বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ভালো, মন্দ এ দুইটি জিনিসই মানুষের জীবন বা চরিত্র হতে উদ্ভূত হয়ে থকে। সুতরাং তা স্পষ্ট জিনিস। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাদেরকে বিবেক ও জ্ঞান দান করেছেন ও কোন কার্য সৎ এবং কোন কার্য অসৎ তা বলে দিয়েছেন। মানুষ ইচ্ছা করলে সৎকর্ম করতে পারে আবার অসৎকর্মও করতে পারে। আল্লাহ তাআলা তার জন্য দায়ী নন, মানুষই সম্পূর্ণ দায়ী।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘এবং তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই হওয়া চাই, যারা লোকদেরকে কল্যাণের (ইসলামের) দিকে আহ্বান করে এবং বৈধ কাজে আদেশ ও অবৈধ কাজে নিষেধ করে থাকে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যদি গ্রন্থধারী লোকেরা আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে নিশ্চয়ই তাদের জন্য কল্যাণ হত, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাসী আছে কিন্তু তাদের অধিকাংশই দুষ্ট ও ভ্রষ্ট।’
মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘যারা পৃথিবীতে সৎ ও মহৎ আখিরাতেও তারা সৎ ও মহৎ এবং যারা পৃথিবীতে নষ্ট ও দুষ্ট আখিরাতেও তারা দুষ্ট ও নষ্ট হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ)
হরমুলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলেন, ‘হে প্রেরিত পুরুষ, আমাকে কী করতে আজ্ঞা করছেন?’ তিনি বললেন, ‘হে হরমুলা! তুমি ভাল কাজ কর ও মন্দ কাজ হতে দূরে অবস্থান কর এবং কোন কাজ করার পূর্বে চিন্তা করে দেখবে।’
যে কাজ করলে তোমার পরে তোমার স্বজাতি তোমার গুণগান করবে, সেইরূপ কাজ কর, আর যে কাজের ফলে তোমার স্বজাতিরা তোমার সম্বন্ধে এমন সব মন্তব্য প্রকাশ করবে, যা শুনতে তোমার কষ্ট হয়, সেইরূপ কাজ কর না।’
বর্ণনাকারী বলছেন: ‘এরপর ফিরে এসে খুব চিন্তা করে বুঝতে পারলাম যে, ঐ দুইটি উপদেশে শিক্ষার সমস্ত বিষয় এসে গেছে।’
আবদুল্লাহর পুত্র বলেছেন যে, আমি হজরত (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, ‘যদি কোনো জাতির কোনো এক ব্যক্তি পাপ কাজ করে এবং ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও যদি সে জাতি তাকে তা হতে নিবৃত না করে, তবে তার সেই পাপ কাজের জন্য তার মৃত্যুর পূর্বে সে জাতির প্রতি আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হবে।’ (মিশকাত)
হযরত সাঈদ বিন জুবাইর (রা.) এক পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে, সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর মাগফিরাতের দিকে ধাবিত হও এবং এমন জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও যার প্রশস্ততা সপ্ত আসমানের প্রত্যেকটাকে একে অপরের সাথে জুড়াতে থাকলে যে পরিমাণ দাঁড়াবে তাই হবে, যেমন একখানা কাপড়কে অপর একখানা কাপড়ের সাথে জড়িত করা হয়। এমনিভাবে সাত তবক জমিকে একসাথে জড়িত করলে যে প্রশস্ততা তার সমপরিমাণ হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, সাত আসমান জমি একত্র করলে যে প্রশস্ততা হবে, জান্নাতের প্রশস্ততা সেই পরিমাণ হবে। হযরত ইবনে আব্বাসের কৃতদাস কোরাইব বলেছেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)ও একদা আমাকে তাওরাতের জনৈক আলেমের নিকট প্রেরণ করেন এবং তাদের গ্রন্থাদি হতে জান্নাতের অবস্থা জানতে চান। উক্ত আলেম হযরত মূসা (আ.) এর সহিফা বের করে বললেন যে, জান্নাতের প্রশস্ততা সাত আসমান জমিনের সমান হবে! তা হচ্ছে প্রস্থ। দৈর্ঘ্য আল্লাহ’ই অবগত আছেন।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, বদর যুদ্ধে নবী করীম (সা.) বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা এমন বেহেশতের দিকে ধাবিত হও যার প্রস্থ সমগ্র আসমান-জমিন সমান।’
হযরত ওমাইর বিন হাম্মাম আনসারী (রা.) (বিস্মিত হয়ে) আরম্ভ করলেন, ‘হে আল্লাহ রসূল (সা.) বেহেশতের প্রশস্ততা কি এতই অধিক!’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ!’ হযরত ওমাইর (রা.) আরম্ভ করলেন: ‘বড়ই আনন্দের কথা ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে থাকতে চাই।’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি তাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে হবে।’ অতঃপর হযরত ওমাইর (রা.) উটের পিঠ থেকে কয়েকটি খেজুর বের করে খেতে আরম্ভ করলেন (যেন যুদ্ধ করার শক্তি হয়) এবং বলতে লাগলেন যে, ‘এসব খেজুর খেয়ে ফেলার অপেক্ষা বড়ই দীর্ঘ জীবনের ব্যাপার।’ এই বলে খেজুরগুলো ফেলে দেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা হয়ে যান এবং যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করেন। (দুররে মানসুর)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।