পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা, সেই সঙ্গে অনুসন্ধান ও তদন্তের নামে হয়রানি বন্ধ না করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেই বিচারের কাঠগড়ায় উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা। আইনজ্ঞদের মতে, কাঠগড়ায় তোলার ব্যবস্থা দুদক আইনেই রয়েছে। সংক্ষুব্ধ কেউ বিষয়টি উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করলেই হয়। বিশ্লেষকদের মতে দুর্নীতি দমনে সমন্বিত কৌশল না খাটালে দেশের অর্থনীতি, শিল্প এবং কর্মসংস্থান ‘কলাপস’ করতে পারে। দৈনিক ইনকিলাবের সঙ্গে আলাপচারিতায় তারা এসব মন্তব্য করেন।
সুনির্দিষ্ট বিধানের অনির্দিষ্ট প্রয়োগ : প্রাপ্ত অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতির অনুসন্ধান, মামলা দায়ের এবং তদন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের মূল কাজ। আইন, বিধি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এসব কার্যক্রম সম্পাদনের প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করা আছে। তা সত্তে¡ও প্রতিষ্ঠানটি জড়িয়ে পড়ছে কিছু অনির্দিষ্ট, অনির্ধারিত বিষয় নিয়ে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দুদকের কার্যক্রম। যেমন- ‘অভিযোগ প্রাপ্তি’। দুর্নীতির বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগ পাওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য নিজস্ব কোনো উৎস নেই দুদকের। নির্ভর করতে হচ্ছে বেনামী অভিযোগের ওপর। নাম-পরিচয় গোপন কিংবা মিথ্যা পরিচয়ে যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করছে অভিযোগ। তফসিলের আওতায় পড়লেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের কথিত সেই অভিযোগের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দুদক। কমিশনের ‘অনুমোদনপত্র’ গেঁথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সমানে চিঠি লেখা হচ্ছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে। সেই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও প্রচার। দেশের অন্যান্য সংস্থা অনুসন্ধান-তদন্ত চালালেও সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউ টের পান না। কিন্তু দুদক অনুসন্ধানে নামলে সেটি যেন বিশ্বব্যাপি প্রচার পেতে বাধ্য। গোপন কাজটি করা হয় প্রকাশ্যে। এর ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে দুর্নীতি প্রমাণ হোক কিংবা না হোক- একটি মিডিয়া ট্রায়াল দুদক আগেই করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান না। তার সাংবিধানিক এবং আইনগত অধিকার মারাত্মক রকম ক্ষুণœ হয়। যেটির আর্থ সামাজিক ক্ষত বেশ গভীর।
অর্থ আদায় ও হয়রানির অভিযোগ : কথা হয় দুদক দ্বারা সাম্প্রতিক সময়ে নির্যাতিত কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে। একজন ব্যবসায়ী জানান, তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অত্র প্রতিষ্ঠানে তিনি কত টাকা বেতন পেতেন, তার সেলারি শিট, সার্ভিস বুক, বেতন কাঠামো ইত্যাদি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরিণতিতে সাবেক ওই হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কথাবার্তা সব ঠিকঠাক হওয়ার পরও মেয়ের বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানে তিনি এখন চাকরি করেন না সেই প্রতিষ্ঠানের নাম নেতিবাচকভাবে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। যা ওই ব্যবসায়ীর ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ককে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে কারণদর্শানো হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই অফিস সহায়ক অভিযোগ করেন দুদকের ‘১০৬’ নামক হটলাইনে। বলা হয়, এখানে আউট সোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগে ভয়াবহ রকম দুর্নীতি হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার লেনদেন। ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে বিশেষ ধরণের জ্যাকেট পরিহিত দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগকারীর দপ্তরে হাজির। খুন-খারাবির মতো বড় ধরণের কিছু একটা ঘটে গেছে- এমন ভাব নিয়ে ওই সরকারি অফিসের প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়। টেবিলের ড্রয়ার, আলমিরা তন্ন তন্ন করা হয়। সার্চ করা হয় কম্পিউটার। ঘণ্টা ২ ধরে তান্ডব সৃষ্টি করে টিমের সদস্যরা ওই সময় কর্মরত ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর নিয়ে আসেন। টিমের সদস্যরা তাদের পিয়ন-কনস্টেবল দিয়ে ওই অফিসের কর্মরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখান। এক পর্যায়ে তারা সাক্ষাৎ করেন। অর্থের বিনিময়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। পরে টাস্কফোর্স এই মর্মে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল হয় যে, ওখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। জনবল নিয়োগের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
দুদক সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একাউন্টে অস্বাভাবিক অংকের টাকা। এই টাকার বড় একটি অংক জমা পড়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্বাক্ষরিত চেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকটির এমডি’র বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিককেও চিঠি দেয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। এক পর্যায়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট জব্দের আবেদন জানান দুদক কর্মকর্তা। বাহবা নেয়ার লোভে প্রতিটি পর্যায়ে বিষয়টি রাষ্ট্র করে দুদক। ফল শ্রুতিতে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে গড়িমসি করে। পাইপলাইনে থাকার পরও ব্যাংক ঋণটি তিনি আর পাননি। কয়েকশ’ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ওই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক। বর্তমান কমিশনের মেয়াদে এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুদক দুর্নীতি দমনে কাজ করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে যদি বাড়াবাড়ি হয় তাহলে এটি জাতীয় অর্থনীতি, ব্যাংকিং, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই দুর্নীতিবিরোধী লড়াই। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে যদি সমন্বিত কৌশল প্রয়োগ করা না হয়। যদি তালিকা প্রণয়ন করে ভীতির সঞ্চার করা হয় তাহলে হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। শিল্প ও অর্থনীতিও কলাপস করবে। তাই হুজুগের উন্মাদনায় গা না ভাসিয়ে মানুষ দুদকের কাছে দায়িত্বশীল এবং সতর্ক আচরণ আশা করে। না হলে জাতীয় জনমত দুদকের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
জবাবদিহিতার আইনে বাধা দুদক : মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানির অপরাধে কারাভোগ করার মতো অপরাধ দুদক বহু আগেই সংঘটিত করেছে। বিশেষ করে সালেকের কৃত অপরাধে জাহালমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা উচ্চ আদালত দ্বারাই প্রমাণিত। এখন শুধু কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতীকার চাইলেই সংস্থাটির বর্তমান নেতৃত্বকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব। এ কাজটি করার জন্য ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪’র ২৮(গ) ধারাই যথেষ্ট। ‘মিথ্যা তথ্য প্রদানের দÐ’ সংক্রান্ত এই ধারায় বলা হয়েছে (১) মিথ্যা জানিয়া বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হইয়া কোনো ব্যক্তি ভিত্তিহীন কোনো তথ্য, যে তথ্যের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন তদন্ত বা বিচার কার্য পরিচালিত হইবার সম্ভাবনা থাকে, প্রদান করিলে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’ ২৮(গ) এর (১) উপ-ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করিলে তিনি একই ধারার অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বৎসর বা অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদÐ বা অর্থদÐ বা উভয় দÐে-দÐিত হইবেন।’ একই ধারার (৩) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘তথ্য প্রদানকারী কমিশনের বা সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী হইলে এবং তিনি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করিলে তাহার বিরুদ্ধে উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত দÐ প্রদান করা হইবে।’
দুদকের সাবেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আকবর আমীন বাবুল বলেন, আইনের এ ধারাটি দুদকের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দুদক প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে আইনের এই ধারাটি ব্যবহৃত হয়নি। ধারাটি যদি অপ্রয়োজনীয়ই হতো তাহলে একাধিকবার দুদক আইন সংশোধন করা হলেও ধারাটি বাদ দেয়া হলো না কেন? আইনটির অপরিহার্যতা রয়েছে বলেই ২৮(গ) (১),(২),(৩) রেখে দেয়া হয়েছে। ধারাটি রাখা হয়েছে দুদকের কর্মকর্তা এবং কমিশনকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যেই। আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হলে দুদকের অনেক কর্মকর্তাকেই কাঠগড়ায় তোলা সম্ভব। আর এ কারণেই মিথ্যা তথ্যে পাটকল শ্রমিক জাহালমকে কারাগারে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিছক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কার কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের নামও গোপন করা হয়েছে। কারণ ব্যবস্থা নিলে কমিশন সদস্যরা এর আওতায় আসতে পারেন। কমিশনের অনুমোদন ছাড়া জাহালমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল সম্ভব নয়। জাহালম-কান্ডের পুরো দায় কমিশনের। দুদক আইনের ২৮(গ) ধারায় গোটা কমিশনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব। দুদক আইনে কমিশনের কোনো সদস্যকে দায়মুক্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু সে পথে না গিয়ে এত বড় ঘটনায় নিছক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় ‘জড়িত’ দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সেই ‘অজ্ঞাতনামা’ কর্মকর্তাদের বলির পাঁঠা বানিয়ে কমিশনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা আতœরক্ষার পথ বাৎলে নেন। এটি আরেকটি ‘জাহালম-কান্ড’ মাত্র।
তিনি বলেন, দুদক আইনে বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। যদি করা হয় সেটির প্রতীকার দুদক আইনেই রয়েছে। ২৮ (গ) ধারায় দুদককেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান, মামলা, তদন্তের নামে হয়রানি, মিথ্যা চার্জশিট দাখিল করলে উক্ত ধারায় উল্লেখিত শাস্তি পেতে হবে সংশ্লিষ্টকে। হিউম্যান রাউটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এ আইনে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দুদকের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিসয়ে প্রতীকার চাইতেই পারেন।
তবে এ ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, জাহালমের ঘটনায় ২৮ (গ) ধারা প্রযোজ্য হবে না। আইনের ৩১ ধারায় দুদককে ইনডেমনিটি দেয়া আছে। সরল বিশ্বাসে করা কাজের জন্য শাস্তি পেতে হবে না। দুদক যখনই জাহালমের ঘটনাটি অবহিত হলো সঙ্গে সঙ্গে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।