বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ মুসল্লি নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেইসবুকে মহানবীকে (সা.) কটুক্তির প্রতিবাদে ডাকা ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সংঘর্ষে দশ পুলিশ সদস্যও আহত হয়। পুলিশের গুলিতে মুসল্লিদের নির্মম প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। নবীপ্রেমিক প্রতিবাদী জনতার ওপর প্রাণঘাতি তাণ্ডবে ক্ষোভে ভাসছে ফেইসবুক। ‘দোষী’ পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের বিচারের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে এই সংঘর্ষের ঘটনা। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়। তবে পুলিশ দাবি করেছে, এক যুবকের হ্যাক হওয়া আইডি থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বক্তব্য ছড়ানোর ঘটনা থেকে এ পরিস্থিতির সূত্রপাত।
সাধারণ জনগণের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘বিদেশে অনেক বড় বড় বিক্ষোভ পুলিশকে একটি বুলেট খরচ না করেও ধৈর্য্যসহকারে মোকাবেলা করতে দেখি। সরকারকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে।’’
ক্ষোভ জানিয়ে কাজী হাফিজ লিখেছেন, ‘‘আইডি হ্যাক করে এ ধরনের উত্তেজনা ছড়ানো অস্বাভাবিক নয়। তবে উত্তেজিত জনতা একটি বিক্ষোভ মিছিল করলেই কী রাষ্ট্র নষ্ট হয়ে যেতো? যেকোনো সমাবেশ সম্পর্কে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিই এ অহেতুক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবেই।’’
মনির হোসেন লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে কারা? কেনই বা ফেসবুকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মনে আঘাত দিয়ে পোস্ট করতে হবে? কাদের স্বার্থ এখানে জড়িত? স্বাধীনতা শেষ। এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা কর বাঙালি জনতা।’’
‘‘যেসব পুলিশ সদস্য অতি উৎসাহী হয়ে নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার দাবি করছি’’ লিখেছেন জুয়েল হক।
মমিনুল ইসলাম দাবি জানিয়েছেন, ‘‘অবিলম্বে পুলিশ প্রশাসনে থাকা ইসলাম বিদ্বেষী ও বিদেশী উগ্রবাদী শক্তির দোসরদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হোক। ভোলায় যেসব অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্য মিনিমাম সহনশীলতা না দেখিয়ে তৌহিদি মুসলিম জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি তাণ্ডব চালিয়েছে তারা মূলত গোটা মুসলিম জাতির বুকে গুলি চালিয়েছে।কটুক্তির ঘটনা ভুয়া(হ্যাকিং) হোক আর যাই হোক এখানে তো সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবুও কেন ইমানি দাবি জানাতে আসা মুসলিম জনতার ওপর গুলি তাণ্ডব-হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো? অবশ্যই জবাব দিতে হবে।’’
তৌফিক রহমান লিখেছেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে, কই বিচার করবে! তা না করে, সাধারণ জনগণের প্রতি গুলি করেছে৷ এখন ফেসবুক হ্যাক হওয়ার নাটক করে, প্রকৃত ঘটনা বানচালের চেষ্টা৷’’
‘‘ন্যায়সঙ্গত স্বার্থে আঘাত আসলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হতে পারে। সরকারের নজরে নেওয়ার জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারা তাদের নাগরিক অধিকার। পুলিশ কেন গুলি করতে গেল?’’ লিখেছেন ফয়সাল কবির।
তোফাজ্জাল হোসাইনের মন্তব্য, ‘‘আবরার ফাহাদ হত্যার মোড় ঘোরানোর উদ্দেশ্যে হয়তো এটা করা হয়েছে। উদ্দেশ্যকারীরে তাহলে এবার গ্রেফতার করা হোক।’’
তুহিন লিখেছেন, ‘‘অমানুষরাও এমন কাজ করতে পারেনা। আলহামদুলিল্লাহ ৯২% মুসলিমের দেশে আল্লাহ ও নবীকে নিয়ে কটুক্তির বিচার না থাকলেও আল্লাহ ও নবীকে ভালোবেসে প্রাণ দেয়ার মতো শ্রেষ্ঠ মানুষেরা আছে। অবিলম্বে হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। নয়তো বুঝে নেবো এদেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণের একদমই বাহিরে।’’
মো. মিলন জামান লিখেছেন, ‘‘অমুসলিমদের অনুষ্ঠানে পুলিশ পাহারায় সরকার ১০০ ভাগ সুরক্ষিত ব্যবস্থা করেছে আর নবীর অপমানের বিচার চাওয়ায় ৯২% মুসলিম দেশে মুসলমানের উপর গুলি। আর কত জুলুম দেখবো?’’
‘‘এটা বলা তো দূরের কথা ভাবতেও অবাক লাগে যে মুসলমান শাসিত বাংলাদেশে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করার বিচার চাইতে গিয়ে কাউকে জীবন দিতে হয়। যারা গুলি করেছে তারাও মুসলমান আর যারা অনুমতি দিয়েছে তারাও মুসলমান।আফসোস আমরা মুসলমান জাতি’’ পরিতাপের সাথে লিখেছেন হোসেন মিঠু।
মুহাম্মাদ কাশেম লিখেছেন, ‘‘পুলিশের একটা ধর্ম হয়ে গেছে, মুসলিমরা কোন আন্দোলন করলে তাদের লাটিচার্জ, গুলি করা লাগবে। আচ্চা ওরা কি আমাদের টাকায় চলে নাকি নাস্তিকদের টাকায়? শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি ওরা কোন সাহসে চালায়?’’
সাইফুল ইসলাম সুমন লিখেছেন, ‘‘ধিক্কার জানানোর ভাষা জানা নেই! কী আশ্চর্য! প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটুক্তি করবে আমরা প্রতিবাদ করতে পারবোনা? আমাদের কি কোনো স্বাধীনতা নেই মুসলিম হিসেবে? অথচ এদেশের ৯০ ভাগ মুসলিম!’’
শরিফুল ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী কাদের স্বার্থ রক্ষা করে? জনগণের টাকায় কেনা বুলেট দালালী করার জন্য নয়? প্রশাসনকে বলবো, অবিলম্বে হামলাকারী পুলিশদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুন।’’
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভর নিজের ছবিসংবলিত ফেসবুক আইডি থেকে আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে গালাগাল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। যাদের মেসেজ পাঠানো হয়, তারা এর স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দিলে লোকজন প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় তাঁর আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন। এ সময় পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব চন্দ্রকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাঁর কথা ধরে পটুয়াখালী থেকে আরেকজনকে গতকাল শনিবার আটক করে।
বিপ্লব চন্দ্রের বিচারের দাবিতে গতকাল সকাল, দুপুর ও বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা শহরে, কুঞ্জেরহাট বাজারে ‘সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। একই দাবিতে আজ সকাল নয়টায় বিক্ষোভের ডাক দেয় তৌহিদী জনতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।