Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শাসন ক্ষমতা আল্লাহর দান

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

যুগে যুগে পৃথিবীতে বহু শাসক এসেছেন। তাদের মধ্যে ন্যায়বিচারক ও সুশাসকরাই ইতিহাসে টিকে আছেন। যারা রাজা বাদশাহ প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী হয়েও চুরি-ডাকাতি ও জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ ছাড়তে পারেননি, ইতিহাস তাদের নাম-নিশানা মুছে দিয়েছে। এটি প্রকৃতির প্রতিশোধ। দুনিয়ার অন্যতম সেরা আদর্শ শাসক ছিলেন হযরত ওমর রা.।

তিনি জীবনভর তাই খেতেন, যা তার ৩২ লক্ষ বর্গমাইল রাষ্ট্রের গরিব নাগরিকরা খেত। জনগণকে যে কাপড় পরতে দিতে পারতেন, ঠিক সেটিই তিনি পরতেন। বলতেন, আমি থাকি রাজধানী মদিনায়, হাজার মাইল দূরে ইরাকের ফোরাত তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মরে যায়, তাহলে এর জন্যও শাসক ওমরকে আল্লাহর নিকট জবাব দিতে হবে। জনগণের বাক স্বাধীনতা ও শাসকের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলবের অধিকার কেমন ছিল তা এ উদাহরণ থেকে দেখে নিন।

একদিন হযরত ওমর রা. জুমার আগে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সাধারণ এক নাগরিক দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আমাদের নেতা রাষ্ট্রনায়ক, আমার প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত আমরা আপনার ভাষণ শুনব না। আপনি বলুন, জনগণকে যে পরিমাণ কাপড় দিয়েছেন, তা দিয়ে আমার ও অন্যান্য মানুষের এই মাপের একটি জামা হয়েছে, আর আপনার গায়ের জামাটি অনেক বড়মাপের। সমান কাপড় দিয়ে এমন হওয়ার কথা নয়। আপনি কি রাষ্ট্রপতি হওয়ায় বেশি কাপড় নিয়েছেন? তখন হযরত ওমরের পুত্র আব্দুল্লাহ বললেন, জনাব, আপনি যদি সম্মত হন, তাহলে এ প্রশ্নের জবাব আব্বাজীর পরিবর্তে আমি দিচ্ছি।

লোকটি বলল, তাই দাও বাবা। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বললেন, জনগণের সাথে এমন কাপড়ের টুকরো আমিও একটি পেয়েছিলাম। বললাম, আব্বা, আপনি আমিরুল মোমিনিন। ইসলাম জগতের রাষ্ট্রপতি। আপনি আমার টুকরোটি নিয়ে আপনার জামাটি একটু বড় করে বানিয়ে ফেলুন। আমি না হয় জামা নাই বানালাম। আব্বা রাজি হওয়ায় আমার এবং আব্বার দু’টুকরো কাপড় দিয়ে তার এ জুব্বাটি হয়েছে। তিনি জনগণের চেয়ে বেশি কাপড় নেননি। এ জবাব শুনে প্রশ্নকর্তা বলল, জবাব পেয়েছি। সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার আপনি ভাষণ দিতে পারেন। লোকটির চোখও তখন ভিজে উঠেছিল। মসজিদে নববীতেও চাপা কান্নার রোল। এই ছিল খোদাভীরু মুসলিম শাসকদের সততা, সুবিচার, সুশাসন ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা।

আর আজ শাসনের নামে মানুষ কী করে। সরকারের গদিতে বসে জনগণের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে। নির্দিষ্ট সুযোগ সুবিধার পর নানা কায়দায় মানুষের টাকা চুরি-ডাকাতি করে। কমিশন খায়। বেশি দাম দেখিয়ে সস্তা জিনিস ক্রয় করে। প্রজেক্টের কোটি কোটি টাকা আগেই মেরে দেয়। খারাপ জিনিস দিয়ে অধিক মূল্য কেটে নেয়। ইচ্ছে করে নষ্ট জিনিস তৈরি করে বারবার টাকা মারে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জুয়া, মদ, নৃত্যগীত, ক্যাসিনো ইত্যাদির ব্যবস্থা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

এমন হারাম টাকা দিয়ে মানুষ কোনো দিন শান্তি পেতে পারে না। হারামে আরাম নেই। দুনিয়াতে তাদের ঘরে, সংসারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, কলিজায় আগুন জ্বলতে থাকে। মানসম্মান নষ্ট হয়। ভয়ভীতিতে জীবন কাটে। সন্তান ও পরিবারের চোখে চোর সাব্যস্ত হয়। আত্মীয়-পরিজন ও সমাজের চোখে অপরাধী ও ডাকাত সাব্যস্ত হয়। অপরধীরা শাসক, নেতা, পাতি নেতা, আমলা, ঠিকাদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাস্তান, সাংবাদিক ইত্যাদি যাই হোক এরা পরস্পর পরস্পরকে চেনে। গোপনে কে কতটুকু দায়ী তা জানে। তদন্তে নিজেরা নিজেদের নাম চেপে যায় বটে, তবে মনে মনে সবাই সবাইকে চেনে। এতে মানসিকভাবে বোঝে যে, আমাদের বড়গলায় কথা বলার সাহস নেই। কারণ আমরা সবাই ভদ্রবেশী চোর-ডাকাত। দুনিয়াতে সমাজে এটিই তাদের একধরনের শাস্তি।

পরকালে আগুন ছাড়া তাদের ভাগ্যে আর কিছুই জুটবে না। জাহান্নামের আগুন মানুষের চেনা আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি উত্তপ্ত। হারাম সম্পদ কল্পনাতীত ভয়ঙ্কর। সাপ, বিচ্ছু ও হিংস্র রূপ নিয়ে অনন্তকাল পাপীদের শাস্তি দিতে থাকবে। আল্লাহ যেন ক্ষমতার নিয়ামতকে নিজেদের ভুলের কারণে গজবে পরিণত না করেন। ক্ষমতার আসন পেয়ে প্রাপ্ত সুখ সুবিধার ওপর মানুষ যেন তৃপ্ত হতে পারে। তারা যেন এখানে বসেও চোর-ডাকাত না থেকে যায়।



 

Show all comments
  • MD Akash ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধু তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে, এটা শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।” (সূরা ইউসূফ, ৪০)
    Total Reply(0) Reply
  • আখতারুজ্জামান খালেদ ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে, এক সৃষ্টি পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে। সে আল্লাই তোমাদের রব, সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তবুও তোমাদের কোথায় ফিরানো হচ্ছে?” (সূরা যুমার- ৬)
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ্দাম ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    আল্লাহই আমাদের রব ও পালনকর্তা- বান্দাকে সুনিশ্চিতভাবে জানতে ও স্বীকার করতে হবে যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে সকল কিছুর মালিক ও প্রতিপালক, তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সমগ্র বিশ্বকে এককভাবে পরিচালনা করেন। তিনি আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করছেন, সর্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা বলেন, “তারা কি দেখে না যে, আমরা এই জমিনকে চর্তুদিক দেখে সংকুচিত করে আনছি? আর আল্লাহই আদেশ করেন, তাঁর আদেশ বাতিল করা কেউ নেই এবং তিনি হিসেব গ্রহণে তৎপর।” (সূরা রা’দ- ৪১)
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে তার সঙ্গে শিরক করা থেকে মুক্ত থেকে ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। বান্দার সঙ্গে করা আল্লাহর অঙ্গীকার লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • তফসির আলম ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:২২ এএম says : 0
    এই লেখাটির জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন