পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছাত্রলীগের হাতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২য় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো। গতকাল সোমবার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট কর্মসূচি পালন করেছে। একই দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
রাত সাড়ে ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের ফুটেজ না দেখিয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ করে। এসময় লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।
ঢাবিতে বিক্ষোভ
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি ঢাবির রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, অপরাজেয় বাংলা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে ভিসি চত্বর হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। দুপুর ১টার দিকে মিছিল নিয়ে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সামনে গেলে হলটির গেট বন্ধ করে দেয় কর্তপক্ষ। পরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলটি আবার টিএসসিতে ফিরে আসে।
পরে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অধিকার ছাত্রলীগকে কে দিয়েছে? কোনো ছাত্র যদি অন্যায় করে থাকে, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে।’ নুর বলেন, আজকের ছাত্ররা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির হাতে জিম্মি। ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ শৃঙ্খল ভাঙতে হবে।’ ভিপি বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেন। অন্যথায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ক্ষেপে গেলে পালানোর রাস্তা পাবেন না। তিনি বলেন, ‘আজ পুরো বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত। সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজ যদি আপনারা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারেন তাহলে এই স্বৈরশাসন ও স্বৈরশাসকদের জাতাকলে পিষ্ট হতে হবে।
ছাত্রদলের বিশাল বিক্ষোভ
আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিকেল ৫টায় ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এতে সংগঠনটির প্রায় কয়েকটি নেতাকর্মী অংশ নেন। সময় ছাত্রদলের স্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হয়। বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাষ্কর্যের পদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতারা। ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘জাতীয়াতাবাদী ছাত্রদল এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমেছে। এবং হত্যাকান্ডের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে।’ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘বুয়েটের এর মত একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করার মাধ্যমে ছাত্রলীগ নিজেদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আবারও প্রমাণ করছে। আবু বকর হত্যাকান্ড এবং বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের বিচারের নামে যে প্রহসন হয়েছে তেমনি এই বিচার নিয়ে যদি এরকম প্রহসন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে ছাত্রদল রাজপথে নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’ এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও বুয়েট শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাফিউল মোসাব্বির শাফি প্রমূখ।
ছাত্রলীগের জড়িতেদের কঠোর শাস্তি দাবি বামদের
আবরার হত্যার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। ছাত্র ফেডারশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, আবরার হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক দমন-পীড়ন-সহিংসতার শিকার সে। এতে বলা হয়, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা প্রত্যেকেই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। তাই এ ফৌজধারী অপরাধে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ছাত্র ফেডারশেনর পক্ষ থেকে আগামী বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় ঢাবি হাফিজ চত্বর থেকে আবরার হত্যার বিচার ও ভারতের সাথে সকল অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, ‘এ ধরণের হত্যাকান্ড আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না। এরসাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ
আবরার হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে জোটের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান অবরোধ করে। ফলে ৩০ মিনিটের বেশি সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় বক্তারা বলেন, ‘আমরা এখন ঘরে ও ঘরের বাইরে কোথাও নিরাপদ নই। দেশে একটি অরাজকতার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ একই ঘটনায় বিকেল পাঁচটার দিকে আবার ঢাকা-রাজশাহী মহসড়ক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জাবি রিপোর্টার জানিয়েছেন, বুয়েটে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক যোগ দেন। পওে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আদর্শিক পরিচয়ের কারণে একজন মানুষকে মেরে ফেলা যায় না। তিনি যদি শিবির করেও থাকেন তা যদি অপরাধ হয় আইন তার বিচার করবে। কাউকে হত্যা করা ছাত্রলীগের কাজ নয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘আবরার ভারতকে বাংলাদেশের সম্পদ তুলে দেওয়ার সমালোচনা করেছে। এটা কি তার অপরাধ ছিল? হত্যা করার পর তাকে শিবির হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। আমরা এ ঘটনার দ্রæত বিচার দাবি করছি।’
জবি রিপোর্টার জানিয়েছেন, আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করে। এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয় জবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা। মিছিলটি বাহাদুরশাহ পার্ক, শাঁখারী বাজার মোড ও কবি নজরুল কলেজ রোড হয়ে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।