Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মরিচ তুলতে কেজিতে ৫ টাকা

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম


গাছ থেকে এক কেজি মরিচ তুলতে চাষির খরচ হয় পাঁচ টাকা। এমন চুক্তিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নারীরা মাঠে মরিচ সংগ্রহ করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি এমন কাজ করছে শিশুরাও।

শুধু দৌলতপুর নয়, মিরপুর উপজেলার কাতলামারী, বড়বাড়ীয়া, রাজনগর, আশাননগর, আবুরী এলাকাতেও এমন কাজ করে নারী ও শিশুরা।
জানা যায়, পুরুষ শ্রমিকের মুজুরি ৩০০-৩৫০ টাকা। একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে ১৫-২০ কেজি কাঁচা মরিচ তুলতে পারে। সেখানে একজন নারী শ্রমিক মরিচ তুলতে পারেন ২০-২৫ কেজি। ৩০০ টাকা মুজুরি দিয়ে একজন পুরুষ শ্রমিক গড়ে ১৫ কেজি মরিচ তুললে মালিকের খরচ হয় ২০ টাকা। সেখানে নারী-শিশুরা ৫ টাকা কেজিতে মরিচ তুলে দেয়। এজন্য মরিচ তুলতে পুরুষের তুলনায় নারী-শিশুদের চাহিদা বেশি।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবুরী এলাকার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথি আরা খাতুন। সে জানায়, স্কুলের লেখাপড়ার খরচের জন্যই সকালে স্কুলে যায় এবং বিকেলে মরিচ উঠায়। বিকেলে ১০-১২ কেজি মরিচ উঠালে ৫০-৬০ টাকা হয়। স্কুলের খাতা, কলম কেনা লাগে। এছাড়া আমি একা না আমার মতো অনেক শিশুরাই মরিচ উঠায়। শাহারন খাতুন জানান, অভাবের সংসার। কিভাবে চলবো ভেবে কুল পাই না। তাই এই মরিচ তুলে দিই। দিনে ৮০/৯০ টাকা করে হয়। পুরুষের তুলনায় আমরা অনেক বেশি মরিচ তুলতে পারি তবে আমরা তেমন কাজের দাম পায় না।
আরেকজন ছিয়ারন খাতুন জানান, বিকেলে এই মরিচ তুললে কিছু বাড়তি টাকা আসে। সেটা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলের খাতা, কলম কিনে দেয়। এছাড়া সংসারেরও খরচ চালায়। পুরুষ মানুষ সকালে কাজ করে বিকেলে অন্য কাজ করে। আমরা বাড়ির কাজ শেষ করে মাঠে এসে এই মরিচ তুলে দেয়।

মরিচ চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর মরিচ চাষে প্রচুর খরচ হচ্ছে। বৃষ্টি কম থাকায় এবং গরম পড়ায় মরিচে ভালো ফুল আসছে না। তাই জমিতে প্রায়ই সেচ দিতে হচ্ছে। এছাড়া সার, লেবারসহ অনান্য খরচ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুরুষ শ্রমিক পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও খরচ বেশি হয়। এছাড়া নারী শ্রমিকরা ৫ টাকা কেজিতে মরিচ তুলে দেয়। তাই পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো লাভ।

বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে যখন মরিচ ধরা শুরু হয়েছিল তখন ভালো দাম ছিল। তবে এখন মরিচের দাম অনেকটা কম। কেজি প্রতি বাজারে ২৭/২৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
মরিচ চাষি হাসান আলী বলেন, মরিচের দাম ভালো হলে লাভ হয়। এখন যে দাম তাতে মরিচে আমাদের লোকসান হচ্ছে। এখন বাজার দর ২৭/২৮ টাকা, কিছুদিন আগেও যা ছিল ৭০/৮০ টাকা।

মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মরিচে বেশ ভাল লাভ হয়। এই অঞ্চলের মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় চাষিরা মরিচ চাষে আগ্রহ দেখায়। তবে বর্তমানে মরিচের দাম কিছুটা কম। এছাড়া পুরুষের তুলনায় মরিচ নারীদের দিয়ে তোলালে খরচও কম হয়।



 

Show all comments
  • Mehedi Hasan ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:০২ এএম says : 0
    ধন্যবাদ রিপোর্টারকে। ছোটবেলায় সেই মরিচ তোলার কথা মনে পড়ে গেল।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:০৪ এএম says : 0
    লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের বসত মরিচ তুলতাম, মরিচ তোলার টাকা দিয়ে পকেট খরেচ যোগাতাম, খুব ভালো একটা সময় ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল খান ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:০৫ এএম says : 0
    আমার মনে পড়ে ছোট থাকতে আটআনা/এক টাকা কেজি মরিচ তুলতাম। নিজের আয়ের পয়সা দিয়ে খেলাধুলা এটাওটা খাওয়া হতো ভালোই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মরিচ তুলতে কেজিতে ৫ টাকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ