পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ফেনী নদীর পানি চুক্তি। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাহমান নদী হচ্ছে ফেনী নদী। যা পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির মধ্যবর্তী ‘ভগবান টিলা’ নামক পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ভারত প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত এ নদীকে কেটে ত্রিপুরার ইজেরা গ্রামে প্রবেশ করালেও এ অংশের প্রায় ১৭ একর জমি অমিমাংসিত।
এ জমি বাংলাদেশের হলেও ভারত অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে তা দাবি করে আসছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি শহর সাবরুমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অজুহাতে ২০০২ সাল থেকে ভারত ফেনী নদীর নোম্যান্সল্যান্ডে পাম্প বসিয়ে পানি তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয়দের মতে, ৩৪ থেকে ৩৬টি পাম্প দিয়ে ফেনী নদীর পানি তুলছে ভারত। ৩৪টি পাম্পের হিসাবে ধরলে ভারত পানি তুলছে ৬৮ কিউসেক আর ৩৬ টি পাম্পের মাধ্যমে পানি তুললে দাড়ায় ৭২ কিউসেক। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে, বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে পানির প্রবাহ থাকে ৮ থেকে ১০ হাজার কিউসেক আর শুষ্ক মৌসুমে তা ৫০ কিউসেকে নেমে আসে। তবে ভারতের মতে, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে ১০৯ কিউসেক।
গত ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ফেনী নদীর পানি চুক্তি স্বাক্ষরের পর খাগড়াছড়ির রামগড়, ফেনী জেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাইর কৃষকদের মাঝে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মিরসরাই ও রামগড় ছাড়াও ফেনীর ৬টি উপজেলায় ফেনী নদীর পানি দিয়েই প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদিত হয়। পানি প্রবাহ কম থাকায় প্রতি বছরই অনেক ফসলি জমি অনাবাদি থাকে। তাই ভারত পানি তুলে নিলে এবার এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ।
ফেনী নদীর পানির প্রধান উৎস হলো মুহুরী প্রকল্প। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সেচ প্রকল্প অবস্থিত। ফেনী নদীর ভাটিতে ‘ফেনী নদী, মুহুরী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীসহ যৌথ প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট মুহুরী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে সিডা, ইইসি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় জাপানের সিমুজু কোম্পানি এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১৯৮৫-৮৬ সালে মুহুরী প্রজেক্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফলে ২০,১৯৪ হেক্টর ফসলি জমি সেচ সুবিধা পায়। আর সম্পুরক সেচ সুবিধা পায় ২৭,১২৫ হেক্টর ফসলি জমি। মুহুরী সেচ প্রকল্পের সুবিধাভোগি কৃষক আবুল হোসেন, আবদুল করিম, জলিল, রহমত ও হাসেম আলি জানান, তারা শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর পানির উপর নির্ভর করেন।
এছাড়া ফেনী নদীর দু’পাশের চরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার মাছ চাষ প্রকল্প। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ২৫ হাজার জেলে পরিবার। এ নদীর বঙ্গোপসাগর থেকে রামগড় পর্যন্ত ৮০.৪৫ কিলোমিটারে সারা বছর ধরে পানি থাকে। রামগড়ের কৃষক সুজন চাকমা, অনিল দশাই ও সুনিল কুন্ডু জানান, তাদের অংশে মাত্র ৩টি পাম্প বসানো হয়েছে। এগুলি দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানো হয়। পাহাড়ি এলাকা হবার কারণে এখানে পানি তুলে চাষাবাদে অনেকের আগ্রহ নেই। আবার সরকারিভাবে পানি তোলার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ না থাকায় এখানকার কৃষকরা ফসল উৎপাদন ও ফেনী নদীর পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সুজন’র ফেনী জেলা সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ফেনী নদীর সাথে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার সম্পর্ক। এ পানি তুলে নিলে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেবে। ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফেনীর নদীর পানি চুক্তি দেশ বিক্রির শামিল। এ নদীতে ভারতের কোন অধিকার নেই, শেখ হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এ চুক্তির নামে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম বলেন, এমনিই শুকনো মৌসুমে ফেনী নদীতে পানি সংকট দেখা দেয়। ভারতকে পানি দিতে হলে নদীটির খনন কাজ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করলে হয়তো প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলি মো. জহির উদ্দিন বলেন, এটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। এ ব্যাপারে ফেনী অফিসে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।