Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে নতুন আইন

প্রচারণা না থাকায় অনেক ড্রাইভার কিছুই জানেন না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন সড়ক পরিবহন আইন। বেশ কিছু শক্ত নীতিমালা থাকায় এই আইন কার্যকর করতে রাজধানীর সড়কগুলোতে তৎপর দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের। কিন্তু নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন’ প্রয়োগ হলেও এর তেমন কোনো প্রভাব চোখে পড়েনি সড়ক-মহাসড়কে। প্রতিদিনের মতোই গতকালও নানা অনিয়ম চোখে পড়েছে। পুলিশ সদস্যের উল্টো পথে বাইক চালানো, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো, বাস-সিএনজির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার, ড্রাইভিং অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা- এ ধরনের নানা দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও ছিল না নতুন আইন প্রচারের কোনো ব্যবস্থা। এই আইন বিষয়ে জানেন না যেমন পথচারী, তেমনি চালক ও পুলিশ। হেলমেট বাদে মোটরসাইকেল বা জেব্রা ক্রসিং রেখে অনেককে রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও সেটা সঠিক জায়গায় কম। তাই তাদের ফুটওভার ব্যবহারে অনীহা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগের চেয়ে কঠোর এই আইন বাস্তবায়নের জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ সড়ক-মহাসড়কের অনিয়ম বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইনটি টেকসই করতে হলে কর্তৃপক্ষকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ অনেক জায়গায় জেব্রা ক্রসিংয়ের চিহ্ন মুছে গেছে। অনেক জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ দরকার অথচ নেই। তাই সামগ্রিক বাস্তবতায় এই নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। অবকাঠামোগত ত্রুটিগুলো সমাধান করা না হলে সাধারণ মানুষকে আইন মানাতে কষ্ট হবে।
‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ গত ২২ অক্টোবর গেজেট জারি করে সরকার পয়লা নভেম্বর কার্যকর করার ঘোষণা দেয়। প্রণয়নের এক বছরেরও বেশি সময় পর আইনটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এতদিন আইনটি বাস্তবায়নে যায়নি। পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শামসুল হক বলেন, এই আইনের সার্থকতাটা তখনই হবে যখন আমার ভয় দেখানোর দরকার হবে না। আইনটা যুগোপযোগী করা হয়েছে কি না সেটা দেখতে হবে। প্রয়োগের আগে একটু প্রচার-প্রচারণার দরকার আছে।
গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর বিজয় সরণি সিগন্যালে দেখা সড়কে পরিবহন তদারকি করছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। নতুন কার্যকর হওয়া এই আইনের প্রভাব ও প্রয়োগ কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বিজয় সরণি সিগন্যালে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘আজ আমরা পথচারীদের মোটিভেট করার ট্রাই করতেছি নতুন আইন সম্পর্কে। অধিকাংশ পথচারী এই আইন সম্পর্কে পুরোপুরি বা একেবারেই জানেন না। যারা জেনেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে তারা মানতে চাচ্ছেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এক দিনেই সব হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। জনগণও এসব আইন মানতে শুরু করবেন।’
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কতটুকু ধারণা রযেছে জানতে চাইলে বাইকযোগে সিগন্যাল অতিক্রমকারী ব্যাংকার মহিবুর রহমান বলেন, সড়কে নতুন কার্যকর হওয়া সম্পর্কে তার ধারণা আছে তবে সামান্য। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে এতটুকু বলার পরে আর তেমন কিছু জানাতে পারেননি তিনি। ড্রাইভিং সিটে বসে অনবরত মোবাইলে কথা বলে যাচ্ছিলেন আরিফুল নামে এক চালক। ‘গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষেধ’ এই আইনটি জানেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আইন তো আছে ভাই মানে কয় জনে? জরুরি কল আছিল তাই কথা কইলাম। আর ট্রাফিককে টাকা দিলে সবকিছুই সম্ভব’।
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে মিরপুর-গুলিস্তানগামী বাসের চালক রহমত উল্লাহ বলেন, সড়কে নতুন আইন সম্পর্কে কিছু শুনিনি। তবে তার দাবি- আইন হলে মানতে আমরা রাজি আছি। সেটা লেন হোক আর লাইসেন্সের বিষয়ে হোক। কিন্তু সড়কে যখন সাধারণ মানুষ পর হয় কেউ জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করে না। ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে পার হয় না। মোবাইল ফোন কানে নিয়ে, বাজারের ব্যাগ নিয়ে পার হবে। তখন দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের দোষ হবে এটা মানতে পারি না। আর ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জন টাকা ছাড়া যখন কিছুই বোঝে না তখন নতুন আইন করে লাভ নেই। বরং নতুন আইন করেন এবং পুরনো আইন থাকুক তা কার্যকর করাই আসল কথা। ৮ নম্বর রুটের গাবতলী পরিবহনের একাধিক চালক বললেন, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই পুলিশ, মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার জন্যই আমরা পারাপারি করে গাড়ি চালাই। এছাড়া বিআরটিএতে কাগজপত্র ঠিক করতে গেলেও ঘুষ দেওয়া লাগে। এটা বন্ধ করবে কে? নতুন আইন সম্পর্কে জানেন কি না বিসমিল্লাহ পরিবহনের বাসচালক মোহাম্মদ খালেককে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, লাইসেন্স না থাকলে ২৫ হাজার টেকা জরিমানা হইব শুনছি, এর বেশি কিছু কইবার পারি না অহনো!
বাংলা মোটরে স্কুল পড়ুয়া মেয়ের হাত ধরে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলেন শওকত আলী। কথা হলো তার সঙ্গে। তিতাসের এই কর্মকর্তা নতুন সড়ক ও পরিবহন আইনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, খুব একটা জানি না ভাই। যতটুকু জানি লাইসেন্স না থাকলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এর বেশি আর কিছু জানি না।
খামারবাড়ি মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শফিক আহমেদ বলেন, নতুন আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অনেক ভালো ধারণা রয়েছে। গতকালকের ডিউটি আর আজকের ডিউটির মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখছি। আমার মনে হয় এই রকমভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা হবে। তাছাড়া আমাদের জনবল কম রয়েছে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন আইন সম্পর্কে সবার সহযোগিতার পাশাপাশি সচেতন হতে তাগিদ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। প্রাথমিক পর্যায়ে সহনীয়ভাবে এটা প্রয়োগ করা হবে, যাতে মালিক বা চালকের কোনো সমস্যা না হয়। এবং নতুন আইনের কার্যক্রম যেন শুরু করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ