Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিকত্বহীন ৩০ রোহিঙ্গার কারাদন্ড

উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর পরিবেশে বসবাস করছে : জাতিসংঘ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ছাড়া আটক হওয়া ৩০ রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন মিয়ানমারের একটি আদালত। দন্ডিত এসব রোহিঙ্গার মধ্যে নারী এবং ছয় বছর বয়সী এক ছেলে শিশুও রয়েছে। শুক্রবার আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের নাগাপুদাউ টাউনশিপ আদালত ১৯৪৯ সালের মিয়ানমারের বাসিন্দা রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে এই দন্ড দিয়েছেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এসব রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সা¤প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের এসোসিয়েট আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের নেচারালাইজড বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়। মিয়ানমার পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পাথেইন-নাগা ইয়োক কাউন সড়ক থেকে একটি মিতসুবিসি পাজেরো গাড়ি থেকে ৩০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তাদের কাছে নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ ছিল না। পুলিশ গাড়িটি থামালে চালক পালিয়ে যায়। তাদের আদালতে হাজিরের পর শুক্রবার নাগাপুদাউ টাউনশিপ আদালত ১৫ নারী ও ছয় পুরুষ রোহিঙ্গাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়ে পাথেইন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নাগহাট আও ইয়োথ ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। রাখাইনের দক্ষিণে অবস্থিত উপক‚লীয় শহর নাগা ইয়োক কাউন। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, দালালদের মাধ্যমে বহু রোহিঙ্গা নৌকা ও সড়কপথে এই শহরে আসা অব্যাহত রেখেছে। ওই ৩০ রোহিঙ্গাকে আটক করতে দেখা এক বাসিন্দা বলেছেন, সম্ভবত এসব রোহিঙ্গা রাখাইন ছাড়তে নৌকায় করে এসেছিল। তাদের নিতে অপেক্ষা করছিল একটি মিনিবাস। অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য এখনও নিরাপদ নয় মিয়ানমার। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেয়া এক রিপোর্টে এ কথা বলেছেন জাতিসংয়ের নিরপেক্ষ তদন্তকারী, স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লি। ওই রিপোর্টে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণের ধারাকে ভেঙেচুরে দিতে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘে দেয়া তার ওই রিপোর্টটি বিলি করা হয় শুক্রবার। এতে বলা হয়েছে, এখনও রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তাদের অবস্থা ভয়াবহ। তারা গ্রাম ছাড়তে পারে না। জীবিকা নির্বাহ করতে উপার্জন করতে পারেন না। এক্ষেত্রে ওইসব মানুষ শুধু মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। তাদের অধিকারকে এত বেশি দমিয়ে রাখা হয়েছে যে, বেঁচে থাকার মৌলিক অর্থটাই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়াংহি লি বলেছেন, যখন মিয়ানমারে এমন অবস্থা বিরাজমান তখন সেখানে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়া নিরাপদ এবং টেকসই হবে না। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে বাড়ি বাড়ি গণনার ভিত্তিতে প্রশাসনিক রেকর্ড থেকে রোহিঙ্গাদের মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এতে তাদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্যতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদেরকে একটি ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেয়ার কথা বলেছে মিয়ানমার। কিন্তু নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে এটা কোনো সমাধান নয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের দাবি, তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। যেসব জমিজমা, বাড়িঘর তারা ফেলে এসেছেন তা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমার সরকার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এমন কি একটি জাতিগত গ্রুপ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর ফলে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন। এপি, রয়টার্স, এএফপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ