বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নবী করিম সা. বলেন, নৈতিক ও মানবিক চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তরসমূহের পূর্ণতা বিধানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।
প্রিয় নবীকে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আপনি মহান এক নৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। (আল কোরআন)। মূলত পবিত্র কোরআন পুরোটাই একটি জীবন্ত নৈতিক ও মানবিক আদর্শের কিতাব। নবী করিম সা.-এর ওফাতের পর একদল সাহাবি নবীজীর সহধর্মিণী হযরত আয়েশার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, নবীজী কেমন ছিলেন। তখন হযরত আয়েশা তাদের উল্টো প্রশ্ন করেন, তোমরা কি কোরআন পড়নি? কোরআন শরীফই ছিল তার নীতি ও আদর্শ। তার উন্নত আচরণ। আল্লাহর হাবিবের এ উন্নত বৈশিষ্ট্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। এরপর ব্যবহারিক জীবনে কোরআন ও সুন্নাহর কথা সীরাতুন্নবীর সৌরভ ধারণ ও মানুষের সমাজে তা বিতরণের মহান কাজটি করেছিলেন ইসলামের সাধক মনীষীগণ।
হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ. এ মহান সাধকদেরই অন্যতম পথিকৃত। আল্লাহর রাসূলের মনন ভাবনা, নৈতিকতা ও জীবনবোধ হযরত আবু বকর রা.-এর শিষ্যদের মাধ্যমে আরবের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত ইয়ামেন, সিরিয়া ও আফ্রিকার উত্তর অঞ্চলে তারা সিদ্দীকিয়া কর্ম পদ্ধতিতে মানুষের আত্মার জগতে বিপ্লবের সূচনা করেন। কুফা, বসরা, বাগদাদ হয়ে খোরাসান, বলখ বৃহৎ তুর্ক ও মধ্য এশিয়া হযরত আলী রা. ও হযরত কুসম ইবনে আব্বাস রা. এ দুই আহলে বাইতে নবীর শেখানো মনোবিপ্লবের ভক্ত হয়ে ওঠে।
হযরত হোসাইন শহীদ হয়ে গেলে ইমাম আলী ইবনে হোসাইন রা.-এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব পৃথিবী দ্বীনি সংস্কৃতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে। তাদেরই উত্তর পুরুষ হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ.-এর ধারার নাম কাদেরীয়া তরিকা। এক শতাব্দীর মাথায়ই মধ্য এশিয়ায় এই নৈতিক ও আদর্শিক বিপ্লব ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে। কাদেরিয়া তরিকা ছিল সিদ্দিকীয়া ও আলভিয়া কর্মপন্থার মিশ্র রূপ। এ সময় পৃথিবীর দুই সুন্দরতম সভ্য ও উন্নত নগরী বোখারা সমরকন্দ সুখ্যাতির মধ্যগগনে।
এখানেই ইমাম হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর জন্ম। এ শহরেই জন্মগ্রহণ করেন, হাদিস শাস্ত্রের বিস্ময় ইমাম মোহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী রহ.। বিশ্বব্যাপী যিনি ইমাম বোখারী নামে খ্যাত। সহিহ বোখারীর সঙ্কলক। ১৪৪১ হিজরী চলছে। কিছুদিনের ব্যবধানে পূর্তি হবে হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর ওফাত ৭০০ বর্ষপূর্তি। বিশ্বব্যাপী নকশবন্দী পদ্ধতির ধারকরা কিছুটা ব্যাকুল। এ ছাড়া বিখ্যাত আর দু’টি তরিকা চিশতীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া। মোজাদ্দেদীয়া মূলত নকশবন্দীয়ার চ‚ড়ান্ত সংস্করণ। বৈরী পরিবেশে পরাশক্তির সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে ইসলামকে তার নিজস্ব শক্তিতে বিজয়ী করার আধ্যাত্মিক কারিশমা এই তরিকা।
বাংলাদেশে হাজার বারশ’ বছর ধরে ইসলামের যে কাজকর্ম এর ৭০০ বছর জুড়েই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, নকশবন্দী শায়খরা। লখেœৗতি, গৌড়, পান্ডুয়া, মহাস্থান, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, সোনারগাঁও থেকে চাটগাঁ, সিলেট সবটুকু অরণ্য থেকে পুষ্পকাননে রূপান্তরিত করেন এরা। ১২৭০ এর আগে বোখারা থেকেই ঢাকায় আসেন শায়েখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা বোখারী রহ.। বাগদাদের ইবরাহীম দানেশমন্দ রহ.। তারা ঘুমিয়ে আছেন এই বাংলায়। গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ রহ. ও তার প্রধান বিচারপতি কাজী সিরাজ যেখানে। সোনারগাঁয়ের সাহেব বাড়িতে। সুলতান দু’য়েক কিলোমিটার দূরে খোলা গোরস্তানে। হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর ৭০০ বছর পূর্তিতে বিশ্বের অগণিত প্রজ্ঞা প্রেম বিপ্লব সাধনা ও সংগ্রামের সবক নেয়া লোকজন ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ছুটে আসছেন বোখারায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।