পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোয়াংহোকে এক সময় বলা হতো চীনের দুঃখ। এখন সেই নদী হয়ে গেছে আশীর্বাদ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো হওয়ার কথা আশীর্বাদ। কিন্তু পর্যাপ্ত খনন এবং পরিকল্পিতভাবে নাব্যতা ধরে রাখতে না পারায় নদীগুলো হয়ে গেছে কোটি মানুষের দুঃখ। হঠাৎ করে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রক্ষপুত্র, তিস্তা নদী ১১টি জেলায় ভাঙছে। নদীর প্রতিদিন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে- ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ। ইনকিলাব প্রতিনিধিরা জানান, কিছু কিছু জেলায় হঠাৎ নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দেশের বড় বড় নদীগুলোর ভাঙনের তীব্রতা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের লাখো মানুষ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নদী ভাঙনে প্রতি বছর গড়ে দেড় লক্ষাধিক মানুষ গৃহহারা হচ্ছে এবং ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী ভাঙনে দেশের ভেতরে গ্রাম, মহল্লা, ইউনিয়ন এমনকি অনেক উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করার মাদারীপুর জেলায় চলছে তীব্র নদী ভাঙন। এই দুই নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর ছিলারচর শিরখাড়া ইউনিয়নের ঘনসী। পদ্মা নদী বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলায় প্রতিবছরই ভাঙন নতুন করে দেখা দিয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামের উলিপুর, নিলফামারী, গাইবান্ধার সন্দুরগঞ্জ, মাদারীপুরে শিবচর, রাজবাড়ীর, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিায়,পাবনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিসি কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ ও ভাগ্যকুল পয়েন্টে এবং নদী সংলগ্ন যমুনার আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে আগামী মাসে প্রথম সপ্তাহে পদ্মা নদী সংলগ্ন দেশের মধ্যাঞ্চলের মানিগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, নদীরপাড়ের মানুষ আমি। নদী ভাঙনে কবলিত মানুষগুলোর সঙ্গে আমি থাকি। সব চেয়ে কষ্ট আমার বেশি। তার পর ও বলব আমার শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভাঙন ঠেকাতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঠিক সেইভাবে সারাদেশে করা হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, চলতি মৌসুমে মাদারীপুরে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করার মাদারীপুর জেলায় চলছে তীব্র নদী ভাঙন। এই দুই নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর ছিলারচর শিরখাড়া ইউনিয়নের ঘনসী এবং মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। আতঙ্কে রয়েছে নিকটবর্তী আরও কয়েকশ’ পরিবার। কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর ভাঙন আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আবারও পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় দফা ভাঙনে মাদারীপুরের বিশেষ করে শিবচরের চরাঞ্চলের হাসপাতালসহ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচটি স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাসপাতালসহ বহু স্থাপনা ও ফসলি জমি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। চলতি বছরে প্রথম দফা আগস্টে শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও বন্দরখোলা এ ৩টি ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দেয়। সে দফায় একটি মাদরাসা, পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, ব্রিজ, কালভার্ট, ফসলি জমি পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়। ভাঙনের ভয়াবহতা পরিদর্শনে আসেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : উলিপুরে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৭ শতাধিক পরিবার ৪শ’ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ৩টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি মসজিদ, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র। ভুক্তভোগীরা কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তারা।
জানা গেছে, গত ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ৭ শতাধিক বাড়ী-ঘরসহ প্রায় কয়েকশ একর আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন পাশের এলাকাগুলোতে। এলাকাবাসীর আশংকা নাগড়াকুড়া টি-বাঁধ, চর বজরা গ্রোয়েন ও হাতিয়া রক্ষার ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধ। গত রোববার দুপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াডারা, কামারটারী, তালের ভিটা, হাতিয়া ভবেশ, গ্রামসহ ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ তাদের বাড়ী ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ১ মাসের ব্যবধানে তিস্তার ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের চর কর্পূরা, রামনিয়াশা গ্রামের শতাধিক বাড়ী ঘর ও আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। থেতরাই ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, ভরতপাড়া, দালালপাড়া, জুয়ান সতরা, চর গোড়াইপিয়ার, রামনিয়াসা, দড়ি-কিশোরপুর, পানিয়ালের ঘাট, বামনপাড়া গ্রামের প্রায় দুইশতাধিক বাড়ীঘর ও আবাদী জমিসহ শতাধিক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া টি-বাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙনরোধে থেতরাই, দলদলিয়া ও উলিপুর বাঁচাও গণকমিটির ব্যানারে অনেকদিন যাবৎ মানববন্ধন স্মারকলিপি প্রদানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার আলোচনা এবং কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলীকে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি করেও এখন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ভাঙন রোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটের পরে তাদের আর কোন ভূমিকাই দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে আমাদের কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সাংসদের ফেসবুক ওয়ালে উলিপুর নদী ভাঙন রোধে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্প অনুমোদনের খবর প্রকাশ পাওয়ায় উলিপুরবাসী বিভিন্নভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজ নিজ ওয়ালে পোষ্ট দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন। এর ১ বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই নদী ভাঙন এলাকার অসহায় পরিবারগুলো গভীরভাবে হতাশা প্রকাশ করেছে।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী সরকার, গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা, বজরা ইউপি চেয়াম্যান রেজাউল করিম বাবুল ও হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বি.এম আবুল হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এখন সেটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর নাগড়াকুড়া টি-বাঁধ ও চর বজরা গ্রোয়েন, হুমকির মুখে রয়েছে। এভাবে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে মূল বাঁধসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তারা অভিযোগ করে আরও বলেন- এ ভাঙনের ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দফায় দফায় নদী ভাঙনের ব্যাপারে অবগত করালেও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষীপুরে হঠাৎ মেঘনার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরের বাসিন্দারা। গত পনেরো দিনের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ সময়ে বিলীন হয়েছে শত বছরের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের দাবি, গত ২০ বছরে এমন তীব্র ভাঙনে পড়েননি তারা। এতে প্রতিদন উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটছে নদী তীরের মানুষদের।
গত এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে ভাঙন চলছে তা আগে কখনো দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ। শুধু বৃহস্পতিবারই লুধুয়া এলাকায় শত বছরের একটি মসজিদ, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন কমলনগরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ভাঙন রক্ষায় নামেমাত্র ব্যাগ স্থাপন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় ব্যাগ ডাম্পিং করেও কোনো লাভ হয়নি। নিন্মমানের জিও ব্যাগ ও বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারের কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরকারের কোটি কোটি টাকা বেহাত ও অপচয় হয়েছে। অপরদিকে মেঘনার অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কমলনগরে বিশেষ নামাজ আদায় ও দোয়া করা হয়েছে। অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে দুই রাকাত বিশেষ নামাজ আদায় শেষে মাওলানা মো. ইসমাইল হোসেন বিশেষ দোয়া করেন। এ সময় নদীভাঙনে সর্বহারা মানুষেরা আল্লাহর দরবারে আহাজারি করে এ থেকে মুক্তি কামনা করেন।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, যে কোনো মুহূর্তে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এখন বিপদসীমার মাত্র ২৩ সেন্টিমিটার নিচ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রোববার পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল হক এমন তথ্যই জানিয়েছেন। ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে বিহার ও উত্তর প্রদেশে। ফারাক্কা ব্যারেজের গেট ভারত আসলে জুন মাস থেকেই খুলে রাখে বলে জানা গেছে। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে হু হু করে গঙ্গার পানি বাংলাদেশের পদ্মা নদী প্রবেশ করছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রধান শাখা নদী গড়াই, আত্রাইয়ের পানি বাড়ছে। যার ফলে জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান নদ-নদী আত্রাই, গুমনী, বড়াল, হুরাসাগর, চিকানই ও মরা পদ্মা (চিত্রা নদী) পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদী বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলায় প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দেয়। গত বছরের তীব্র ভাঙনের পরে নড়িয়া রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে জেলাবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল হয়তো এবার আর আল্লাহর রহমতে পদ্মার ভাঙন হবে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটারসহ প্রায় ২৮০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় হঠাৎ করে জেলার নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের উত্তর কেদারপুর গ্রামের তারা মিয়া বেপারীর বাড়ীর বেশ কিছু জায়গাসহ একটি দুইতলা ভবনের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পরপরই মঙ্গল বেপারীর একটি ঘরসহ বাড়ীর কিছু অংশ নদীতে ভেঙে নিয়ে যায়।
উত্তর কেদারপুর এলাকার দারুস সালাম জামে মসজিদ, মক্তব ঘর, দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমামের ঘর, তারা মিয়া বেপারীর দুইতলা একটি বিল্ডিং ঘর, বাদশা মুন্সীর দুইটি ঘর, মঞ্জু বেপারীর একটি ঘর, মঙ্গল বেপারী একটি ঘর, বাদশা বেপারীর একটি ঘর, রতন বেপারীর চায়ের দোকান, মতি বেপারীর ঘরসহ একটি ইটের রাস্তা হঠাৎ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শতাধিক বাড়ীঘর। ভাঙনের সংবাদ পেয়ে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক পানি সম্পদক উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে এসে দ্রুত বাঁধ মেরামতের নির্দেশ দেন।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা ও মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েকদিনে পদ্মা-যমুনা নদীতে আবারো অত্যাধিক পানি বেড়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে সামুদ্রিক নিম্ন চাপ হিক্কার প্রভাবে বুধবার সারাদিন নদী ছিল আরো উত্তাল। সেই সাথে দীর্ঘ সময় ধরে টানা বৃষ্টি। এতে করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে স্বাভাবিক যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যহত হয়। এছাড়া রয়েছে ফেরি সংকট। ফলে উভয় ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় আটকে পড়েছে শতশত যানবাহন।
বিআইডবিøউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিস ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিনে আরেক দফা পানি বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচন্ড স্রোতের বিপরীতে রুটের ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। এর সাথে বুধবার সারাদিন নিম্ন চাপের কারণে নদী ছিল আরো উত্তাল। সারাদিন হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ফেরিঘাটগুলোর পন্টুনে পিচ্ছিল পথে যানবাহন উঠা নামায় চরমভাবে ব্যহত হয়।
এদিকে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে এ রুটের ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটি ফেরির নদী পার হতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগত। কিন্তু বর্তমানে এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগছে। পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে ফেরি সংকটের। বুধবার বিকেল পর্যন্ত রুটে ৮টি রোরো (বড়) ও ৬টি ছোট ফেরি মিলে মোট ১৪টি চলছিল। এ রুটের আমানত শাহ নামের রোরো ফেরিটি বেশ কিছুদিন নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে মেরামতে আছে। শাপলা-শালুক নামের অপর একটি ফেরিকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটে পরীক্ষামূলকভাবে চলার জন্য পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যামালতি ফেরিটি যান্ত্রিক দুর্বলতার কারণে তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে পারছে না।
বুধবার বিকেলে সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া কেকেএস সেফ হোম পর্যন্ত অন্তত ৩ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়েছে। ঘাট এলাকার আড়াই কিলোমিটার ফোর লেন সড়কের বাম পাশে অন্তত ৩ শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়।
এছাড়াও দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে আটকে রাখা হয়েছে অন্তত ৩ শত পণ্যবাহি ট্রাক। এসময় একাধিক বাস চালক অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকা থেকে তারা অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তবে এ অবস্থার মধ্যে ঘাট এলাকায় দালালদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, রুটে ১৪টি ফেরি চলছে। তীব্র স্রোত ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে ফেরিগুলোর ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মানুষের দূর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহি যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র স্থানীয় ডকইয়ার্ড ভাসমান কারখানার সহকারী প্রকৌশলী সুবল বাবু জানান, নদীতে অত্যাধিক স্্েরাতের কারণে ফেরি পারা-পারে দ্বিগুণ সময় লাগছে। ফেরিগুলো ইঞ্জিনের পুরো শক্তি ব্যবহার করে স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে প্রতিদিনই দু’একটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে চলাচলরত ছোট বড় মোট ১৬টি ফেরি মধ্যে ১৩টি চলাচল করছে। রো-রো ফেরি খানজাহান আলী, ইউটিলিটি ফেরি সন্ধ্যা মালতি এবং চন্দ্র মল্লিকা স্থানীয় ডকইয়র্ডে মেরামতে রয়েছে। এমতবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যায় দুই ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। চরাঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়-ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্যা থাকে। সেই বন্যা মোকাবেলা ও ফসলের আবাদ নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি থাকে। তবে এবার এই দুই মাসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দেয়নি। তবে হঠাৎ করে এই আশ্বিনে বন্যা দেখা দিয়েছে।
কয়েক দিনের ব্যবধানে হুহু করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় পানি উপচে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ওই দুই ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, পদ্মার বিপৎসীমা নির্ধারণ আছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গত শুক্রবার ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ছে। এ সময়ে এর আগে এভাবে পানি বাড়েনি। আরও দু’এক দিন পানি বাড়ার পর কমতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।