বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা সামষ্টিক শ্রবণশক্তির গুণে গুণান্বিত। এর অর্থ হলো- আল্লাহপাক সকল সৃষ্টির সব কথা শোনেন। একের কথা শ্রবণকালে অন্যের কথা শ্রবণে কোনো রকম বাঁধার সৃষ্টি হয় না। তিনি একই সাথে মানব-দানব, ফিরিশতা, চতুস্পদ প্রাণী, বৃক্ষে বসবাসকারী পাখি, পানিতে বসবাসকারী মৎসকুল, কীট-পতঙ্গসহ অন্যান্য সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টির কথা শোনেন এবং বোঝেন। মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির ভাষা ও শব্দের বিভিন্নতা তাকে সংশয় ও সন্দেহে নিপতিত করতে পারে না। বিভিন্ন ভাষা ও আওয়াজের মিশ্রন হেতু দুর্বোধ্যতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। এমন অত্যাশ্চর্য ও অতুলনীয় শ্রবণ শক্তির অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও তিনি কান বা শ্রবনেন্দ্রিয় হতে পবিত্র, মুক্ত ও মুখাপেক্ষিহীন।
প্রকৃতই কোরআনুল কারীম এবং হাদীস শরীফে উল্লিখিত গুণের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যথা, (ক) ইরশাদ হয়েছে, তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সকল শব্দ শ্রবণ করেন, সকল দৃশ্য দেখেন। (সূরা গাফির বা মু’মিন : আয়াত ৫৬)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, তিনি কোনো বস্তুর তুল্য নন বা কোনো বস্তু তার তুল্য নয়। (সূরা শুরা : আয়াত ১১)। (গ) হযরত আবু মূসা আশআরী রা. বলেন, একদা আমরা কোনো এক সফরে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে ছিলাম। কোনো একটি উপত্যকার নিকটবর্তী হলে আমরা উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার ও আলহামদুলিল্লাহ বলতে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হে লোক সকল, তোমরা থাম। কেননা তোমরা কোনো বধিরকে বা কোনো অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের সাথেই আছেন। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ৪২০)।
অধিকন্তু মহান রাব্বুল আলামীন সিফাতে বাছর অর্থাৎ দর্শন বা দেখার গুণেও সর্ব গুণান্বিত। তিনি সকল বস্তুকেই দেখেন। কোনো বস্তু আধারে হোক বা আলোতে, নিকটে হোক বা দূরে, দিবসে হোক বা রজনীতে, ক্ষুদ্র হোক বা বৃহৎ, সৃষ্টজীবের দৃষ্টিগোচর হোক বা না হোক, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুকে সর্বাবস্থায় একই সমান দেখেন, প্রত্যক্ষ করেন। কোনো বস্তু কখনোই তার দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করতে পারে না। তবে তিনি সৃষ্টজীবের চোখের মত চোখ এবং চোখের সকল প্রকার রূপ এবং আকার-আকৃতি ইত্যাদি হতে চির পবিত্র ও মুক্ত। এতদসম্পর্কে আল কোরআন ও সহীহ হাদীসে সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে।
যথা, (ক) ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তার বান্দাগণের খবর রাখেন এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ৩০)। (খ) হযরত আবু হুরায়রা রা. এর বর্ণনায় হাদীসে জিব্রাঈলে উল্লেখ আছে, হযরত জিব্রাঈলে আমীন মানবাকৃতিতে দরবারে নববীতে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে মোহাম্মাদ সা., ইহসান কি? রাসূলুল্লাহ সা. উত্তর দিলেন, তুমি এমন একাগ্রতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখে থাকেন। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ১২)। (ঘ) তিনি সকল রূপ, আকার ও রং এমন অনাদি চোখে দেখে থাকেন যা তার অবিনশ্বর গুণ। তার দর্শন করা ও শ্রবণ করাতে কোনো নতুনত্ব ও কৃত্রিমতা নেই।
সুতরাং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা, দেখেন ও শোনেন। শোনার কোনো বিষয় তা যতই গোপন হোক তার কাছে গোপন নয় এবং দেখার কোনো বস্তু তা যতই সুক্ষ্ন হোক তার দৃষ্টি হতে গোপন নয়। তিনি অন্ধকার রাতে কালো পাথরের ওপর চলমান কালো পিপিলিকার পদচারণার শব্দ পর্যন্ত শোনেন ও পদসঞ্চালন দেখেন। (শরহে ফিকহে আকবর : পৃ. ১৮)।
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করা ও অস্তিত্ব দান করার ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তিনিই সৃষ্টি করেন। তিনিই অস্তিত্বহীনকে অস্তিত্ব দান করেন। সৃষ্টি বিকাশের যাবতীয় কৌশল হেকমত তিনি জানেন। আল কোরআনে এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলীর দলিল ও প্রমাণ বিস্তারিতভাবে পেশ করা হয়েছে।
যথা, (ক) ইরশাদ হয়েছে, কোনো বস্তুকে অস্তিত্ব দানের ইচ্ছা করলে তিনি বলেন ‘কুন’ (হয়ে যাও) সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন : আয়াত ৮২)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে কি? তিনি তোমাদের আসমান ও জমিন হতে রিজিক প্রদান করে থাকেন। (সূরা ফাতির : আয়াত ৩)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকারী অস্তিত্বদানকারী, চিত্র ও আকার অংকনকারী। (সূরা হাশর : আয়াত ২৪)।
অস্তিত্ব দান করা, সৃষ্টি করা, উদ্ভাবন করা, আবিস্কার করা, ইত্যাদি আল্লাহপাকের সিফাত বা গুণ। আকল ও নকল অর্থাৎ জ্ঞান-বিবেক ও কোরআন-হাদীসের বর্ণনা এ কথার পরিপূর্ণ অনুক‚লে যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্রষ্টা, অস্তিত্বদানকারী ও রূপায়ণকারী। এক্ষেত্রে অন্য কারও কোনো দখলদারিত্ব নেই। (শারহুল আকাঈদ : পৃ. ৬৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।