বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গচ্ছিত অর্থ বা বস্তুকে আমানত বলা হয়। যার কাছে অর্থ বা বস্তু গচ্ছিত রাখা হয় তাকে বলা হয় আমানতদার। যে রাখে, সে আমানতকারী। আমানত যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আমানতদারের অপরিহার্য কর্তব্য, এটাও ওয়াজিব। আমানত অবশ্যই ফেরতযোগ্য। মালিক যখনই চাইবেন, ফেরৎ দিতে হবে, এটাও ওয়াজিব। আমানতকৃত অর্থ বা বস্তু সুরক্ষা এবং চাইবামাত্র ফেরৎ দেয়া আমানতদারির পরিচয় বহন করে।
আমাদের সমাজে সুপ্রাচীনকাল থেকে একের অর্থ বা বস্তু অন্যের কাছে গচ্ছিত রাখার প্রথা প্রচলিত আছে। অন্যান্য সমাজেও ছিল; এখনো আছে। আমরা জানি, আমানতদার হিসাবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বিপুল খ্যাতি ছিল। মুসলমানরাই নয়, অমুসলিমরাও তার কাছে অর্থ বা সম্পদ গচ্ছিত রাখতেন। তিনি যখন রাতে সংগোপনে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন, তখন গচ্ছিত অর্থ-সম্পদের মালিকদের কাছে তা ফেরৎ দেয়ার জন্য আলী রা. কে রেখে যান। তিনি যথারীতি আমানত ফেরৎ দেন।
সব সমাজে সব মানুষ একই রকম নয়। প্রকৃত আমানতদার যেমন সব সমাজেই আছে, তেমনি আমানতের খেয়ানতকারীও আছে। অনেক সময় অনেকে লোক না চিনে কারো কারো কাছে আমানত রাখে। ওই অবিশ্বস্ত আমানতদার আমানতদারির পরিচয় না দিয়ে আমানতের অর্থ বা সম্পদ মেরে দেয় বা ফেরৎ দিতে গড়িমসি করে। আল্লাহপাক এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন: তোমরা আমানত তার মালিককে ফেরৎ দেবে। (সূরা নিসা : ৫৮)। কিছু মানুষের সৎ ও কিছু মানুষের অসৎ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে আল্লাহপাক অন্য এক আয়াতে বলেছেন: কিতাবীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যে বিপুল আমানত রাখলেও ফেরৎ দেবে। আর এমন লোকও আছে, যার কাছে একটি দিনারও আমানত রাখলে তার পেছনে লেগে না থাকলে সে ফেরৎ দেবে না। এ জন্য যে, তারা বলে ‘এই অশিক্ষিতদের প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে।’ (সূরা আল ইমরান : ৭৫)।
প্রকৃত আমানতদারদের আল্লাহপাক সুসংবাদ দিয়েছেন। বলেছেন: আর যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, যারা সাক্ষ্য দানে অটল এবং নিজেদের নামাজে যত্মবান, তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতে। (সূরা মা’আরিজ : ৩২-৩৫)। আল্লাহপাক আল্লাহ ও রাসূলের সা. সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে যেমন বারণ করেছেন আমানতের খেয়ানত করতেও না করেছেন। বলেছেন : হে বিশ্বাসীগণ, জেনে-শুনে আল্লাহ ও তার রাসূলের সা. সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। আর তোমাদের পরস্পরের গচ্ছিত দ্রব্য সম্পর্কেও নয়। (সূরা আনফাল : ২৭)।
আমানত আত্মসাৎ করাকে রাসূল সা. মুনাফিকের অন্যতম চিহ্ন হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত এই হাদীসে তিনি বলেছেন : মুনাফিকের চিহ্ন হলো তিনটি- সে যখন কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা-চুক্তি করে, তখন ভঙ্গ করে তার বিপরীত কাজ করে এবং কোনো কিছু আমানত রাখা হলে আত্মসাৎ করে। বলা বাহুল্য, মুনাফিকের শেষ পরিণতি ও অবস্থান কোথায় হবে, কারো অজানা নেই।
নিজের গোপনীয় কথা নিজের কাছে আমানতস্বরূপ। তা অন্যের গোপন কথাও, যা সে বিশ্বাস করে বলেছে এবং কারো কাছে বলতে নিষেধ করেছে, সরকারি পদ-পদবীর দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ইত্যাদিও আমানতের পর্যায়ভুক্ত। এসব ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ভঙ্গ হলে, সরকারি দয়িত্ব পালনে অবহেলা-উপেক্ষা, দুর্নীতি, অপচয়, ব্যর্থতা প্রমাণিত হলে এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হলে, আমানতের খেয়ানত হিসাবে গণ্য হবে। এর প্রতিফলও সংশ্লিষ্টদের ভোগ করতে হবে। কাজেই, আমাদের সকলের আমানতের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে এবং কোনোভাবেই যেন তার খেয়ানত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমানতদারী ঈমানদারীরই অংশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।