পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হুন্ডির মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে পাঠাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু। এমনকি মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ নিতেন তিনি। মাদক সেবন ও কেনাবেচার সঙ্গেও জড়িত মঞ্জু। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন র্যাব কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মঞ্জুর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, বিপুল ইয়াবা ও গাজাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় দুপুর একটার দিকে টিকাটুলির নিজ কার্যালয় থেকে কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর দুনীতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে তিনি ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর দুনীতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। মামলা দায়ের করার পর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
তিনি বলেন, মঞ্জুর বিরুদ্ধে আগের দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া গত বুধবার তার বিরুদ্ধে আট কোটি টাকার চাঁদাবাজির একটি মামলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে তিনি মার্কেটে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে আসছিলেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে হুন্ডির মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি আইন বহির্ভূতভাবে কোনো অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে প্রেরণ করতে পারে কি-না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা তার কার্যালয় থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পেয়েছি। মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে। এছাড়া তিনি মাদক সেবন ও কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত তিনি। তার এসব অবৈধ কাজকর্ম আইন শৃংখলাবাহিনীর নজরে আসলে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয় থেকে র্যাব তাকে গ্রেফতার করা হয়। অস্ত্র ও মাদকসহ তার বিরুদ্ধে বিকালে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় তার গাড়ির চালক সাজ্জাদকে আটক করা হয়।
এত অভিযোগ থাকার পরও তাকে গ্রেপ্তারে এত সময় লাগলো কেন এমন প্রশ্নে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তাকে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না। গ্রেপ্তার পরবর্তী মামলা চালানোর মতো সাক্ষী থাকতে হবে। এসব কারণে আমরা যথাসময়ে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে পারিনি। কিন্তু এখন সঠিক সময় আসায় তাকে গ্রেপ্তার করেছি।
কাউন্সিলর মঞ্জু দেশের বাইরে কী পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আমরা এটা বলতে পারব না। সিআইডি এবং দুদক তদন্ত করবে। মূলত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলবাজির মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। যে বাসাটিতে কমিশনার মঞ্জু বসবাস করছেন সেটিও দখল করা বলে অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। তবে তার কয়টা বাড়ি আছে সে বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে র্যাব বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করেছে মঞ্জুর বিরুদ্ধে। তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানাবে র্যাব।
বাসায় অভিযান চলার সময় সুমি বেগম নামে এক নারী নিজেকে মঞ্জুর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকায় মঞ্জুর কেউ থাকে না। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে আমেরিকায় থাকে। মঞ্জু নিজেও নিয়মিত আমেরিকায় যাতায়াত করেন। মঞ্জুর মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আজিজুল হক দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গোলাপবাগে নিজের বাসায় থাকেন। আর মঞ্জুর বাসায় গাড়িচালক সাজ্জাদ থাকতেন। সেখান থেকেই সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে র্যাব। লে. কর্নেল বুলবুল বলেন, মঞ্জুর বৈধ কোনো আয় নেই। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিই তার অর্থের উৎস। সেই টাকা সে হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠায়।
মঞ্জুকে গ্রেফতারের পর আরও অন্তত অর্ধশত অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলাটি ছাড়াও আট কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে আরও দু’টি মামলা রয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। হাটখোলার ওই বাসায় অভিযানের সময় দেখা যায়, চারতলা ওই ভবনের সিঁড়ি, গ্যারেজ বেশ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। নিচতলায় কেউ নেই, দোতালায় তালা লাগানো। তবে তিনতলা ও চারতলা নিয়ে গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বেশ ঝকঝকে তকতকে। দামি টাইলস আর আসবাব দিয়ে প্রতিটি কক্ষ সাজানো। প্রতিটি ঘরের দেয়ালে সাবেক মন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মঞ্জুর ছবি। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও তার ছবি দেখা যায় এর মধ্যে। সুমি বেগম জানান, ওই বাড়ি নিয়ে মামলা চলছে। তবে কার সঙ্গে বা কী অভিযোগে মামলা- সে বিষয়ে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি। র্যাব-৩ কার্যালয়ের পাশেই ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের অফিস।
ব্যবসায়ীদের আনন্দ মিছিল
৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু আটক হওয়ায় রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করছেন। গতকাল বেলা ১২টায় রাজধানীর টিকাটুলিতে মঞ্জুর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব। র্যাবের অভিযান চলাকালীন টিকাটুলি এলাকায় মঞ্জুর কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে ব্যবসায়ীদের আনন্দ মিছিল করতে দেখা গেছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা ‘চাঁদাবাজ মঞ্জু নিপাত যাক, রাজধানী মার্কেট মুক্তি পাক। চাঁদাবাজ মঞ্জুর বিচার চাই ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর মঞ্জু দীরর্ঘদিন ধরে রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সবাই। রাজধানী মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, কাউন্সিলর মঞ্জু নিজেকে রাজধানী মার্কেটের অঘোষিত সভাপতি দাবি করতেন। কেউ দোকান ভাড়া নিলে, বিক্রি করলে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতেন। কিছুদিন আগে এসি লাগানোর কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজই করেননি। প্রায় ৯ বছর ধরে তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।