গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে গত রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে দুই দফায় বেধড়ক পেটানো হয় । এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সেই কক্ষে চার শিক্ষার্থী থাকেন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ।
মামলার এজারে এই চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম উল্লেখ থাকলেও নেই অমিত সাহার নাম।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মহলে সমালোচনা চলার পর অবশেষে অমিত শাহকে আজ সকালে ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
আবরার হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে মেহেদী হাসান রাসেলকে (২৪)। তিনি ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক।
আবরার হত্যাকাণ্ডে জাতি এখনও বিমর্ষ ও শঙ্কিত। দেশের সর্বস্তরের মানুষ বলছেন, যেখান থেকে বিজ্ঞানী বের হওয়ার কথা, সেখানে এতগুলো খুনির বসবাস!
এসব শিক্ষার্থী অত্যন্ত মেধাবী ও তারা প্রত্যেকেই এসএসসি ও এইচএসসিতে এ-প্লাস পেয়েছেন।
পড়ালেখাই যাদের ধ্যানজ্ঞান, তারা দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠের পরিবেশের মধ্যে থেকে অপরাজনীতির বেড়াজালে পড়ে খুনিতে পরিণত হয়েছেন বলে বিশ্লেষণ করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, আবরার হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা থানাধীন সূর্যদিয়া রাঙ্গারদিয়ায়। তার বাবার নাম রুহুল আমিন।
আবরার হত্যা মামলায় দুই নম্বর আসামি মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩)। তিনি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সহসভাপতি। তার বাবার নাম আবু তাহের। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ার দৌলতপুর লাঙ্গলমোড়ায়। তিনি শেরেবাংলা হলের ২০১০ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ফুয়াদ। একাই ২০১০ কক্ষে থাকতেন তিনি। রুমে প্রায়ই মদ-জুয়ার আসর নিয়ে বসতেন।
মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকারকে (২২)। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর থানাধীন বড়ইকুড়িতে। একই হলের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
তদন্তে প্রকাশ, অনিক সরকারই সবচেয়ে বেশি মেরেছেন আবরারকে। আবরারের এক সহপাঠী বলেন, অনেকক্ষণ মারার পর অনিক বলেন, কীভাবে শিবির পেটাতে হয় তা আমার থেকে শিখে নে। এর পর তিনি স্টাম্প হাতে নিয়ে বেধড়ক পেটান আবরাবকে।
মামলার চার নম্বর আসামি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (২২)। তার বাবার নাম মাকসুদ আলী। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর পবা থানাধীন চৌমুহনীর কাপাসিয়ায়। একই হলের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
পাঁচ নম্বর আসামির নাম ইফতি মোশারফ সকাল (২১)। ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার উপ-সমাজসেবা সম্পাদক পদটি ছিল তার। বাবার নাম ফকির মোশারফ হোসেন। রাজবাড়ী সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৯৫ নম্বর বাসাটি সকালের। তিনিও শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (২১) আবরার হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানাধীন ভাঙ্গাড়িপাড়ার মাহতাব আলীর ঘরে জন্ম মনিরের। তিনি একই হলের পানিসম্পদ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
মামলার সাত নম্বর আসামি মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২২) ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার ক্রীড়া সম্পাদক। তার বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানাধীন শঠিবাড়ী এলাকায়। একই হলের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
৮ নম্বর আসামি মাজেদুল ইসলাম (২১)। তিনি শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড ম্যাটার্লজিক্যাল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার স্থায়ী ঠিকানার বিষয়েও কিছু জানাতে পারেনি বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এ মামলার ৯ নম্বর আসামি মোজাহিদুল ওরফে মোজাহিদুর রহমান (২১)। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সদস্য তিনি। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে থাকেন মোজাহিদুল।
গতকাল তার আইনজীবী মোর্শেদা খাতুন শিল্পীকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ১০ নম্বর আসামি হলেন তানভীর আহম্মেদ (২১)। ছাত্রলীগে তার সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার ঠিকানাও অজ্ঞাত। একই হলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
১১ নম্বর আসামি হলেন হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২০)। তার সাংগঠনিক পরিচয় ও ঠিকানা অজ্ঞাত। শেরেবাংলা হলে ২০১১ নম্বর কক্ষের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
১২ নম্বর আসামির নাম জিসান (২১)। একই হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষের ছাত্র ও ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
এ মামলায় আসামি ছিলেন না বুয়েট ছাত্রলীগের উপআইন সম্পাদক অমিত সাহা। তবে ফেসবুকসহ দেশজুড়ে চলা তীব্র সমালোচনার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে, অমিতের বাড়ি নেত্রকোনা শহরের আখড়া মোড় এলাকায়। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের ঠাকুরাকোনা বাজারের স্বাস্থ্য ক্লিনিকের পাশে। অমিতের মা দেবী রানী সাহা ও বাবা রঞ্জিত সাহা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।