Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গৃহকর্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, স্বামী পলাতক

মোহাম্মদপুরে শিশু গৃহকর্মী হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম


রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শিশু গৃহকর্মী জান্নাতীকে (১২) হত্যার ঘটনায় গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকার একটি আদালতে তিনি এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে গত মঙ্গলবার শিশুটিকে মারধর করার কথা জানান তিনি। একপর্যায়ে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত লেগে অজ্ঞান হয়ে যায় শিশুটি। মৃত জান্নাতীর বাড়ি বগুড়ার গাবতলী এলাকায়। তার বাবার নাম জানু মোল্লা।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত আবদুল আলীম বলেন, রোকসানা পারভিন হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বাীকারোক্তিতে তিনি শিশুটিকে মারধর করার কথা বলেন। মারধরের একপর্যায়ে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়। তার মারধরের কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয়Ñ মোহাম্মদপুর থেকে ১২ বছরের এক কিশোরীকে নিয়ে আসা হয়েছে। তখন এক অফিসারসহ আমি নিজে গিয়ে শিশুটির লাশ দেখে আসি। তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয়। পরে শিশুর পরিবারকে খবর দেই। তারা বৃহস্পতিবার ঢাকায় এলে ওইদিন দুপুরে জান্নাতীর বাবা জানু মোল্লা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। মামলার পর তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
ওসি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রোকসানা পারভিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার কথা জানান। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার আবেদন করেন। আদালত গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর তার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করেন। এ মামলার অপর আসামি রোকসানা পারভিনের স্বামী পানি সাঈদ আহমেদ পলাতক আছেন। সাঈদ পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।
ওসি আরও বলেন, আসামিকে রিমান্ডে নেয়ার আগেই তিনি স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হন। তার স্বীকারোক্তি দেয়ার পর আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলায় অপর আসামি রোকসানা পারভিনের স্বামী সাইদ আহমেদ পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তেজগাঁও বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোকসানা বলেন মারধরের পর জান্নাতী অজ্ঞান হয়ে রান্নাঘরে পড়ে যায়। ওই অবস্থাতেই দুই ঘণ্টার মতো ঘরে পড়েছিল। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানায় আগেই সে মারা গেছে। রোকসানা পারভিন স্বীকারোক্তিতে তার স্বামীর সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তথ্য দেননি। আরও অনেক কিছুই চেপে গেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এর আগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা বলেন, মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এ দিকে, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, জান্নাতীর শরীরের নতুন-পুরনো অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। শিশুটি মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে ধারণা করছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গৃহকর্মী জান্নাতীকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই মারা গেছে জান্নাতী। শিশুটি স্যার সৈয়দ রোডের একটি ৬ তলা ভবনের এক তলায় প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদের বাসায় কাজ করতো।
গৃহকর্তা পিরোজপুরে থাকলেও বাড়িতে তার স্ত্রী রোকসানা পারভিন, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ও বোন থাকতেন। তবে ঘটনার সময় সাঈদ আহমেদ বাসায় ছিলেন। গত রোববার থেকে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পলাতক

২৭ জানুয়ারি, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ