বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সভ্যতার ইতিহাসে স্বভাবতই আজকের এ সময়টিকে (একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশক) মানবজাতির উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠ সময় দাবি করা উচিত। কারণ অতীতের ভুলগুলো শুধরে অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ মানুষ তাদের বর্তমানটিকেই সবচেয়ে সুন্দর করে সাজাবে যুক্তি তাই বলে। কিন্তু আমরা যারা ইসলামের ভক্ত আর আমাদের যাদের চোখে আধুনিক বিশ্বদর্শনের রঙিন চশমা নেই তারা খোলা চোখে দেখে বিস্মিত না হয়ে পারি না যে, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের সময়কার পৃথিবী ও মানবসভ্যতা যে কঠিন সময় পার করছিল, মানবতা সবদিক দিয়ে যেরকম জাহান্নামে পতিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল, বলতে খুবই লজ্জা ও দুঃখ হয় এবং সত্যি করে বলছি যে, বলতে মোটেও দ্বিধা হয় না যে, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের এবং তাঁর কর্মসাধনার সূচনালগ্নের সেই ঐতিহাসিক অন্ধকার পৃথিবীর তুলনায় যেকোনো বিচারে আজকের পৃথিবী লক্ষ কোটি গুণ বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অতুলনীয় নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব, চরিত্র মাধুর্য ও সৃষ্টির সেরা উত্তম আচরণ তাঁর সীরাত ও সুন্নায় ভরপুর। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যার যাদুল মাআদ এ বিষয়ে একটি অনন্য কিতাব। পবিত্র কোরআনকেও হযরতের বিশ্বাস, চেতনা, নীতি, চরিত্র ও আচরণের মূল নির্দেশিকা বলে আখ্যায়িত করা হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও বিশে^র প্রতি তাঁর যে বার্তা সেটি বিশ্বমানবতার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ও চিরন্তন আদর্শরূপে প্রমাণিত। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, উন্নততর নৈতিকতা, সমৃদ্ধতম আধ্যাত্মিক অবস্থা ও সর্বোত্তম মানবিক গুণাবলি যদি উম্মতের কারও মধ্যে বিকশিত হয়ে থাকে তা হলে তা হযরতের প্রধান সাহাবী হযরত সিদ্দীকে আকবর রাযি. এর জীবনে দেখতে হবে। খোদাভীতি ও নবীপ্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা হযরত সিদ্দীকে আকবর রাযি. আল্লাহর দীনের অখন্ডতা ও সুরক্ষায় যে ঐতিহাসিক সাহসিকতা, ত্যাগ ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। হযরত ওমরের শাসনামলের মতো গণমুখী, জনপ্রিয়, কল্যাণকর, নাগরিক অধিকারের চরম উৎকর্ষতায় পূর্ণ শাসন মানব ইতিহাসে বিরল। আরবী উৎস কিতাবাদি ছাড়া শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবীর ইজালাতুল খফা, মাওলানা শিবলী নোমানীর আলফারুক ও আধুনিক আরবী ইতিহাসবিদের সংকলন আলকাযা ফী আহদি ওমর থেকে আগ্রহীরা মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন।
জাহেলি আরবদের বিশ্বাস, চেতনা, চরিত্র ও মনোজগতে সংঘটিত নতুন বিপ্লবের অব্যবহিত পরপরই দশ বছর হযরত ওমর মানবসভ্যতার যে রকম বহুমুখী দিক-নির্দেশনামূলক নেতৃত্ব দান করেছেন এর চেয়ে উত্তম ও নিখুঁত নেতৃত্বের উপমা মানব ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ নবুওয়তি ভাবধারা অবলম্বনে খেলাফতি শাসনব্যবস্থা এমন সুষ্ঠু আঙ্গিকে আর কবে কে পরিচালনা করেছে? পৃথিবীর সব রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও গবেষক আন্তরিকতার সাথে শ্রেষ্ঠ পথ ও পদ্ধতি তালাশ করলে তাদের সকলের অনুসন্ধানের সব পথ নিঃসন্দেহে এসে মিশবে হযরত ওমর রাযি. এর শাসনযুগে। এসব বিষয়ে ইসলামের ভক্ত ও অনুসারী হিসাবে একজনের বক্তব্যই যথেষ্ট মনে না হলে যে কেউ নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল অমুসলিম লেখকদের হন তিনি প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের বই মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখতে পারেন। হযরত ওমর রাযি. এর ব্যক্তিগত সততা, স্বচ্ছতা, জনগণকে দেয়া বাকস্বাধীনতা, নাগরিকদের জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা, নিজ ব্যক্তি, পরিবার ও স্বার্থের বিষয়ে কঠোর নৈতিক অবস্থান, জনগণের দৈনন্দিন খোঁজ-খবর, ছদ্মবেশে রাতে নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার নীতি, জনস্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ, শাসকদের ওপর কঠোর নজরদারি, দুর্নীতি ও অবহেলা প্রতিরোধ, জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী শোষণ ও বাঞ্ছনার বিরুদ্ধে জিহাদ কোন দিকটি এমন রয়েছে যে দিকে তার প্রতিভা ও অবদান শ্রেষ্ঠতর নয়। তার মতো উঁচু দরজার মুত্তাকী দরবেশ ও খোদাভীরু, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব কি পৃথিবীর সব ধর্ম, দর্শন, সাম্রাজ্য, সমাজ বা আদর্শ মানবজাতিকে আর একটিও দিতে পেরেছে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।