Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তিতে নোবেল জিতলেন আবি আহমেদ আলী

গৃহযুদ্ধ অবসানে ভূমিকা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন কৃষকের সন্তান থেকে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া আবি আহমেদ আলী। প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের গৃহযুদ্ধ অবসানে তার ইতিবাচক ভূমিকাকেই স্বীকৃতি দিল নোবেল কমিটি। এদিন অসলো থেকে শান্তিতে নোবলেজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে সচিব বিয়ার্ত্র অ্যান্ডারসন বলেন, ‘সামাজিক ন্যায়, ঐক্য স্থাপনে আবি আহমেদের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই পুরস্কৃত করা হচ্ছে তাকে।’
এখনও ইথিওপিয়া ইরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি ফেরেনি। তবে দুই দশকের অশান্তি পেরিয়ে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে হওয়া শান্তিচুক্তি দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের সম্ভাবনা অনেকটা তরান্বিত করেছে। বিয়ার্ত্র অ্যান্ডারসন জানাচ্ছেন, অনেকে বলতে পারেন, আবি আহমেদকে তড়িঘড়ি পুরস্কার দেওয়া হল। তবে তার উদ্যোগকে সম্মান জানাতেই হয়। তিনি আবি আহমেদের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘রোমও একদিনে তৈরি হয়নি।’
১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইথিওপিয়া থেকে। কিন্তু ইরিত্রিয়ার সীমান্তবর্তী বাদমে অঞ্চলের দখল নিয়ে গত ২০ বছর ধরে ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সম্পর্কের চ‚ড়ান্ত অবনতি হয়েছে। বারবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে দু’পক্ষেরই ৭০ হাজারের বেশি মানুষের। ক্রমেই মেরুদন্ড ভেঙেছে দুই দেশের অর্থনীতির। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষমতায় এসেই আবি আহমেদ আলী প্রথমেই সচেষ্ট হন ইরিত্রিয়ার সঙ্গে হিংসা অবসানে। একই সঙ্গে চলতে থাকে অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে আবি আহমেদ দেখা করেন ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ইসআইআস আফওয়েরকির সঙ্গে। শুরু হয় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে মত বিনিময়। সদর্থক আলোচনার শেষে দুই দেশের প্রধান ২০১৮ সালের ৯ জুলাই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। আবি আহমেদ বাদমে অঞ্চলকে ইরিত্রিয়ার হাতেই সমর্পণ করেন। স্থির হয়, দুই দেশের মানুষ, পণ্য ও অন্যান্য পরিষেবার জন্যে সীমান্ত খুলে দেবে উভয় পক্ষই। এই গুরুত্বপ‚র্ণ সিদ্ধান্ত অনেকটাই বদলে দিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। হিংসার পরিমাণ কমায় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নজর দিতে পেরেছেন আবি। শুধু ইরিত্রিয়াই নয়, অন্য দেশগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করে দীর্ঘদিনের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রী। সউদী আরব গিয়ে বন্দি প্রত্যর্পনের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। শান্তি বিষয়ক আলোচনা সেরেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ এল সিসির সঙ্গে। সমগ্র বিশ্বই মনে করেছিল এই বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চলেছে ১৬ বছর বয়েসি পরিবেশ আন্দেলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ। তবে সামগ্রিক অবদানের নিরিখে শেষ বিচারে আবি আহমেদকেই বেছে নিল নোবেল কমিটি।
আবি আহমেদের জন্ম ইথিওপিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বেশাসায় এক মুসলমান বাবা ও খ্রিষ্টান মায়ের ঘরে। ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছেন কৃষিকাজ করতে। তাকে রাত কাটাতে হতো ফ্লোরে ঘুমিয়ে। নিজের বড় হওয়ার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে গত মাসে একটি রেডিওতে দেয়া সাক্ষাৎকারে আবি আহমেদ বলেন, ‘বাড়ির আশেপাশে পানির ব্যবস্থা ছিল না। দ‚রের নদী থেকে আমাদের পানি বয়ে নিয়ে আসতে হতো। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও পাকা (পিচ) রাস্তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার।’
রাজনীতিতে আবি আহমেদের উত্থান ঘটে ক্ষমতাসীন জোট ইথিওপিয়ান পিপল’স রিভ্যুলিউশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইপিআরডিএফ) গঠনের মধ্যে দিয়ে। কিশোর বয়েসে সামরিক বাহিনীর একজন রেডিও অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবি পেয়েছিলেন। ইথিওপিয়ার সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন তিনি।
গরিব কৃষকের সন্তান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে একসময় আফ্রিকার দ্রæত বর্ধমান অর্থনীতির সংস্কারের নেপথ্য নায়কে পরিণত হন আবি আহমেদ। তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কেবল কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েই থেমে থাকেননি, তাদের ওপর চালানো রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও নৃশংসতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। এছাড়া তার পূর্বসূরীরা যাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়া করেছিল, সেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের নিজ দেশে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সী আবি আহমেদ ২০১৮ সালে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই দেশটির কঠোর নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় তিনি বড় ধরনের একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশের দশ ভাগের একভাগ রক্তাক্ত জনপদ শান্তি বাহিনী সাথে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ দেশের সাধারন মানুষের লাশ আর লাশ দেশের বিতরে কি ভয়ংকর পরিবেশ ছিল এই রক্তাক্ত জনপদ কে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে মানবতার কাজ করলেন। এটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক ভাবে শান্তিতে নোবেল পুরুষ্কারের মত শান্তির কাজ। পার্বত্যাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যার অবদান বাংলাদেশ শান্তির জন্য নোবেল পুরুষ্কার পাওয়ার অধিকার হতে বঞ্চিত কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়?সারাবিশ্বের মানুষের সামনে গনহত্যা ভয়ংকর অমানবিক নির্যাতিত রক্তাক্ত মায়ানমার রোহিঙ্গাদের মাতৃত্বের স্নেহে মানবতার মহান আদশ্য ধারণ বিশাল দশ লক্ষ নারী পরুষ শিশু বৃদ্ধাদের আশ্রম ধাতা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের পুরুষ্কার দেওয়া উচিত ছিলো শান্তিতে আন্তর্জাতিক নোবেল প্রাইজ। দিলেন বিশ্ব মানবতার মা। মানবতার মা শান্তিতে নোবেল পাওয়ার মত বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্টির আশ্রয় লাখ লাখ মানুষের জীবন মৃত্যুর কাজ হতে বাচানো শান্তি জন্য নোবেল পাওয়ার মত কাজ। বাংলাদেশ বলেই কি? ইথিওপিয়ার প্রধান মন্ত্রী নোবেল প্রাইজ পেলেন অবশ্যই ধন্যবাদ। আন্তর্জাতিক গন মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি।শান্তির জন্য কাজ করেছেন। আমাদের প্রধান মন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। রোহিঙ্গা জন গোষ্ঠীর বিশাল দায়িত্ব বিশ্ব সমাজের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নোবেল কমিটির জানা থাকার কথা। বিশ্ব বিবেকর কাছে দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিবেকবান ব্যক্তির কাছে সাধারণ মানুষ হিসাবে জানতে চাই? দেশের রাজনীতি দাবা খেলা আর লুডু খেলা কি দায়? বঙ্গবন্ধুর কন্যার রাজনৈতিক কুটনৈতিক প্রজ্ঞা মানবতার মহান আদশ্য দক্ষিণ এশিয়া এখন বিশ্ব মানবতার মা। অবশ্যই বাংলাদেশ সম্মানিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD. FARUK MIAH ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:১৪ এএম says : 0
    i wanna write about freedom fighter article. my father is a freedom fighter . need to write about their and his family.
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Jahid Hasan ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম says : 0
    Congratulations
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shahjahan ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম says : 0
    congregations and we need a leader like you in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ