Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেমির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া ফুটবল

মোঃ জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণে ক্রিকেটের অবস্থান শীর্ষে এটা নিয়ে কোন দ্বিমত থাকবার কথা নয় কারো। এদেশে ক্রিকেটের প্রতি যে আবেগ, উচ্ছ¡াস, আনন্দ-বেদনার যে রেশ জনগনের মাঝে দেখা যায় অন্য কোন খেলার প্রতি ততটা দেখা যায় না। সেই আবেগ আর ভারোবাসার পূঁজি নিয়েই মাশরাফি-সাকিবরা আর বিশ্ব ক্রিকেটে লাল-সবুজের পতাকা উড়াচ্ছে স্বগৌরবে। এই ক্রিকেটের উত্থানও কিন্তু এক দিনে হয়নি। অনেকের প্রচেষ্টার ফলশ্রæতিতে আজকের এই অবস্থান। তারমধ্যে একটি নাম বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোর। এই বিদেশির নাম আজও উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধাভরে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু শিখিয়েছেন একজনই-তিনি হোয়াটমোর।

জেমি ডে ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। ফুটবলের তার অর্ন্তভুক্তি যেন আমূল পাল্টে দিয়েছে দলের। পারফরমেন্স দিয়ে তিনি মুগ্ধ করেছেন দেশের মানুষদের। একাগ্রতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিকে নৈকট্য লাভ করেছেন খেলোয়াড়দের। জাতীয় দলের খেলোযাড়দের ফিটনেসে আগ্রহী হওয়া, ভালো পারফরমেন্স করা কিংবা আত্মবিশ^াসে বলীয়ান হওয়ার মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন এই ৩৯ বছর বয়সী ইংলিশ কোচ।

ডেভ হোয়াটমোরের মতো জেমি ডেও স্বপ্ন দেখেন একই আঙিকে। পেতে চান সাফল্য, কারন তিনি বিশ^াস করেন দল জয়ে ফিরলে আগ্রহী হয় দর্শকেরা। এগিয়ে যাওযার সম্ভাবনাও তৈরি হয় প্রবল, ‘যেকোন খেলায় জয় পেলেই সবাই চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে মনযোগী হয় এবং ফলো করে। বাংলাদেশে ফুটবলকে আমি ক্রিকেটের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় মনে করি। কিন্তু একটা সময় যখন ক্রিকেটের সমর্থন বাড়ল, তখন বিনিয়োগ ও স্পন্সরশিপও আসতে শুরু হল। ঠিক তখনই ক্রিকেট বহুদূর এগিয়ে গেল।’ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সবচেয়ে বড় খেলা ক্রিকেট। বাস্তববাদী কোচ জেমি ডে মানছেন তা-ও। কিন্তু তিনি ফুটবলকে নিয়ে সম্ভাবনা দেখেছেন ক্রিকেটকে ছাড়িয়ে যাওয়ার, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেট সবচেয়ে বড় খেলা হিসেবে স্বীকৃত, স্থানীয়ভাবে এর পরিধিও বিশাল; কিন্তু এরচেয়ে বিশালাকার ধারণ করার সম্ভাবনা আছে এদেশের ফুটবলের।’

এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে ডের সম্পর্ক মাত্র বছরের চেয়ে কিছু বেশি। তবে এই স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই এদেশের মানুষের মধ্যে এখনও যে ফুটবলপ্রীতি আছে তা ঠিকই বুঝেছেন এই ইংলিশ, ‘তারা ফুটবল পছন্দ করে, কিন্তু সাফল্যের যে স্বাদ তা খুব একটা পেয়ে ওঠেনি। যা প্রভাব ফেলেছে খেলায়, মাঠের দর্শক উপস্থিতিতেও। দেশে তো বটেই, বাংলাদেশের বাইরেও আমি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখেছি। সেখানে সম্ভবত দর্শক বিশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজারের মতো হয়। গত কিছু দিন ধরে আমাদের ফুটবলেও ত্রিশ-চল্লিশ হাজারের কাছাকাছি দর্শক হচ্ছে।’

গত বছরের মে মাসে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর হোটেল রুমের অপর্যাপ্ততা, ট্রেনিংয়ের অপ্রতুলতা, অনেক সময় গাড়ির ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকায় উবারে করে ক্লাব থেকে বিমানবন্দরে যাওয়াসহ বাংলাদেশ ফুটবলের নানাবিধ সমস্যা দেখেছেন কোচ। কিন্তু এতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কোন ত্রুটি দেখছেন না তিনি, ‘এখানে বাফুফের কোন ত্রুটি দেখছি না। তারা বলছে সবকিছু সঠিকভাবে চলছে, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এটা বিরক্তিকর হলেও পিছু ফিরে তাকালে অবশ্য হাসি পায়।’

জয়ের অভ্যসই যাদের ছিল না, সেই বাংলাদেশই এখন শিখেছে লড়তে। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরমেন্স অতিরঞ্জিত না হলেও চোখ ধাঁধানো। ভারতের মাঠে তাদেরকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে খেলা। শেষ সময়ে গোল না হলে জয় নিয়েই ফিরতে পারতো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তা হয়নি। তাতেও আফসোস নেই, আছে আশা। তার আগের ম্যাচে আগামী বিশ^কাপ আসরের আয়োজক কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে গেলেও তা থেকে প্রাপ্তি ছিল অনেক। ফিনিশিংয়ে দুর্বলতা না থাকলে হয়তো কাতারের বিপক্ষেও জয় নিয়েই ফিরতে পারতো বাংলাদেশ। একসময় এদেশের ক্রিকেট দলও এমন অনেক ভুল করতে করতেই শিখেছে। তাদের সময় দেয়া হয়েছে, শেখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ছিল পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। তখনকার ক্রিকেটে যে সময়, সুযোগ, সুবিধা দেয়া হয়েছে তা যদি ফুটবলেও দেয়া হয় একসময় ফুটবলেও হয়তো অধিপত্য করবে বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশে উড়বে বাংলাদেশের পতাকা।

বাংলাদেশ ফুটবলে স্বদেশী কোচ আবদুর রহিম থেকে শুরু করে ব্রাজিলিয়ান কোচ ডিডো, ইতালিয়ান কোচ ফাবিও লোপেজ, স্প্যানিশ কোট গনজালো সানটেজ মরিনো অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ডসহ মোট ৩১জন কোচ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু ক্রিকেটের ডেভ হোয়াটমোরের ছায়া দেখা গেছে শুধূ মাত্র জেমি ডের মাঝেই। তার মতো দায়িত্বশীল কোচ যতদিন আছেন, আশা করা অমূলক হবে না। বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে টানা দুই হারের পর প্রথম ড্রয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ ড্র করল দল। বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে পেলো প্রথম পয়েন্টও। এখানেই আশা দেখছেন বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন এই স্বপ্নদ্রষ্টা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ