পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমছে বলে জানা গেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, চাহিদা কমা এবং পোশাকের দাম না বাড়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। খবর ডয়চে ভেলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি তার আগের তিন মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৭২ ভাগ কমেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১৬ ভাগ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী এই বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু আগস্ট- সেপ্টেম্বরে তা আর ধরে রাখা যায়নি। গত বছরের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি কমেছে ১২ ভাগ আর সেপ্টেম্বরে কমেছে পাঁচ ভাগ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। যা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৯১ ভাগ বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা যে অর্ডার হারাচ্ছি তা সত্য। মিয়ানমার গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে। তার আগের বছর রপ্তানি করেছে চার বিলিয়ন ডলারের। এই ব্যবসা বাংলাদেশ থেকেই গিয়েছে। এখন পাকিস্তানের ব্যবসা বাড়ছে আমাদের অবস্থা ভালো না।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, গত জানুয়ারিতে শ্রমিকদের যে বেতন বেড়েছে তার সঙ্গে ছোট কারখানা তাল মিলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে কিছু বড় কারখানাও লে অফে বাধ্য হয়েছে। এর সঙ্গে বাজার মন্দা, পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, দাম কমে যাওয়া অন্যতম কারণ। টাকার সঙ্গে ডলারের অবমূল্যায়নও ঠিক মতো হচ্ছে না। পাকিস্তান, ভারত, চীনসহ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দেশে যেভাবে কারেন্সি ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন করেছে আমাদের সেরকম হয়নিফলে আমাদের তুলনায় তাদের পোশাক সস্তা হচ্ছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশনের সভাপতি জনাব আমিরুল হক আমিন বলেন, যেসব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে সেগুলো ছোট। এইসব ছোট ছোট কারখানার বেশ কিছু আছে যারা বড় কারখানার সঙ্গে একীভূত হয়েছে, আবার নতুন বড় কারখানাও গড়ে উঠছে। তাই বাস্তবে পরিস্থিতি অতটা খারাপ না। ২৫ হাজার শ্রমিক আসলে বেকার নেই। তাদের বড় একটি অংশ একীভূত হয়ে যাওয়া কারখানায় কাজ পাচ্ছে কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকরা এই পরিস্থিতির জন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে বড় কারণ হিসেবে সামনে আনছেন। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো নিয়ে কথা বলছেন। আসলে এটা ঠিক নয়। কেউ কেউ তাদের ব্যবস্থাপনা ত্রুটির জন্য মার্কেট হারাচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুয়ায়ি তারা কারখানা আপগ্রেড না করায়ও বন্ধ হয়ে গেছে। রানা প্লাজা ধ্বসের পর ২০১৩ সালে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামের দুইটি জোট গঠন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও রিটেইলার প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ সরকার ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে তারা পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি করে। নেয়া হয় কারখানাগুলোর সংস্কার উদ্যোগ। যেসব কারখানা সময়মত সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে জোটের সদস্যগুলো। ঐ কারখানাগুলো ক্রয় আদেশ না পাওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।