Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদক কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা আতঙ্ক

ক্যাসিনোর নিয়মিত খদ্দের চার কর্মকর্তা!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নিয়মিত ক্যাসিনোতে যেতেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারাও। তারাও লাখ লাখ টাকা হেরেছেন ক্যাসিনো-জুয়ায়। খালেদ মাহমুদ ভুইয়া এবং শফিকুল আলম ফিরোজের জবানীতে বেরিয়ে আসে দুদকের চার কর্মকর্তার নাম। এর মধ্যে অবসরে যাওয়া সাবেক একজন পরিচালক, বর্তমানে দায়িত্বরত দু’জন উপ-পরিচালক এবং একজন সহকারি পরিচালক রয়েছেন। তবে র‌্যাবের অভিযানের পর ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম প্রকাশ পেলেও দুদক কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে এ তথ্য।

সূত্রমতে, ক্যাসিনো-কান্ডে কর্মকর্তাদের নাম আলোচনায় আসায় চাপা আতংক বিরাজ করছে খোদ দুদক কর্মকর্তাদের মাঝেই। কারণ, দুর্নীতি বিরোধী রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছেন বেশ কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা। তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে তারাও গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। প্রতিষ্ঠানের আইনগত অসীম ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। অন্যের অবৈধ সম্পদ খুঁজতে গিয়ে নিজেদের সম্পদ বাড়িয়েছেন। সম্পদের নোটিস, জিজ্ঞাসাবাদ, মিডিয়ায় প্রচার, মামলা দায়ের, গ্রেফতার এবং কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নেন। দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তের আড়ালে নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অর্থের বিনিময়ে দায়মুক্তির সুপারিশ করেন। চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে দায়ের করেন মামলা। তাদের দুর্নীতির তথ্য দুদকের শীর্ষ ব্যক্তিদের অজানা নয়। সেসব ধরে ধরে কর্তাব্যক্তিরা মাঝেমধ্যেই হুংকার ছাড়েন। পরক্ষণেই অদৃশ্যকারণে চুপসে যান। অদৃশ্য ইশারায় থেমে যায় কমিশনের নর্দন-কুর্দন। কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না। কমিশনের বজ্র আঁটুনি-ফসকা গেঁড়োর এই সুযোগটি শতভাগ কাজে লাগিয়ে ওই কর্মকর্তারা ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’দের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। সেই টাকা তারা ক্যাসিনোতো ঢালতেন। নারী-মদ নিয়ে ফূর্তি করতেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)র নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে গ্রেফতারকৃত ক্যাসিনো প্লেয়ারদের জবানিতে বেরিয়ে আসে এসব দুদক কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়।

সূত্রমতে, চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান র‌্যাবের নেতৃত্বে হওয়ার কারণে দুর্নীতি দমন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে হতাশা ও আতংক। হতাশার কারণ, অভিযানটি চলছেই দুদককে বাদ দিয়ে। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে অভিযানের পরিকল্পনা হয়। সেই পরিকল্পনায় দুদক ছিলো না। প্রতিষ্ঠানটির অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি দুদকের প্রতি সরকারি নীতি নির্ধারকদের উপহাস। দুদকের প্রতি আস্থাহীনতা এবং ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই দুর্নীতি দমনে র‌্যাবের প্রতি নির্ভরতা। ওয়ান-ইলেভেনের পর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানটি পরিচালিত হয় দুদককে দিয়ে। ওই সময়ই দুদক তার কর্মক্ষমতার জানান দেয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি উল্টো। দুদককে পাশ কাটিয়ে চলছে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। এ অভিযান যেন দুদকের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললো। এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নেতিবাচক বার্তা। ওই অভিজ্ঞ কর্মকর্তার মতে, এই অভিযানে দুদক-র‌্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে একটি ‘যৌথ বাহিনী’ গঠন হতে পারতো। অত্যন্ত সচেতনভাবেই সেটি করা হয়নি। কারণ, চলমান অভিযানটি দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও হতে পারে। তাদের ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার এবং অনুসন্ধান-তদন্তের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি, রুই-কাতলাদের বাদ দিয়ে চুনোপুটিদের ধরা এবং সর্বোপরি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সারা বছর পড়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি কার্যত: শিষ্টের দমন-দুষ্টের পালনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অভিযান পরিচালকানাকারীরা দুদকের এসব কীর্তি-কান্ডের বিষয়েও ওয়াকিবহাল। এ কারণে চলমান অভিযানের গতিপথ দুদকের দিকেও আসতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, দুদকও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। যারাই ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, পত্রপত্রিকায় যাদের নাম এসেছে-তাদের সম্পদ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যেই একটি টিম গঠন করা হয়েছে। দুদকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে- সেটি দেখভালের জন্য দুদকেরই একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স রয়েছে।



 

Show all comments
  • Sahidul Sahidul Islam ২ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
    ওকে আইনের আওতায় আনা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • পাবেল ২ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
    অপরাধী যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির আহমেদ বাবু ২ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
    সরষের মধ্যেই ভুত !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Nizam Uddin ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৭ এএম says : 0
    jara durniti bondhe kaj korar kotha tara agulo korle durniti bondho hobe kivabe
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Amir ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৮ এএম says : 0
    দুদককে বাদ দিয়েই অবিয়ান চালানো হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Hasan ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম says : 0
    era e desher 12ta bajasse
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল ২ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৪৭ পিএম says : 0
    আমার মনে হয় দুদকের অফিসারদের সম্পদের হিসাব নেওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ