বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম কলেজে গতকাল (রোববার) ছাত্রলীগের দুই গ্রæপে ফের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩ জনসহ ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পাস এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। উভয় পক্ষের ক্যাডারেরা অস্ত্রের মহড়া দেয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে আসা কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অভিভাবক ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে। অনেকে প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাদের হামলায় সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।
বেলা ১টার দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। শনিবার একই সময়ে দুই গ্রæপের সংঘর্ষ হয় কলেজ ক্যাম্পাসে। ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র শিবিরকে উৎখাত করে সেখানে দখলিস্বত্ব কায়েম করে ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপের কর্মীরা। শনিবার হঠাৎ করে আ জ ম নাছির গ্রæপের কর্মীরা চট্টগ্রাম কলেজে ঢুকে মিছিল করে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এর জের ধরে গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শক্তি বৃদ্ধি করে মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপের অনুসারীরা। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ করে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে মিছিল দিতে থাকে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পক্ষ আরেকপক্ষকে ধাওয়া দিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ এসে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষের অনুসারীদের দুই কলেজের ভেতরে এবং আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের গণি বেকারির দিকে সরিয়ে দেন।
এ সময় একপক্ষ অপরপক্ষকে অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করে। কর্মীদের হাতে দেশী অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন : কাদেমুল ইসলাম দুর্জয়, কণিক বড়–য়া, জামাল উদ্দিন ও খন্দকার নাইমুল আজম। এদের মধ্যে প্রথম চারজন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং শেষেরজন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজ আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসে দুই পক্ষকে দু দিকে সরিয়ে দিয়েছি। গুলির বিষয়ে ওসি বলেন, কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছি। তবে কারা করেছে জানি না। অস্ত্রের মহড়া তার চোখে পড়েনি বলেও জানান তিনি।
সংঘর্ষের বিষয়ে দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলাম। বিনা উসকানিতে তারা এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের চার কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। অন্যদিকে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শনিবারও আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের তিন নেতা-কর্মীকে আহত করেছিল তারা। রোববার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো তারা। আমরা এর বিচার চাই।
টানা ৩০ বছর ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ গত বছর ১৬ ডিসেম্বর ক্যাম্পাস দখল করে নেয় ছাত্রলীগ। ওইদিন থেকে কলেজ দু’টির সবকটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। ছাত্রলীগকে পাহারা দিতে চকবাজার থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে আনা হয়। সেই থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রতিদিন দু’টি ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক দফায় তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায়। এতদিন সংঘর্ষ মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপের উপ-গ্রæপের মধ্যে সীমিত থাকলেও শনিবার থেকে আ জ ম নাছির গ্রæপের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে তাদের। দফায় দফায় সংঘর্ষ আর অস্ত্রবাজি হলেও পুলিশ কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে করে এলাকাবাসী এবং কলেজ দু’টির শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।