বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলোর মধ্যে হযরত মুসা (আ.) এর যুগে জালেম অত্যাচারী বাদশাহ ফেরাউনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহর নাফরমানিতে সে এতই সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে, এক পর্যায়ে নিজেকে বড় রব ‘আনা রাব্বুকুমুল-আলা’ বলেও দাবি করেছিল। আল্লাহর অব্যাহত নাফরমানির কারণে সে ও তার কিবতি জাতি বারেবারে আজাবে এলাহির শিকার হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়। এ প্রাচীনতম জাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার নির্মম কাহিনী কোরআনে বিভিন্ন অঙ্গিকে ব্যক্ত হয়েছে। হযরত মুসা (আ.)-এর তবলীগ প্রচারকে বারবার অমান্য এবং তার বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। আল্লাহ তালাও তাদের পরীক্ষার জন্য নানা আসমানি বালা নাজেল করতে থাকেন এবং সংশোধিত হওয়ার জন্য বারেবারে সময়ও দিতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্ষন্ত তারা নীলনদে ডুবে ধ্বংস হয়। তাদের হঠকারিতার নির্মম নিদর্শন ফেরআউনের লাশ মিসরে অক্ষত থাকা। এ কথা প্রমাণিত যে যখন ফেরাউনের কিবতি জাতি কোনো বিপদ আপদের শিকার হত, হযরত মুসা (আ.)-এর নিকট এসে দোয়া প্রার্থনা করত, যাতে তার দোয়ায় বালা-বিপদ কেটে যায়। মুসা (আ.)-এর দোয়ায় তারা বিপদমুক্ত হয়ে ফের আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু একই সময় এই বিপদ হতে মুসা (আ.)-এর বনি ইসরাইলও মুক্ত থাকত, তাদের কোন ক্ষতি হত না। এ পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে কোরআনে বলা হয়েছে ‘অতঃপর, আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক এবং রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। (সূরা আরাফ, আয়াত-১৩৩) এর পূর্বের আয়েতে বলা হয় : ‘এবং নিশ্চয় আমি ফেরাউন বংশকে দুর্ভিক্ষ ও ফল-শস্য হানির দ্বারা ধৃত করেছিলাম, যেন তারা হৃদয়ঙ্গম করে (ঐ, আয়াত : ১৩০)
মিসরের বাদশাহ ফেরাউন যখন হযরত মুসা (আ.)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল সেই সময়ে আল্লাহর আদেশক্রমে নানাবিধ প্রাকৃতিক বিপদ তাদের চতুর্দিক হতে গ্রাস করে ফেলে। প্রথমেই ফেরাউনের অবাধ্য তার পরিণতিস্বরূপ দীর্ঘদিনব্যাপী আজন্মা শস্যহানি ও দুর্ভিক্ষে মিসরবাসী আক্রান্ত হয় এবং সমগ্র দেশ ক্ষুধার্তের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে। আল্লাহ তাআলা বলেন যে, আল্লাহদ্রোহী ফেরাউন ও পথভ্রষ্ট মিসরবাসীর সত্য ধর্ম শিক্ষা দেয়ার জন্যই আমি তাদের ওপর র্সবপ্রথম এই শাস্তি প্রেরণ করেছিলাম।
এই দুইটি আয়াতে হজরত মুসা (আ.) এর প্রার্থনা অনুসারে ফেরাউন ও মিসরবাসীর ওপর যে সব ভয়াবহ শাস্তি (আজাব) অবতীর্ণ হয়েছিল তা-সহ ফেরাউনের হঠকারিতার সংক্ষিপ্ত আভাস প্রদান করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, ফেরাউনের অবাধ্যতার জন্য প্রথমে অজন্মা, শস্যহানি ও দুর্ভিক্ষে মিসর দেশ জর্জরিত হতে থাকে। কিন্তু ফেরাউন স্বীয় প্রজাসাধারণের করুণ ক্রন্দনে নিরুপায় ও বিষণœ হয়ে হযরত মুসা (আ.) নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। তার প্রার্থনা অনুসারে অজন্মা ও দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয়ে যায়। অনন্তর ফেরাউন পুনরায় বিদ্রোহ ও অত্যাচার আরম্ভ করায় হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে স্বীয় লাঠির দ্বারা নদীর পানিতে আঘাত করলেন। যার দ্বারা সমগ্র মিসরে জলাশয় ও জলধারাসমূহ তরল শোণিত স্রোতে পূর্ণ হয়ে যায় এবং যাবতীয় মৎস্য ও জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে এক অসহ্য দুর্গন্ধে সমস্ত দেশ আচ্ছন্ন করে ফেলে।
তাফসির গ্রন্থগুলোতে এ ঘটনার বিশদ বিবরণ রয়েছে এবং অনেক বর্ণনায় তাওরাতের এতদসংক্রান্ত বিবরণও স্থান পেয়েছে। সূরা আরাফের আয়াতে যে পাঁচটি নিদর্শনের উল্লেখ আছে তার প্রত্যেকটি আজাব এক সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং প্রত্যেকটির মধ্যে এক মাস বিরতি ছিল। এসব আজাব একটার পর একটা লাগাতার নাজেল হতে থাকে বলে বর্ণিত আছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এসব আজাব কেবল ফেরাউন ও তার বংশীয়দের ওপর নাজেল হয়েছিল। মূসা (আ.) এর কওম বনী ইসরাইলের কোনো ক্ষতি হয়নি, তারা মুক্ত ছিল।
এ নাফরমান আল্লাহদ্রোহী জাতি হঠকারিতার আশ্রয় নিয়ে বারেবারে অপরাধে লিপ্ত হতে থাকে এবং ফেরাউনসহ তাদের শেষ করুণ পরিণতি হয় নীলনদে ডুবে মরা। ফেরাউনের ন্যায় নানা অপরাধ পাপাচারের কারণে আল্লাহ বহু জাতিকে নানা প্রকারে ধ্বংস করেন, তাদের নাম নিশানাও দুনিয়াতে অবশিষ্ট নেই, তবে কোরআনে আছে। আল্লাহ এসব কেসসা-কাহিনী তার প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর কাছে জানিয়ে দিয়েছেন যাতে তারা ঐসব কাহিনী হতে শিক্ষা গ্রহণ করে। সেকালে যুগে যুগে এমন কোনো অপরাধ ছিল না যাতে তারা লিপ্ত হয়নি এবং আল্লাহর আজাব- কহরেও তাদের পতিত হতে হয়েছে।
বিশেষত: যারা খাঁটি মোমেন মুসলমান ঐসব কাহিনী স্মরণ করে তারা যদি আল্লাহর সঠিক পথে তাদের প্রিয়নবী প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয় এবং জীবনকে সে পথে গড়ে তোলে তাতে তাদের দোজাহানের মুক্তি ও কল্যাণ নিহিত। শাদ্দাদী, নমরুদী এবং ফেরাউনী তরিকা পরিহার করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলামী জীবন পদ্ধতি অবলম্বনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সমূহ কল্যাণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।