বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল-কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর ন্যস্ত। (সূরা হুদ: আয়াত ৬)। এখন বুঝতে হবে, রিজিক কী? কাকে বলে? এ সম্পর্কে কয়েকটি সংজ্ঞা রয়েছে। যথা- (ক) মহান আল্লাহপাক তার সৃষ্টি জীবের প্রয়োজনে যেসকল বস্তুর ব্যবস্থা করেন, তারপর সৃষ্টিজীব তার দ্বারা উপকৃত হয়, তা-ই রিজিক। সুতরাং সকল সৃষ্টিই নিজ নিজ রিজিক গ্রহণ করে থাকে। (শারহুল মাকাসিদ : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৫)। (খ) আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহপাক তোমাদের জন্য যে সকল বস্তুর ব্যবস্থা করেন, অনন্তর প্রাণী তা গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করে তা-ই রিজিক। আর তা কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হালাল হয় এবং কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হারাম হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, আপেক্ষিকভাবে যা হারাম, তা-ও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, সৃষ্টি বিশেষের জন্য হালাল করা হয়েছে। (গ) কারো কারো মতে প্রাণী যা ভক্ষণ করে জীবন যাপন করে তাকে রিজিক বলে। তবে এ সংজ্ঞা হতে প্রথমোক্ত সংজ্ঞা উত্তম। কেননা, তৃতীয় সংজ্ঞায় রিজিকের সম্বন্ধ আল্লাহপাকের দিকে করা হয়নি। অথচ রিযিক বোঝাতে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ থাকা বিশেষ ধর্তব্য। (শারহুল আকাইদ : পৃষ্ঠা ৯৫)।
উল্লেখিত, আলোচনার সারকথা এই যে, আল্লাহপাক নিজেই সৃষ্টিকুলের রিজিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এজন্য তিনি রাব্বুল আলামিন। রিজিকের হালাল ও হারাম হওয়া আপেক্ষিক ব্যাপার। যা এক সৃষ্টির জন্য হালাল, তা অন্য সৃষ্টির জন্য হারাম সাব্যস্ত হতে পারে। প্রত্যেক সচল মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ নিজের রিজিক নিজেই উপার্জন করে। একই সাথে পরিবার-পরিজন ও জনগণের কল্যাণের জন্যও তা থেকে ব্যয় করে। যেভাবে হালাল জিনিস রিজিক হতে পারে, তেমনি হারাম জিনিসও রিজিক হতে পারে। তাই দেখা যায়, মানুষ বিভিন্ন উপায়-উপকরণের দ্বারা যেমন হালাল উপার্জনের প্রতি যতœবান হয়, তেমনি হারাম উপার্জনের জন্য নানাবিধ উপায় বা পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। আর যারা আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং আল্লাহপাককে রিযিকদানকারী বলে মানতে চায় না তারা প্রকৃতই কাফির। এই অপরাধের জন্য তারা প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। এ প্রসঙ্গে কাজী আবু বকর বাকিল্লানি (রহ.) বলেন, কুফর হলো আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীকে অস্বীকার করা। কখনো কখনো অস্বীকৃতি বা জহুদকে অজ্ঞতাও বলা হয়। সুতরাং কুফরের অর্থ দাঁড়ায় অস্বীকার করা এবং অজ্ঞতার আবর্তে নিমজ্জিত থাকা। অবিশ্বাসী কাফির শ্রেণি এরই প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে।
প্রকৃতই আল্লাহপাক ‘রাজ্জাক’ (রিযিকদানকারী)। আল-কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রিজিক দান করেন এবং তিনি প্রবল পরাক্রান্ত’। (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৫৮)। আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি জগতের সকল কিছুকে রিযিক প্রদান করছেন। তিনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল-কোরআনে এই বিশেষত্বটি এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে, ‘মারয়াম তনয় ঈসা বলল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক। আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্জা দান করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ উৎসব এবং তোমার নিকট হতে নিদর্শনস্বরূপ হবে এবং আমাদেরকে রিযিক দান করুন আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকা দানকারী। (সূরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)। তোমাদের জন্য রিজিক বা জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকদাতা নও তাদের জন্যও। (সূরা হিজর : আয়াত ২০)।
সূতরাং উল্লেখিত নাতিদীর্ঘ আলোচনার নিরিখে একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, যে বা যারা সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা, শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা, সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা, মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের এই গুণ ও সিফাতের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে তাদের শেষ ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এর কোন ব্যত্যয় হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।