Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ হামলা, লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের ভয়াবহ হামলায় অবর্ণনীয় এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হচ্ছে অবকাঠামো, মানুষের আশ্রয়। অন্যদিকে ক্রমেই বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এমন অবস্থায় ভীতসন্ত্রস্ত কমপক্ষে এক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন অথবা পালাচ্ছেন। এমন হিসাব জাতিসংঘের। এমনিতেই সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে ৫ বছর। এই যুদ্ধে যারা বেঁচে আছেন তারা শঙ্কিত। তার ওপর তুরস্কের এই হামলা তাদের মধ্যে এক ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ বলছে বহু মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে হাসাকেহ শহর ও তাল তামের শহরের বিভিন্ন স্কুল ও অন্যান্য ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর তুরস্ক বুধবার এই হামলা শুরু করে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিহতের সংখ্যা বিভিন্ন রকম দেখানো হচ্ছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, এ হামলার শিকার মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এবং তুর্কি পন্থিদের বিপুল সংখ্যক সদস্য নিহত হয়েছেন। তুরস্কের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের একজন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারই তুরস্ককে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় হামলা চালানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে। সেখানকার বেশির ভাগ এলাকাই সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়া সরকার এর নিয়ন্ত্রণ হারায়। ২০১৫ সাল থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পায় কুর্দি সংগঠন এসডিএফ। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে তাদের ম‚ল মিত্রদের মধ্যে এসডিএফ অন্যতম। কিন্তু এসডিএফের যোদ্ধাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে তুরস্ক। এরা তুরস্ক বিরোধী বিদ্রোহকে সমর্থন দেয় বলে তুরস্কের অভিযোগ। তাই তাদেরকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে শেষ করে দিয়ে সেখানে একটি নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে চায় তুরস্ক। এই অজুহাতে তারা সেখানে হামলা চালায়। ওই নিরাপদ অঞ্চল পরে তারা সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য ব্যবহার করতে চায়। এ হামলার পক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান বলেছেন, কে কি বললো তাতে কান দেবো না। আমরা আমাদের অভিযান বন্ধ করবো না। এখানে উল্লেখ্য, কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী ওই অঞ্চলে অনেক বন্দিশিবির প্রহরা দেয়। সেখানে আছে সন্দেহভাজন হাজার হাজার আইএস বন্দি। এর মধ্যে আছেন বহু বিদেশী নাগরিক। তাদের পরিণতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল বড় আকারে উদ্বিগ্ন। যদি এসব বন্দিশিবির উন্মুক্ত হয়ে যায় তাহলে আইএস যোদ্ধারা মুক্ত হয়ে যাবে। ফলে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে। তারই যেন একটি দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে যখন শুক্রবার আইএস বলেছে, তারা একটি গাড়িবোমা স্থাপন করেছিল, এ থেকে ৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এ ঘটনা ঘটেছে কামিশলি শহরের সীমান্ত অঞ্চলে। ওদিকে মার্কিন মিডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে কোবানেতে মার্কিন ঘাঁটির কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি। এর আগে বৃহস্পতিবার সিরিয়ার রাস আল আইন এবং তাল আবিয়াদ শহর ঘেরাও করে তুরস্কের সেনাবাহিনী। এমন অবস্থায় নতুন করে শরণার্থী সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়কারী বিভাগ (ওসিএইচএ) বলছে, এরই মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ। তবে দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এ সংখ্যা কমপক্ষে সাড়ে চার লাখ। মাঠপর্যায়ে দাতব্য সংস্থগুলোর যেসব কর্মী কাজ করছেন তারা বলছেন, তাল আবিয়াদ শহর থেকে বেশি বেসামরিক মানুষ পালিয়েছেন। তারা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। ওসিএইচএ বলছে, তুরস্কের বোমা হামলায় সিরিয়ার বেসামরিক লোকজনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানতম হলো পানি সরবরাহের স্টেশন। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ