পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার পৈচাশিক নির্যাতনে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ১০ দফা দাবি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে। এমনকি বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। অতীতে দেখা গেছে ছাত্র আন্দোলন মানেই জ্বালাও পোড়াও। কিন্তু বুয়েটের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলনের নতুনত্ব এনেছেন। তারা দেয়ালে দেয়ালে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছে।
বুয়েট ছাত্রছাত্রীদের এবারের আন্দোলনে নতুন মাত্রা দিয়েছে গ্রাফিতি। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড তথা গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসংযোগ নয়; শিক্ষার্থীরা বড়দের শিখিয়ে দিচ্ছেন ‘অহিংস আন্দোলনের’ শক্তিও কম নয়।
বুয়েট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বুয়েট থেকে পলাশি পর্যন্ত দেয়ালে দেয়ালে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা এঁকেছেন গ্রাফিতি। এই গ্রাফিতিগুলো আবরার হত্যার ‘প্রতিবাদের প্রতীক’ হয়ে উঠেছে। এই গ্রাফিতির মাধ্যমে জোরদার হয়েছে আবরার হত্যার বিচারের দাবি। দেশবিদেশে আবরার হত্যকান্ডের বিচারের দাবি জোড়ালো হচ্ছে; এবং দ্রæত বিচার আইনের এই বিচারের দাবিতে জনমত গড়ে উঠেছে। বুয়েটের এক ছাত্রী বললেন, আমরা দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে যে প্রতিবাদ করছি তার শক্তি অনেক বেশি। দেশের সম্পদ ধ্বংস নয়, মেধা দিয়েই প্রতিবাদ করছি। পলাশি মোড়ে আরেক ছাত্র জানান, তারা দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করে জাতীয় নেতাদের অহিংস আন্দোলনের পথ বাতলে দিতে চান। তিনি বলেন, আমরা যে গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করছি তার শক্তি কিন্তু জ্বালাও পোড়ায়ের চেয়ে কম নয়। বরং এই প্রতিবাদের ভাষা অনেক বেশি শক্তিশালী।
বুয়েট ক্যাম্পাসের এক দেয়ালে দেখা গেল দুইটি পায়ের ছবি। লাশের দুটি পা। হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরে সুরতহাল রিপোর্টের পর লাশ যে ভাবে রাখা হয়; দেয়ালেও আঁকা লাশের একটি আঙ্গুলে সুতো দিয়ে নম্বর ঝোলানো। ওই নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হল লাশ। সাদা দেয়ালে কালো রঙের তুলিতে আঁকা লাশের দুইটি পা হয়ে গেছে প্রতিবাদের চিহ্ন।
বুয়েটে ঘুরে দেখা গেল দেয়ালে দেয়ালে এসব চিত্র। বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই এসব গ্রাফিতি এঁকেছেন। এর আগে দেয়ালগুলো পরিস্কার করেছেন শিক্ষার্থীরা নিজেই। এক দেয়ালে আবরারের বাবার ছবিসহ লেখা ‘পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে!! নিজে ইংরেজিতে লেখা জাস্টিজ ফর-আবির।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো যেন দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুললেন। কোথাও আছে আবরারের কথা, কোথাও আবরারের বাবার মুখ। আছে আবরারকে হত্যা করা হয় যে কক্ষে সেই ২০১১’র ছবিও। ছাত্রছাত্রীরা জানান, এই গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচির মধ্যদিয়েই প্রতিবাদ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি শিল্পবোদ্ধা হন তাহলে দেয়ালের এই প্রতিবাদের মূল্য দেবেন।
দেখা গেল কোনো দেয়ালে লেখা রয়েছে, নিরাপদ আছিস, ড্রিমডেথ, রাজনীতি, হোক কলরব, মুষ্ঠি বাঁধা হাতে হোক প্রতিবাদ, চুপ করিয়ে রাখার চিহ্নসহ নানা বার্তা দেয়া হয়েছে গ্রাফিতিতে।
বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের ১৭তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে গ্রাফিতি করা হয়েছে। মূলত স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগুলো এঁকেছেন। আবরার হত্যার প্রতিবাদের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি বুয়েট থেকে পলাশী পর্যন্ত ২০টি দেয়ালে এবং শহীদ মিনারের সামনের দুইটি দেয়ালে আঁকা হয়েছে। পথচারী যারাই আসা যাওয়া করছেন তাদের সবার চোখ আটকে যাচ্ছে দেয়ালের গ্রাফিতিতে।
ছাত্র আন্দোলন নতুন কিছু নয়। উনিশ’শ ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মরহুম সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক প্রথম দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে ’৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সুচনা করেন। সে সময় রাতে দেয়ালে দেয়ালে শ্লোগান লেখার সময় চিকার কবলে পড়ায় গ্রাফিতিকে ‘চিকামারা’ অবিহিত করা হয়। বিগত শতকের ৯০ দশকেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে ‘ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ খাওয়া/ এবং পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাই করা সমান অপরাধ’ গ্রাফিতি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।
আবরার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বুয়েট ছাত্রদের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদের ভাষা গ্রাফিতি স্মরণ করিয়ে দেয় ছাত্রদের ঐতিহাসিক আন্দোলনগুলোর কথা। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন, ’৯০ এর স্বৈরাচার পতন আন্দোলনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করায় তৎকালীন ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অপরিসীম। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-মাদরাসার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তারাও নতুনত্ব দেখিয়েছে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বা ‘যদি তুমি ভয় পাও তুমি শেষ; এগিয়ে গেলে তুমিই বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য নতুন নতুন শ্লোগান দিয়ে আন্দোলন করেছে।
আবরার হত্যার পর বুয়েটের ভিসি ৩৬ ঘন্টা নীরব ছিলেন। তার এই আচরণের প্রতিবাদ করে বুয়েটের ভিসি এবং তথাকথিত নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের বড় ভাইদের উদ্দেশ্য করে এক দেয়ালে গ্রাফিতি দেখা গেল ঠক! ঠক! ঠক! - কে? - স্যার একটু বাইরে আসবেন? কথা আছে! আবার ঠক! ঠক! ঠক! - কে? - তোরে বড় ভাইয়া ডাকছে, বাইরে আয়! বুয়েটে ছাত্রছাত্রীদের এই গ্রাফিতি যেন দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে গেছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।