পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিসা একটি ধাতু যা শত শত বছর ধরে রং পানির পাইপে ব্যবহার হয়ে আসছে। সিসা এক সময় ছিল আরবের শাসক ও দিল্লির মুঘল শাসকদের ঐতিহ্যের প্রতীক। আরবের দেশগুলোর মরু প্রান্তরে এবং দরবারে বাদশাহরা সাফারি নাইটে নৈশভোজে মাংস-রুটি পর্বে আরবি নৃত্য আর সিসা সেবন করতেন। অভিজাত পরিবারগুলোর আভিজাত্যের প্রতীক ছিল সিসা। আভিজাত্যের সেই সিসা ব্যবহারে বাংলাদেশের অভিজাত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন ধু¤্রজালের নাম হয়ে গেছে ‘সিসা’।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে বসবাসে এক সময় অতিথি আপ্যায়নে অন্যতম উপকরণ ছিল পান-তামাক। তামাক দিয়ে পরিবেশনের সময় এগিয়ে দেয়া হত হুক্কা। তখন ধুমপানের একমাত্র সম্বল ছিল নারিকেল, কাঠ ও মাটির তৈরি কলকি দ্বারা নির্মিত হুক্কা। পরবর্তীতে পিতলের হুক্কাও সামনে চলে আসে। হুক্কা সেবনে প্রয়োজন হতো তামাক ও টিক্কা। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৭৫৭ সালে উপনেবেশিক আমলে প্রবেশের আগে বাংলার এই অঞ্চলে তামাক নিয়ে আসে বাণিজ্য করতে আসা পর্তুগীজরা। তারাই এই অঞ্চলে ধূমপানের প্রচলন শুরু করেন। আর হুক্কা দিয়ে ধূমপানের প্রচলন শুরু করেন মোঘলরা। রাজ দরবারে হুক্কার প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে সমাজের অভিজাত পরিবারগুলোয়। অনেকের মতে, মোঘল এক চিকিৎসক হুক্কার আবিষ্কারক। মোঘল আমলে বাদশা-বেগম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ হুক্কা টেনেছেন।
হুক্কা একটি আরবী শব্দ। আরব দেশগুলোতে এটা সিসা বা নারগিলা বলে পরিচিত। ইরানে একে বলা হয় গালায়ুন, উজবেকরা বলেন সিলিম। হালে বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় অভিজাত এলাকায় অনেক সিসা লাউঞ্জ গড়ে উঠেছে। সেখানে আপেল, আম, স্ট্রবেরীসহ বিভিন্ন স্বাদের সিসা পাওয়া যায়। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় বেশ কিছু সিসা লাউঞ্জ গড়ে উঠেছে। সেখানে অভিজাত পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের দেখা যায়।
কিন্তু আইনের মারপ্যাচে সেগুলো চলতে পারছে না। আলাপকালে লাউঞ্জের মালিকরা জানান, সিসা লাউঞ্জ চালানো যাবে কি যাবে না- তা নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, সিসা নিয়ে নতুন আইন অনুযায়ী ‘শূন্য দশমিক ২ শতাংশের বেশি নিকোটিন ও এসেন্স ক্যারামেল মিশ্রিত ‘ফ্রুট স্লাইস’ সহযোগে তৈরি সিসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর কম হলে তা নিষিদ্ধ নয়। অথচ বিদেশ থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ ফ্রুট স্লাইসে এসেন্স ক্যারামেলের পরিমাণ ৪-এর বেশি থাকে। সে কারণেই সিসা বারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সিসার নতুন আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাদের চাহিদামতো টাকা দিলে কোনো দোষ নেই। আর টাকা না দিলেই আইনে নিষিদ্ধ হয়ে যায় সিসা। বনানী এলাকার এক সিসা বারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক মাস ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন বিভিন্ন রকমের তথ্য দিচ্ছে। তাদের কথা অনুযায়ী আমরা বার বন্ধ রেখেছি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ওই ব্যবসায়ী দাবি করেন, ২০ হাজার টাকা করে নেওয়ার পরও তারা অভিযানের নামে আতঙ্ক ছড়ায়। তিনি বলেন, অভিযানের ভয়ে অনেকেই বারে আসতে চায় না। কারণ সিসা বারে অভিজাত শ্রেণিরাই আসেন। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাদকের এক কর্মকর্তা দুই লাখ টাকা দিলে নিকোটিনের পরিমাণ ২-এর কম দেখিয়ে দেবেন বলে টাকা দাবি করেন। অথচ টাকা দেয়ার পর অন্য কর্মকর্তা এসে ঝামেলা করে।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তাদের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা উৎকাচ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরের একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-র তফসিলভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক আইটেম সিসা। এ আইন নিয়ে হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছে। এটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিসা নিয়ে ধু¤্রজাল কাটবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। এ আইনের তফসিলে সিসাকে ‘খ’ শ্রেণির মাদক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই তালিকার ৪ নম্বরে ক্যাফেইনযুক্ত (শতকরা শূন্য দশমিক ১৪৫ ভাগ) তরল পানীয়ের পরই সিসার নাম যুক্ত করা হয়।
বারে গিয়ে সিসা সেবককারী তরুণ তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সিসাকে মাদক হিসেবে নয় বরং তারা অভিজাত্যের নিদর্শন হিসেবে সিসা ব্যবহার করে থাকে। পরিবারের কর্তারাও সিসার এই ব্যবহারকে খারাপ চোখে দেখছেন না। তবে সিসা আভিজাত্যের প্রতীক নাকি নেশা তা নিয়ে ধু¤্রজাল থেকেই যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।