বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের মাঝে একটি শব্দ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। শব্দটি হল বিদআত। হাট-মাঠে, নগরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, বৈঠক-মজলিসের সর্বত্রই বিদআত শব্দটির ঢালাও ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এহেন অবস্থায় বিদআত কী এবং কেমন, তা জানা, বোঝা, অনুধাবন করা একান্ত দরকার। অন্যথায় বিদআতের প্রবল জোয়ারে দূর অজানায় ভেসে যেতে হবে। তখন না থাকবে মুসলিম নামধারীদের স্থিতি, বিরতি ও স্বীকৃতি, না থাকবে ধর্মীয় জীবনবোধের সঠিক পরিচিতি। সুতরাং নিজের জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য এমনকি দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলকামীদের উচিত বিদাআতকে চিহ্নিত করা এবং দ্বীন ও ঈমানের হেফাজত খোলাসা করা। অন্যথায় আমও যাবে এবং ছালাও হারাবে। সব হারিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে হা-পিত্যেশ করবে, তা যা-ই হোক না কেন, ইসলাম হবে না।
আসলে যে সকল রীতি-পদ্ধতি ইসলামে বিধিবদ্ধ সুন্নাতের বিপরীত, এরই নাম বিদআত। আভিধানিক অর্থে বিদআত হল প্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামে নতুন কথা, নতুন নিয়ম, নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় এমন কোনো নতুন কথা, নতুন কর্মকে দ্বীন ইসলামের অংশ বলে মনে করা, যার কোনো ভিত্তি বা প্রমাণ কোরআন হাদিসে অথবা উত্তম বলে সাক্ষ্য প্রদত্ত ৩ যুগে তথা সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কালে ছিল না। বিদআতসুলভ কর্মকান্ডকে ‘মুসহাদুল উমুর’ বলা হয়। স্মরণ রাখা দরকার যে, বিদআতের মূল অর্থ হল দ্বীন ইসলামে অভ‚তপূর্ব নতুন কোন কিছুর উদ্ভব ঘটানো। শরীয়তে সুন্নাতের বিপরীতে বিদআত শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ হয়ে থাকে। সুতরাং তা নিন্দনীয় ও বর্জনযোগ্য। ফাতহুল বারি : খন্ড ৪, পৃ. ৩১৮।
একথা সুবিদিত যে, কোন কাজ বা আমল বিদআত হওয়ার জন্য দুটি বিষয় উপস্থিত থাকা আবশ্যক। প্রথমটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. হতে বা সালফে সালেহীন হতে উদ্ধৃতি ছাড়া কোন নতুন কাজ বা কথার আবিষ্কার করা। আর দ্বিতীয়টি হল, সেই নতুন কাজ বা বিষয়কে দ্বীন-ইসলামের অংশ জ্ঞান করা। যেখানে এ দুটি বিষয়ের উপস্থিতি দেখা যাবে, তা বিদ‘আত নামে পরিচিত হবে। কিন্তু কোনো কাজে যদি মাত্র একটি বিষয় পাওয়া যায়, অপরটি পাওয়া না যায় তাকে বিদআত বলা যাবে না।
অনুরূপভাবে দ্বীন-ইসলামের সহযোগিতা, দ্বীন-ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি এবং দ্বীন-ইসলামের সংরক্ষণের জন্য কোন নতুন কাজ করা হলে এবং তাকে দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত অপরিহার্য (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) কোন বিষয় বলে একীন, বিশ্বাস ও ধারণা না করলে, তা ইহদাস ফিদদীনের মধ্যে তথা বিদ‘আতের মধ্যে গণ্য হবে না। যেমন দ্বীন-ইসলামের প্রচার-প্রসার ও হেফাজতের লক্ষ্যে মক্তব-মাদরাসা বা কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও স্থাপন করা মূল দ্বীন-ইসলাম নয় বরং ইসলামের হেফাজতের মাধ্যম। কাজেই তা বিদ‘আত নয়। এটার সাথে আমরে তায়াব্বুদী (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) এর কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং অনুরূপ কাজকে বিদ‘আত বলা অজ্ঞতারই নামান্তর মাত্র। তবে, এমনটা মনে করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় যে, দ্বীনি ইলম শুধুমাত্র মসজিদে চর্চা করাই সুন্নাত। আর কোন সময় এর ব্যতিক্রম ছিল না। বরং ইসলামের প্রাথমিক শতাব্দীতে তো সকল স্থানের দ্বীনি ইলম চর্চা ও জ্ঞান আহরণের আয়োজন হতো। চাই তা মাদরাসা হোক, চাই তা মসজিদ হোক, গৃহে হোক, সফরে হোক, এমনকি বাজারেও দ্বীনি ইলমের চর্চা হতো।
এরই ধারাবাহিকতায় কেউ ছাত্র শিক্ষক সংগ্রহ করে তাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করলে, প্রাচীর নির্মাণ করলে, ভিন্ন ও উন্নত ব্যবস্থাপনার জোগার করলে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে বলে মনে করা নির্ঘাত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।