বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামপূর্ব যুগে পারস্য সম্রাট নওশেরওয়া ছিলেন ন্যায়বিচার ও সুশাসনের জন্য খ্যাত। মহানবী সা.ও তার সুনাম করেছেন। দানশীলতার জন্য প্রশংসা করেছেন, তার পূর্বযুগের হাতেমতাঈকে।
আল্লাহর বিধানও এমন যে, শাসক অমুসলিম হোক, কিন্তু জালিম না হলে, ন্যায়বিচার ও সুশাসন করলে আল্লাহ তাকে সাফল্য, সুনাম ও নেয়ামত দান করেন। আর শাসক মুসলিম হওয়া সত্তে¡ও যদি নীতিহীন জালিম ও অপশাসক হয়, তাহলে তার ভাগ্যে জোটে পরকালীন শাস্তি, দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও সীমাহীন বদনাম।
ভেতরে ভেতরে মানুষ তার বদনাম করে। তার প্রতি অনাস্থা পোষণ করে। আল্লাহর তরফ থেকে তার প্রতি মানুষের অন্তরে ঘৃণা ও অবিশ্বাস জন্ম নেয়। সে সত্য কথা বললেও মানুষ বিশ্বাস করে না। আন্তরিকভাবে কিছু করলেও অভিনয় মনে করে। এমনকি তার চোখের পানিকেও মানুষ বিশ্বাস করে না। এটি একটি গজব। শাসকের নিয়ত খারাপ হলে দেশের সবকিছুর রহমত বরকত উঠে যায়।
ইতিহাসে আছে, সম্রাট নওশেরওয়া একদিন ছদ্মবেশে তার একসঙ্গীকে নিয়ে জনগণের অবস্থা পরিদর্শনে যান। দূরের পথ, তারা ছিলেন ক্লান্ত ও ঘর্মাক্ত। একটি মাল্টা বাগানে গিয়ে তারা খানিক্ষণ বসলেন। বাগানের মালি তাদের একগ্লাস করে মাল্টার রস দিল। নওশেরওয়া বললেন, খুব সুমিষ্ট ও রসালো মাল্টা। সম্ভব হলে আরেক গ্লাস দাও। মালি বেশ কয়েকটি মাল্টা কেটেও এক গ্লাস রস বের করতে পারলো না। কোনোরকম গ্লাসটি ভরে সম্রাটের হাতে দিয়ে বলল, নিন, খান।
সম্রাট মুখে দিয়ে বললেন, এ রস তো আগের মতো নয়। বেশ পানসে লাগছে। তখন মালি বলল, দেশের রাজার নিয়ত খারাপ হয়ে গেছে, তাই মাল্টার রসও কমে গেছে। মিষ্টতাও চলে গেছে। আগে এক গ্লাস মাল্টায় এক গ্লাস রস হয়েছিল। পরেরবার দু’তিনটি দিয়ে এক গ্লাস রস হয়েছে, তাও পানসে। মালি তখনও সম্রাটকে চিনতো না। সে শুধু তার ধর্মবিশ্বাস ও পূণ্যহৃদয় ধারণা থেকে কথাগুলো বলেছিল।
মহৎপ্রাণ সম্রাট নওশেরওয়া তখন সেখান থেকে চলে গেলেন। সঙ্গীকে উদ্দেশ করে বললেন, সত্যিই আমি প্রথম মাল্টার রস খেয়ে নিয়ত করেছিলাম, এ বাগানগুলো অধিগ্রহণ করবো। রাজধানীতে আমার জন্য এখান থেকে মাল্টা যাবে। এমন ভালো জাতের মাল্টা খুব কমই পাওয়া যায়। এ ভাবনার পর কী আশ্চর্যরকমভাবে মাল্টার রস কমে গেল, মিষ্টি চলে গেল, তুমি তো নিজেই দেখলে। সত্যিই এই মালি সৃষ্টিকর্তার রহমত বরকত সম্পর্কে উচ্চ ধারণা রাখে। সে প্রকৃতির নিয়ম জানে। এ তার বহু প্রজন্মের অভিজ্ঞতাজনিত দর্শন। সম্রাট তখন এমন দখলবাজে ও জুলুম থেকে তওবা করলেন।
ইসলামের আগের লোক হওয়া সত্তে¡ও মহানবী সা. সম্রাট নওশেরওয়ার প্রশংসা এমনিতে করেননি। বিনা কারণে তিনি দাতা হাতেম তাঈয়ের প্রশংসা করেননি। জাহেলি যুগের এক কবির প্রশংসাও নবীজি করেছেন। তার কবিতা কোনো কোনো সময় আবৃত্তি করিয়ে শুনতেন। বলেছিলেন, এ লোকটি অমুসলিম ছিল। তবে, তার অন্তর ছিল মুসলমান। এ কবির একটি কবিতা ছিল এমন, যেখানে সে বলেছে, ‘যদিও আমার প্রবৃত্তিতে ইচ্ছা জাগে, তথাপি মানুষ হিসাবে আমার সভ্যতার দাবি আমি মেনে চলি। যখন আমার রূপসী প্রতিবেশী ঘর থেকে বের হয়, আমি তখন নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে নিই’।
বর্তমান যুগে উন্নত দেশগুলোতে অমুসলিম বহু শাসক দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম ও মানবতা যে কোনো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের দেশ ও জাতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আর মুসলিম নামধারী কিছু শাসক এত নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী হয়ে আছে, যাদের কথা ভাবতেও লজ্জা হয়। মানুষের দেহ, মন-মানসিকতা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব শাসক আল্লাহর দান শাসনক্ষমতা লাভ করেও মারাত্মক লোভী, চোর, ডাকাত ও লুটেরা রয়ে গেছে।
প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অব্যাহতভাবে মেরে দিয়েও তাদের খাই মেটে না। এদের অনন্ত লোভ একদিন মিটবে। সেদিন আর শাস্তি ও পাকড়াও থেকে তাদের বাঁচার উপায় থাকবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, কবরের মাটি পেটে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত লোভীদের সম্পদের উগ্র চাহিদা মিটবে না। অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, যারা সম্পদ জমা করে আর গর্বভরে গণনা করে, তারা জাহান্নামে যাবে। ধ্বংস তাদের জন্য যারা ভাবে যে, সম্পদ তাকে অমরত্ব দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।