বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের কৃতিত্ব ছিল এই যে, এটি নতুন কিছু ছিল না। বরং মানবজাতির সৃষ্টি ও পৃথিবীতে তার আগমন যে ধারাবাহিকতার সাথে যুক্ত তারই সর্বশেষ অধ্যায় ছিল ইসলাম। যুগে যুগে সব নবী-রাসূলগণের দাওয়াত ছিল এ দীনেরই প্রতি।
প্রথম মানব হযরত আদম আ. থেকে অসংখ্য পয়গম্বরের মাধ্যমে আল্লাহর যে বাণী মানবজমিনে বপিত, অঙ্কুরিত ও বিকশিত হয়ে এসেছিল কালক্রমে তারই পরিপূর্ণ ও কালজয়ী রূপ নিয়ে দুনিয়াতে এসেছিল এই ইসলাম। শেষ নবী আরবের হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীনের প্রথম বাণী মানবজাতির উদ্দেশে মক্কার হেরা পর্বতে নাযিল হয় ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এক ঝুলন্ত বস্তু থেকে।’ অতীতের ধারা অনুসারে মহান সৃষ্টিকর্তা রব এক আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল নবীদের নিকট তাঁর বাণী নিয়ে আসা মহান ফেরেশতা বিশ^স্ত বার্তাবহ হযরত জিব্রাইল আ. দীর্ঘ ২৩ বছর দিনে-রাতে, ঘরে-বাইরে, সফরে-অবস্থানে, যুদ্ধে-শান্তিতে, অবসরে-ব্যস্ততায়, সংগ্রামে ও শ্রান্তিতে, নির্জনে-সমাগমে বার বার ওহী নিয়ে এসেছেন ইসলামের নবীর কাছে। ছয় সহস্রাধিক বাণী যাকে কোরআন আয়াত বলে আখ্যায়িত করেছে, মানে মহান আল্লাহ তাআলার একেকটি নিদর্শন। অনন্য ভাষা, ব্যঞ্জনা, চিত্রকল্প ও বর্ণনার নিদর্শন এ কোরআন মহান স্রষ্টার বাণী, সরাসরি তাঁর কালাম। যা সৃষ্টিজগতের লক্ষ-কোটি সৃষ্টির মতো নয়, সৃষ্টির অংশ নয়, এমনকি সৃষ্টিও নয়। অতুলনীয়ভাবে এ পবিত্র কালামসমগ্র সুরক্ষিত ও অবিকৃত গ্রন্থবদ্ধ হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে অলৌকিকভাবে বিশ^াসীদের স্মৃতির ফলকে সুরক্ষিত এ বিশাল ও মহান পবিত্র কালাম ইসলামের এক অসাধারণ শক্তি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রাপ্ত এক শ্রেষ্ঠ মুজেযা। যার তুলনা মানুষের ইতিহাসে আগে অথবা পরে কখনোই ছিল না। এই কোরআন ইসলামকে, ইসলামের নবীকে ও মুসলিম উম্মাহকে এমন এক অনন্য বিশিষ্টতায় সমুজ্জল করেছে যার কোনো তুলনা হয় না। বিকল্পও চিন্তা করা যায় না। এটি ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্ব, অনন্যতা ও মহানতম উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে। পূর্বেকার সকল নবী-রাসূলের নবুওয়তের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা সমাপ্ত করে দিয়েছে এই কোরআন। যেমন শেষ নবীর আগমন নবুওয়তের ধারাকে পরিপূর্ণ ও সমাপ্তি দান করেছে।
মানবজাতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন এর বিশদ আলোচনা আল্লাহ তাঁর কালাম পবিত্র কোরআনে করেছেন। এর পূর্ণতা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যম হিসাবে তিনি দান করেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্দর, সংক্ষিপ্ত ও ব্যাপক অর্থবহ বাণী। তথা হাদীসের বিপুল ভা-ার। যাকে ইসলামে বলা হয় জিব্রাইল কর্তৃক অপঠিত খোদায়ী ওহী। যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় বিবৃত মহান আল্লাহ পাকেরই বাণী। শুধু তাই নয়, পবিত্র কোরআন সংরক্ষণের পর মহান আল্লাহ তাআলার কুদরতী ব্যবস্থাপনায় ও মানবীয় প্রাকৃতিক পন্থায়ই এই হাদীস শরীফের বিশাল ভা-ারও ইসলামের অন্যতম উৎস হিসাবে পৃথিবীর বুকে সুরক্ষিত রয়ে গেছে। লাখো হাদীসের ভাষ্য ও বাণী এবং এর উৎসমূল ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা, কাজ ও স্বীকৃতি যখন সুন্নাহ নামে ইসলামকে নির্ণিত ও সুগঠিত করেছে তখন তাঁর সামগ্রিক জীবনচিত্রটি আখ্যায়িত হয়েছে পবিত্র কোরআনের বাস্তব নমুনা এবং ফলিত রূপ হিসাবে। এখানে মানুষের স্মৃতিপটে ও কাগজে-কলমে সুরক্ষিত কোরআন এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, বর্ণনা ও বিবরণ হাদীসে রাসূল এবং কোরআন-সুন্নাহর জীবন্ত রূপ ব্যক্তি মুহাম্মাদের অনুপুঙ্খ জীবন, কর্ম, অবদান ও আদর্শ সব মিলে ইসলামের সমন্বিত রূপ যা তিনি তাঁর নিজ হাতে তৈরি মুসলিম সমাজে তথা সাহাবায়ে কেরামের জীবনে বাস্তবায়িত করে অনন্ত কালের সকল দেশের, সকল অঞ্চলের, সকল ভাষার, সকল বর্ণের মানুষের জন্য সহজে পরিপালনীয় একটি জীবনবিধান হিসাবে বাস্তবে দৃষ্টান্ত কায়েম করে গিয়েছেন। মানব অস্তিত্বের, মানব প্রকৃতির ও মানবজীবনের এত উপযোগী আর কোনো ব্যবস্থা পৃথিবীতে হতে পারে না। কারণ এটি মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।