গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
অনলাইনে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা সেলিম প্রধানের বাসা থেকে নগদ ২১ লাখ টাকা জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় বিদেশি মদ, মুদ্রা এবং অত্যাধুনিক ক্যাসিনো সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় সেলিমের সহযোগী আক্তারুজ্জামানকে। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাসেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে সেলিমের সহযোগী আক্তারুজ্জামানের দেয়া তথ্যরে ভিত্তিতে বনানীর ২ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর ভবন থেকে ২১ লাখ টাকা জব্দ করে র্যাব। এর আগে সোমবার রাতে সেলিমের গুলশানের বাসা থেকে আক্তারুজ্জামানকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে সেলিম প্রধানের গুলশানের কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও দেশি-বিদেশি অর্থ উদ্ধার করা হয়। রাতেই তার গুলশান-২-এর ৯৯ নম্বর সড়কে ১১/এ বাড়িতেও অভিযান শুরু করে র্যাব সদস্যরা।
সোমবার রাতে গুলশানের বাসায় অভিযানের পর মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর ২ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাসায় র্যাবের অভিযান শুরু হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ান বিন কাসেম জানান, আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকের র্যাব-১ এর বেশ কয়েকটি গাড়ি বনানীতে সেলিমের বাসায় অভিযান চালাতে রওনা দেয়। এ ছাড়া রাজধানীর গুলশান-২ এলাকায় সেলিম প্রধানের অফিস কাম বাসায় এখনও অভিযান চালানো হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে ক্যাসিনো সেলিমকে নামিয়ে আনে র্যাব-১ এর একটি দল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে নিয়ে গুলশান-২ এ তার বাসা কাম অফিস ‘মমতাজ ভিশনে’ অভিযানে যায় র্যাব। প্রথমে সেলিমকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থলে যায় র্যা বের তিনটি গাড়ি। পরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০টিতে। টানা ১৬ ঘণ্টা সেখানে অভিযান চলে। অভিযানের সময় সেলিম প্রধান ওই বাসার ভেতরে র্যাবের সঙ্গে ছিলেন।
সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।
সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি। এ ছাড়া এর আগে গ্রেফতার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও।
সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার যুগান্তরকে বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোর বাংলাদেশ প্রধান সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেন। পরে এই অর্থ তিনি বিদেশে পাচার করতেন। এসব বিষয়ে এখন তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সেলিমের কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পি২৪ গেমিং শুরুতে বিনোদনমূলক সফটওয়্যার তৈরি ও প্রকাশ করত। এখন তারা এশিয়ায় দ্রুত বড় হতে থাকা ক্যাসিনো কারবারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এশিয়ার লাইভ ক্যাসিনো মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটি যেন এক নম্বরে যেতে পারে, সেই চেষ্টা আছে তাদের। ২০১৬ সালে তারা শুধু কম্পিউটার গেমস বাজারে আনত। পরে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়ে। পি২৪-এর সঙ্গে বাংলাদেশে ১৫০টি অপারেটর এবং ক্যাসিনো যুক্ত আছে। অনলাইনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের। জুয়াড়িদের মুঠোফোনে লাইভ ক্যাসিনোতে যুক্ত করে দেয়ার সুবিধা তারা এনেছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।