Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপিটুনি বন্ধে মোদিকে চিঠি দিলেন আরো ১৮০ ব্যক্তিত্ব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে গণপিটুনি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ১৮০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এর আগে একই ইস্যুতে খোলা চিঠি লেখায় ৪৯ বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবারের নতুন চিঠিতে ১৮০ বিশিষ্ট নাগরিক জানতে চেয়েছেন, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠি রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ড হতে পারে? ২৪ জুলাই ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন রামচন্দ্র গুহ, আদুর গোপালকৃষ্ণণ, শ্যাম বেনেগল, আশিস চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অমিত চৌধুরী, গৌতম ঘোষ, অনুরাগ কাশ্যপ, ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, মনি রত্ম, শুভা মুদগলসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠিতে নিজেদের ‘শান্তিপ্রিয় ও গর্বিত ভারতবাসী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা লিখেছিলেন, ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রীৃ মুসলিম, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষদের গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাবলী এই মুহ‚র্তে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিটি একটি প্ররোচনামূলক ‘রণহুঙ্কার’-এ পরিণত হওয়াই যে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ সেই বিষয়টির উল্লেখ করে উদ্বিগ্ন স্বাক্ষরকারীরা জানিয়েছিলেন, ধর্মের নামে এমন অনৈতিক আচরণ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। তারা লেখেন, ‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কাছে রাম একটি পবিত্র নাম। দেশের সর্বোচ্চ আধিকারিক হিসেবে আপনার উচিত রাম নামের এই বিকৃতি বন্ধ করা’। এই চিঠি পাঠানোর বিষয়ে দুই মাস আগে বিহারের মুজাফফরপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স‚র্যকান্ত তিওয়ারির কাছে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন সুধীর কুমার ওঝা নামের এক আইনজীবী। সেই পিটিশনকে ঘিরে একটি অর্ডার পাস করেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই অর্ডারের ভিত্তিতেই সদর পুলিশ স্টেশনে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন সুধীর কুমার।

অভিযোগে সুধীর কুমার লিখেছেন, এই চিঠি লিখে তারা দেশের মান ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিশ্রমকে খাটো করতে চেয়েছেন। তারা দেশদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমি এফআইআর করেছি। পুলিশ স‚ত্রে জানা গেছে, আইপিসির একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করা, অস্থিরতা তৈরি করা, ধর্মীয় ভাবাবাগে আঘাত, শান্তি বিঘ্ন করার চেষ্টা প্রভৃতি। অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, চলচ্চিত্রকার আনন্দ প্রধান, ইতিহাসবিদ রমিলা থাপার ও অ্যাক্টিভিস্ট হার্শ মান্দারসহ ১৮০ জনের বেশি বিশিষ্টজন এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নাগরিক সমাজের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের ৪৯ জন সহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এটি কি রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ড হতে পারে? নাকি এটি হলো জনগণের কণ্ঠরোধ করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে হয়রানি করা? চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্যদের মধ্যে রয়েছেন লেখক অশোক বাজপেয়ী ও জেরি পিন্টো, শিক্ষাবিদ ইরা ভাস্কর, কবি জীত থায়েল, লেখক শামসুল ইসলাম, সংগীতবিদ টিএম কৃষ্ণ ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সাবা দেওয়ান। চিঠিতে জনগণের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে তারা কথা বলা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে, ভারতীয় সাংস্কৃতিক স¤প্রদায়ের সদস্য হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা এই হয়রানির নিন্দা জানাচ্ছি। শুধু নিন্দা নয়, প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সহকর্মীরা যে চিঠি লিখেছেন সেটির প্রতিটি শব্দকে আমরা সমর্থন করি। চিঠিতে আরও বেলা হয়েছে, এজন্য আমরা এই চিঠিটি আবার এখানে তুলে ধরলাম। আমরা সাংস্কৃতিক, শিক্ষাবিদ ও আইনী স¤প্রদায়ের একইভাবে চিঠিটি তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। এ কারণে প্রতিদিন আরও অনেকেই মুখ খুলবে। গণপিটুনির বিরুদ্ধে, জনগণের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে। আদালতকে জনগণের হয়রানির কাজে ব্যবহারের বিরুদ্ধে। সূত্র : এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ