৃণাম‚লক পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, ‘হয় মারব নয় মরব। এক হাজার যুবক তৈরি আছে। স্যার, দয়া করে কিছু করুন।’ আরেকটি কমেন্ট ছিল এরকম : ‘অস্ত্র তুলে নেয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। রাতের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে হবে।’ তৃতীয় একজনের বক্তব্য, ‘এখনই নদীর ধারে ওদের বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেয়া যায়।’ আসামে ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়ানো ওসব ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করে ‘আওয়াজ’ জানিয়েছে, সেগুলো সর্বমোট ৫৪ লাখ বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় এক লাখবার শেয়ার করা হয়েছে। বাংলাভাষীরাই ওসব বিদ্বেষম‚লক পোস্টের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন, কিন্তু বিশেষভাবে মুসলমানদের ব্যাপকহারে গালিগালাজ করা হয়েছে ওসব পোস্টে। ‘মেগাফোন ফর হেট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের ওয়েবসাইট ‘আওয়াজ’ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রক্রিয়া চলাকালীন আসামের বাংলাভাষীদের বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে তাদের ‘অপরাধী’, ‘ধর্ষক’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘শুকর’, ‘কুকুর’ - এসব বলে গালাগালি দেয়া হয় নানা সময়ে। ‘আওয়াজ’ আরও বলেছে যে ধরনের ঘৃণাম‚লক পোস্ট তারা খুঁজে পেয়েছে, আসলে হয়তো সেটি হিমশৈল চ‚ড়া মাত্র। কারণ, তারা শুধু ফেসবুকেই নজর দিয়েছিল আর সেইসব পোস্ট খুঁজেছে, যেখানে এন আর সি আর আসামের সম্বন্ধে লেখা হয়েছিল। শুধু যে ফেসবুকে পোস্ট করেই বাংলাভাষীদের, বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের গালাগালি করা হয়েছে, এমন নয়। অনেকদিন ধরেই আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের অভিযোগ যে বাংলা কথা বলতে শুনলেই অনেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে কটু মন্তব্য করে থাকেন। এর সঙ্গে যদি কাউকে টুপি, দাড়িসহ দেখা যায়, তাহলে ঘৃণার পরিমাণটা বেড়ে যায়। এন আর সি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই কট‚ক্তি চলে আসছে বলে নানা সময়ে আসামের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ জানিয়েছেন বিবিসিকে। এন আর সি প্রক্রিয়া নিয়ে খুব সক্রিয় থেকেছেন, এমন একজন বরপেটা জেলার শাহজাহান আলি। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন ফেসবুকের বাইরেও দৈনন্দিন জীবনে তারা কীভাবে ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন। ‘এন আর সি শুরু হওয়ার আগে থেকেই মিঞা, বাংলাদেশি এসব বলে ঘৃণা ছড়ানো হয়ে আসছে। ভাষিক আর ধর্মীয় সংখ্যালঘু যারা আসামে, তাদেরকেই টার্গেট করা হয় সবসময়ে,’- বলছিলেন শাহজাহান আলি। বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ